অনমনীয় আলী

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৪৪

এ কথা সবাই জানেন, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সীমান্ত লঙ্ঘন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ঢুকে পড়েছিল ভিয়েতনামে। কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য তারা ‘লড়াই’ করছিল।

এ কথাও অনেকে জানেন, সেই যুদ্ধে প্রায় ৫ লাখ সৈন্য অংশ নিয়েছিল, এদের মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার সৈন্য আর ফিরে আসতে পারেনি দেশে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ মার্কিন দেশের জন্য গোদের ওপর বিষফোড়া হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সাধারণ নাগরিকদের ডাকা হচ্ছিল সেনাবাহিনীতে। সেই ডাকে কেউ সাড়া না দিলে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল।

মোহাম্মদ আলী তখন নামকরা মুষ্টিযোদ্ধা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ১৯৬৭ সালের ২৮ এপ্রিল মোহাম্মদ আলীকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ডাকা হলো। আলী বললেন, ‘আমি ভিয়েতনামিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাব না।’

তাতে খুব রেগে গেল মার্কিন রাষ্ট্রের কর্তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের ক্রীড়া কমিশনগুলো মোহাম্মদ আলীর মুষ্টিযুদ্ধ করার সনদ বাতিল করে দিল। তাঁর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমাটিও হরণ করে নিল।

সে বছর জুন মাসে আদালতের সামনে হাজির হলেন আলী। বললেন, ‘ভিয়েতনামিদের সঙ্গে আমার কোনো ঝগড়া নেই। ভিয়েতনামিদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভিয়েতনামিরা আমার বিরুদ্ধে খারাপ কিছু করেনি। ভিয়েতনামিরা আমাকে নিগ্রো বলে গালাগাল করেনি। যদি আমাকে এ জন্য জেলে যেতে হয়, আমি তাতে রাজি আছি। তারপরও আমি ১০ হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে গিয়ে মানুষ হত্যা করতে পারব না।’

উচ্চ আদালত আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আলীর পক্ষের আইনজীবীরা লড়াই করে যান। আলীকে ১০ দিন জেলে থাকতে হয়। আমেরিকার পত্রপত্রিকা আলীর সমালোচনায় মুখর হয়। তাঁর নামের সঙ্গে দেশদ্রোহী তকমা লাগানো হয়।

অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও এবং নানাভাবে সম্মানহানি হলেও আলী একবারের জন্যও ভিয়েতনাম বিষয়ে তাঁর মত পাল্টাননি। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বক্তৃতা করার জন্য তাঁকে সম্মানীও দিয়েছিল।

সূত্র: স্পোর্টসএক্সপ্রেস ডট রু 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত