কান্নার মধ্যেই বেচাকেনা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২২, ০৬: ৫৭
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২২, ১৪: ৫৬

আগের রাতে পুড়ে ছাই হয়েছে একজীবনের অর্জন ‘দোকানটি’। তাই কাঁদতে কাঁদতে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম পিয়ারুর চোখের সব জলই যেন ফুরিয়ে গিয়েছিল। গতকাল শনিবার সকালে পুড়ে যাওয়া কাপড়চোপড়ের ধ্বংসস্তূপের ওপর নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন এই ব্যবসায়ী। বড় বোন রেনু আক্তারের উপস্থিতিতে শুকিয়ে যাওয়া সেই চোখে আবার ফিরে আসে জল!

নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ভাই সাইফুলকে সান্ত্বনা দিতে রাউজানের গহিরা থেকে ছুটে এসেছেন রেনু। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দুঃখ মোছার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এই নারী। তাতেই সাইফুলের চোখ বেয়ে পড়তে শুরু করে জল। বিলাপ করে বলে ওঠেন, ‘আপা, আমার সব শেষ হয়ে গেল রে।’

সাইফুলের এমন কষ্ট হওয়ারই তো কথা। তিলে তিলে টাকা জমিয়ে গড়েছিলেন পুঁজি। আর পরিচিতজনদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ যোগ করে কয়েক বছর আগে জহুর হকার্স মার্কেটে দিয়েছিলেন কাপড়ের দোকানটি। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ লাগা আগুন গ্রাস করে নিয়েছে দোকানের পুরোটাই।

সাইফুল বলেন, ‘দোকানে অন্তত ১০ লাখ টাকার কাপড় ছিল। ঈদের জন্য তিন লাখ টাকার নতুন কাপড় তুলেছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রাণপণ দৌড়ে এসেছিলাম। কিন্তু কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। চোখের সামনেই দেখেছি, আমার সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। এখন কীভাবে চালাব সংসার। কীভাবে শোধ করব ঋণ?’

শুধু সাইফুল নন, আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ ব্যবসায়ী। গত শুক্রবার মার্কেট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ছিলেন না। এমন সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটের মাঝামাঝি এলাকায় মসজিদের পাশের দোতলা মার্কেটের গোডাউন থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগ্রাবাদ, নন্দনকানন ও চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের নয়টি গাড়ি দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, আগুনের ঘটনা ঘটেছে মার্কেটের পশ্চিম অংশে। এই মার্কেটে অন্তত ৯০০ দোকান রয়েছে।

গতকাল সকালে মার্কেট এলাকায় দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের গাড়িগুলো পুড়ে যাওয়া কাপড়চোপড় নিয়ে যাচ্ছিল। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সেসব দেখে হাহাকার করছিলেন। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র তন্নতন্ন করে ঘাঁটছিলেন কিছু অক্ষত আছে কি না দেখতে। তবে পূর্ব পাশের মার্কেটগুলো রক্ষা পেয়েছে আগুন থেকে। সেসব দোকানে অন্য দিনগুলোর মতো স্বাভাবিকভাবেই চলছিল বেচাকেনা।

আগুনে সব হারানো ব্যবসায়ীদের আরেকজন মোহাম্মদ মানিক। ছোট ভাই মোহাম্মদ সাহেদকে নিয়ে দোকানের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন এই ব্যবসায়ী। এমন সময় মানিক বলেন, ‘মার্কেট বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়ি পটিয়ায় গিয়েছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়েই সেখান থেকে রওনা হই। মধ্যরাতে এসে দেখি, আগুন আমার জন্য কিছুই রাখেনি।’

নগরীর পরীর পাহাড়সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট দোকান নিয়ে গড়ে ওঠা এই মার্কেটে তৈরি পোশাক, টেইলারিং দোকান রয়েছে। পাশাপাশি আধা পাকা কাঠামোর ওপর দ্বিতল গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও আছে। কিন্তু মার্কেটের ভেতরের পরিবেশ একেবারেই ঘিঞ্জি। সরু গলির দুই পাশেই সারি সারি দোকান।

যাওয়া-আসার পথ অনেকটাই অপ্রশস্ত হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক নিউটন দাশ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছি। আগুনে প্রায় ৩৭ লাখ টাকার জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। তবে তিন কোটি টাকার জিনিসপত্র উদ্ধার করা গেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত