সড়কে রাখা গাড়িতে চাঁদাবাজি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ১১: ২৭
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফ লাইন খ্যাত পোর্ট কানেকটিং সড়কজুড়ে পণ্যবাহী গাড়ি রাখা (পার্কিং) বাবদ দৈনিক লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। টার্মিনাল না থাকার সুযোগে একটি চক্র এই কাজ করছে।

সড়কটিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টা গাড়ি পার্কিং করে রাখা বাবদ একজন পরিবহন মালিককে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। সেখানে দৈনিক অন্তত ১ হাজার গাড়ি সড়কের উভয় পাশে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। পুলিশকে ম্যানেজ করে কাজটি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি এখন যেন একটা মিনি টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। সংকুচিত হয়ে সড়কটিতে নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

পাঁচ দশমিক সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের পোর্ট কানেকটিং সড়কটির হালিশহর বড়পোল থেকে নিমতলা পর্যন্ত পুরো সড়কে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টার্মিনাল না থাকায় বন্দরে পণ্য লোডিং আনলোডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন মূলত সড়কটিতে পার্কিং করে থাকছে। আর এ সুযোগে একটা সিন্ডিকেট সড়ক ভাড়া দিয়ে চাঁদাবাজিতে মেতেছে।

সড়কে প্রতি ১২ ঘণ্টা (এক শিফট) গাড়ি রাখা বাবদ পরিবহন মালিককে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। দুই শিফটে সেখানে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দর কর্মচারী, শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পৃথকভাবে এসব সড়ক নিয়ন্ত্রণ করছে।

বন্দর এলাকা ও স্থানীয় হওয়ায় তাঁরা সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। একেকজনের দখলে একেকটি এলাকা রয়েছে। দখলদারিদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, সোহেল, আবু নাসের জুয়েল, রুবেল, রাকিবুল আলম রাজু, আরিফ, সুমন ওরফে হিজরা সুমন, হানিফ ও খোকন। অভিযুক্তরা পৃথকভাবে যে যার মতো করে বন্দর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব চাঁদা আদায় করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মচারী হিসেবে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন সরকারি কর্মচারী। এখানে কর্মরত অবস্থায় এ ধরণের চাঁদাবাজির কাজে জড়ানো কি সম্ভব?’ এ সময় তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুলার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ শুক্রবার বলেন, ‘করোনো পরিস্থিতির কারণে আমাদের সংগঠন থেকে বর্তমানে পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না। আগে রসিদের মাধ্যমে গাড়িপ্রতি একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হতো। বর্তমানে সড়কের ওপর যেসব গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে, শুনেছি একশ্রেণির লোক এসব টাকা আদায় করছেন। বিনা রসিদে কে বা কারা এসব টাকা আদায় করছে। এ ঘটনা ইতিমধ্যে পুলিশকে জানানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর ট্রাফিক) শাকিলা সুলতানা বলেন, অবৈধভাবে পার্কিং করার অভিযোগে প্রতিদিনই এখানে এক-দুটি করে মামলা কিংবা গাড়ি আটক করা হচ্ছে। তবে সব ধরে তো মামলা দেওয়া সম্ভব না। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘কিন্তু যেসব গাড়ি বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কারণ ওই গাড়িগুলো রাখার জায়গা নেই। এ জন্য রাস্তার এক পাশে এগুলো লাইন করে রাখা হচ্ছে। তবে সড়কে গাড়ি রাখা বাবদ চাঁদাবাজির বিষয়টা আমিও শুনেছি। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে তদন্ত করে সিএমপির অপরাধ বিভাগের একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত