বাড়ছে জ্বর, ঠান্ডা ও ডায়রিয়া

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২২, ০৪: ৪৮
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১১: ৪১

জামালপুরে বাড়ছে জ্বর, ঠান্ডাজনিত রোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। রোগীর চাপ বাড়ায় জামালপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। প্রতিদিনই জ্বর, ঠান্ডা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন অনেক রোগী। হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, শিশু রোগীর চাপ বেশি। ৪০ জনের সিটে ভর্তি আছে ১০০টি শিশু।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের রুমের সামনে শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবকেরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন। এর মধ্যে দুই থেকে তিন শতাধিক শিশু রয়েছে। গরমের কারণে শিশুরা জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে ও বারান্দায় সবখানেই রোগী। যেন পা ফেলার জায়গা নেই। ডায়রিয়াসহ জটিল রোগে হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ডগুলোয়ও রোগী বেড়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতিটি বিভাগের চিকিৎসকেরা কাজ করছেন। হাসপাতালে ৫২৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। প্রচণ্ড গরমে জ্বর, ঠান্ডা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত এসব রোগী। জ্বর ও ঠান্ডা নিয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১৪৬টি শিশু। বহির্বিভাগে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। জায়গার সংকট থাকায় বারান্দাসহ বাথরুমের সামনে রোগী রাখা হচ্ছে।

চন্দ্রা গ্রামের রহিম তাঁর ৮ মাসের শিশু নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে শিশুটির প্রচণ্ড জ্বর। হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। দেখি, ডাক্তার কী বলে।’

মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া থেকে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে এসেছেন মা আকলিমা বেগম। তিন দিন ধরে শিশুটির জ্বর। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

সদর উপজেলার রায়েরচরের শাপলা বেগমের দুই বছরের সন্তান জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। শাপলা বেগম বলেন, রাতে হঠাৎ করে তাঁর শিশুর শরীরে জ্বর আসে। তিন দিন পর হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকেরা ঠিকমতো চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে সিট না থাকায় বাথরুমের কাছে থাকতে হচ্ছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ডাংধরা থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছেন আনোয়ারা বেগম। চার দিন ধরে ভর্তি আছেন। বারান্দার মেঝেতে বিছানা করে অনেক কষ্টে থাকছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কিছু ওষুধ দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা দিনে একবার এসে শিশুকে দেখে যান।

হাসপাতালের নার্সরা সব সময় সেবা দিচ্ছেন। মেলান্দহ উপজেলার বালুরচরের রাশেদা বেগম বলেন, তাঁর নাতনির জ্বর। হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই। তাই গেটের সামনে পড়ে আছেন। আরও দুই দিন থাকবে হবে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় তিনি খুশি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হুমায়ুন বলেন, চার দিন ধরে তাঁর ছেলের জ্বর ও পেটব্যথা। তিন দিন আগে তাঁর সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শিশু ওয়ার্ডে কোনো সিট খালি নেই। রোগীর ভিড়ে ওয়ার্ডে পা ফেলার মতো জায়গা নেই। ওয়ার্ডের ভেতরে রোগী ও স্বজনদের ঠাসাঠাসিতে ভ্যাপসা গরমে অস্থির অবস্থা।

শিশু চিকিৎসক ডা. তৌহিদা আক্তার ঝিনুক বলেন, প্রতিদিনই ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ শিশু জ্বর, ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। গত সোমবার তিনি দেখেছেন ৩০০ শিশু রোগী। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অনেক বেশি। হাসপাতালে শয্যার সংকট। ৪০ জনের সিটে ১০০ জন ভর্তি আছে। নবজাতক ওয়ার্ডে ২৪টি সিটে ৪৬ জন ভর্তি রাখা হয়েছে। আসনের চেয়ে রোগী বেশি থাকায় রোগীকে সেবা দিতে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত