মোনায়েম সরকার
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, আবার নিচ্ছেও। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত মানছেন না, তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বহিষ্কারেও অনেককে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করলে দল দুর্বল হবে না, এতে বরং শক্তি সংহত হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিতে চলছে লেজেগোবরে অবস্থা। দায়িত্বশীল নেতাদের অকার্যকর ভূমিকা, কর্মীদের পাশে না দাঁড়ানো, সমন্বয়হীনতা, সর্বোপরি লন্ডন থেকে ‘ডিসিশন’ আসার কারণে বিএনপি রয়েছে তালগোল পাকানো অবস্থায়। দলীয় সিদ্ধান্ত ভেঙে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৫ জনকে বিএনপি বহিষ্কার করেছে। বয়কট-বর্জনের রাজনীতি করে দলটি জনগণ ও কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও নেতৃত্ব মনে করেছেন, বিএনপি সঠিক ধারায় আছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো বলে!
বিএনপির দিকে তাকালে মনে হবে, আওয়ামী লীগ বুঝি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, আনন্দে আছে। কিন্তু মাঠের খবর তা বলছে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছিল। তাতে ৩০০ আসনের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ৬২ জন বিজয়ী হন।
নির্বাচনের পর দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁরা সংসদে আলাদা গ্রুপ করে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য স্বতন্ত্র সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাড়ি একটা, ঘর হয়েছে দুটো। দুই হাতই আমার।
দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন অবস্থা অভিনব। এক বাড়িতে বহু ঘর থাকতে পারে, তবে একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি বা ভাগাভাগি খুব ভালো লক্ষণ নয়।
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-বিরোধ-পাল্টাপাল্টি দৃষ্টিকটুভাবেই সামনে আসছে।
কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে জেলায়-তৃণমূলে আওয়ামী লীগে গ্রুপ বিভক্তি অতীত থেকেই চলে আসছে। সব সময়ই তা কমবেশি আছে এবং এতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে সম্মেলন কিংবা নির্বাচন এলে বিভক্তি-পাল্টাপাল্টি কোথাও কোথাও তীব্র ও প্রকাশ্য রূপ নেয়। আবার এটাও বলা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিরোধ যতটা বাড়ে, বিরোধী দলে থাকলে ততটা দেখা যায় না।
উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগে গ্রুপ দ্বন্দ্ব-পাল্টাপাল্টি এমন চরমে উঠেছে, যা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটিকেও স্পর্শ করেছে। গ্রুপ দ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বিবেচনায় নিয়েই হোক কিংবা বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যরা ভোট বয়কট করবে বলেই হোক, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পরামর্শও দলের পক্ষ থেকে দলীয় প্রধান নিজেই দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছেন। এলাকায় এলাকায় আর্থিক সিন্ডিকেটের মতোই আত্মীয়স্বজন নিয়ে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবার আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। নাটোরের সিংড়ায় অপহরণ-মারধরের ঘটনা ঘটে। অনভিপ্রেত ঘটনার পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পলক দুঃখ প্রকাশ করেন।
কিন্তু দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করার ঘটনা কয়েক জায়গায় ঘটছে। ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আগে থেকে প্রচার করা হলেও ওই সভায় মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কোনো আলোচনা না তোলায় দলের অন্য নেতারাও বৈঠকে মুখ খোলেননি। তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আত্মীয়স্বজনের প্রার্থী হওয়ার জন্য শাস্তির বিধান কি আপাতত স্থগিত থাকছে?
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘স্বজন রাজনীতি করলে ভোটে কেন নয়?’ তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন এবং কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে ভিন্নমত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ‘আমি নির্বাচন করছি না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ছেলে নির্বাচন থেকে সরবে কি না, সেটা তার সিদ্ধান্ত।’ তিনি ৩০ এপ্রিল সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট হচ্ছে কি না’, ‘নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না’—এসব নিয়েও কথা বলার কথা ছিল তাঁর।
ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেবেন বলে দলের কোনো কোনো নেতা আভাস দিলেও সেই শক্ত অবস্থান যে দেখা গেল না, তাতে কী প্রমাণিত হচ্ছে? শাজাহান খানেরা এখন আওয়ামী লীগে শক্তিশালী?
আত্মীয়স্বজনকে দলে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগে নতুন নয়। দলীয় মন্ত্রী-এমপি-নেতা কারও মৃত্যু হলে দল না করলেও বা দলে সক্রিয় না থাকলেও স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়দের নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। জেলাসহ তৃণমূলের কমিটিগুলো যখন নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে করা হয়েছে, তখনো কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলে গণতন্ত্র ও গঠনতন্ত্র সুরক্ষার স্বার্থে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রী পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালের কাউন্সিলে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভোট হয়। প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী পান ৫০০ ভোট আর সভাপতি মওলানা ভাসানী পান ৩৫ ভোট। ভোটেই আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারিত হতো। স্বাধীনতার পর দলীয় গণতন্ত্রকে অবারিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। আওয়ামী লীগ দলের রয়েছে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য।
বর্তমানে দলের মধ্যে যে পাল্টাপাল্টি অবস্থা, তার পরিণতি কী? অভিজ্ঞতা বলে, রাজনৈতিক দলে ‘কমান্ড মেথড’ তাৎক্ষণিক ফল দিলেও ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়। রাজনৈতিক দলে কমান্ড রাখতে হয়, গণতন্ত্রকে সংকুচিত করার জন্য নয় বরং প্রসারিত করার জন্য।
আওয়ামী লীগ যদি দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা সম্প্রসারণ করতে পারে, তাহলে শুধু দল নয়, দেশের গণতন্ত্রের জন্যও তা ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।
বর্তমানে দলের মধ্যে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা দূর করা ভিন্ন আর কোনো বিকল্প আওয়ামী লীগের সামনে নেই। দলের প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাল্টালে দেশ পাল্টাবে।’ আজ যে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, এই অবস্থা কি পাল্টাবে?
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, আবার নিচ্ছেও। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত মানছেন না, তাঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বহিষ্কারেও অনেককে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করলে দল দুর্বল হবে না, এতে বরং শক্তি সংহত হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিতে চলছে লেজেগোবরে অবস্থা। দায়িত্বশীল নেতাদের অকার্যকর ভূমিকা, কর্মীদের পাশে না দাঁড়ানো, সমন্বয়হীনতা, সর্বোপরি লন্ডন থেকে ‘ডিসিশন’ আসার কারণে বিএনপি রয়েছে তালগোল পাকানো অবস্থায়। দলীয় সিদ্ধান্ত ভেঙে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৫ জনকে বিএনপি বহিষ্কার করেছে। বয়কট-বর্জনের রাজনীতি করে দলটি জনগণ ও কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও নেতৃত্ব মনে করেছেন, বিএনপি সঠিক ধারায় আছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো বলে!
বিএনপির দিকে তাকালে মনে হবে, আওয়ামী লীগ বুঝি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, আনন্দে আছে। কিন্তু মাঠের খবর তা বলছে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছিল। তাতে ৩০০ আসনের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ৬২ জন বিজয়ী হন।
নির্বাচনের পর দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁরা সংসদে আলাদা গ্রুপ করে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য স্বতন্ত্র সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাড়ি একটা, ঘর হয়েছে দুটো। দুই হাতই আমার।
দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন অবস্থা অভিনব। এক বাড়িতে বহু ঘর থাকতে পারে, তবে একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি বা ভাগাভাগি খুব ভালো লক্ষণ নয়।
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-বিরোধ-পাল্টাপাল্টি দৃষ্টিকটুভাবেই সামনে আসছে।
কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে জেলায়-তৃণমূলে আওয়ামী লীগে গ্রুপ বিভক্তি অতীত থেকেই চলে আসছে। সব সময়ই তা কমবেশি আছে এবং এতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে সম্মেলন কিংবা নির্বাচন এলে বিভক্তি-পাল্টাপাল্টি কোথাও কোথাও তীব্র ও প্রকাশ্য রূপ নেয়। আবার এটাও বলা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিরোধ যতটা বাড়ে, বিরোধী দলে থাকলে ততটা দেখা যায় না।
উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগে গ্রুপ দ্বন্দ্ব-পাল্টাপাল্টি এমন চরমে উঠেছে, যা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটিকেও স্পর্শ করেছে। গ্রুপ দ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বিবেচনায় নিয়েই হোক কিংবা বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যরা ভোট বয়কট করবে বলেই হোক, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পরামর্শও দলের পক্ষ থেকে দলীয় প্রধান নিজেই দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছেন। এলাকায় এলাকায় আর্থিক সিন্ডিকেটের মতোই আত্মীয়স্বজন নিয়ে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবার আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। নাটোরের সিংড়ায় অপহরণ-মারধরের ঘটনা ঘটে। অনভিপ্রেত ঘটনার পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পলক দুঃখ প্রকাশ করেন।
কিন্তু দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করার ঘটনা কয়েক জায়গায় ঘটছে। ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আগে থেকে প্রচার করা হলেও ওই সভায় মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কোনো আলোচনা না তোলায় দলের অন্য নেতারাও বৈঠকে মুখ খোলেননি। তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আত্মীয়স্বজনের প্রার্থী হওয়ার জন্য শাস্তির বিধান কি আপাতত স্থগিত থাকছে?
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘স্বজন রাজনীতি করলে ভোটে কেন নয়?’ তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন এবং কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে ভিন্নমত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ‘আমি নির্বাচন করছি না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ছেলে নির্বাচন থেকে সরবে কি না, সেটা তার সিদ্ধান্ত।’ তিনি ৩০ এপ্রিল সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট হচ্ছে কি না’, ‘নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না’—এসব নিয়েও কথা বলার কথা ছিল তাঁর।
ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেবেন বলে দলের কোনো কোনো নেতা আভাস দিলেও সেই শক্ত অবস্থান যে দেখা গেল না, তাতে কী প্রমাণিত হচ্ছে? শাজাহান খানেরা এখন আওয়ামী লীগে শক্তিশালী?
আত্মীয়স্বজনকে দলে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগে নতুন নয়। দলীয় মন্ত্রী-এমপি-নেতা কারও মৃত্যু হলে দল না করলেও বা দলে সক্রিয় না থাকলেও স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়দের নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। জেলাসহ তৃণমূলের কমিটিগুলো যখন নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে করা হয়েছে, তখনো কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলে গণতন্ত্র ও গঠনতন্ত্র সুরক্ষার স্বার্থে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রী পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালের কাউন্সিলে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভোট হয়। প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী পান ৫০০ ভোট আর সভাপতি মওলানা ভাসানী পান ৩৫ ভোট। ভোটেই আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারিত হতো। স্বাধীনতার পর দলীয় গণতন্ত্রকে অবারিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। আওয়ামী লীগ দলের রয়েছে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য।
বর্তমানে দলের মধ্যে যে পাল্টাপাল্টি অবস্থা, তার পরিণতি কী? অভিজ্ঞতা বলে, রাজনৈতিক দলে ‘কমান্ড মেথড’ তাৎক্ষণিক ফল দিলেও ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়। রাজনৈতিক দলে কমান্ড রাখতে হয়, গণতন্ত্রকে সংকুচিত করার জন্য নয় বরং প্রসারিত করার জন্য।
আওয়ামী লীগ যদি দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা সম্প্রসারণ করতে পারে, তাহলে শুধু দল নয়, দেশের গণতন্ত্রের জন্যও তা ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।
বর্তমানে দলের মধ্যে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা দূর করা ভিন্ন আর কোনো বিকল্প আওয়ামী লীগের সামনে নেই। দলের প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাল্টালে দেশ পাল্টাবে।’ আজ যে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, এই অবস্থা কি পাল্টাবে?
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে