নির্জনতা আর সহ্য হলো না

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ১৮

... যখন বয়স পঁচিশ, গঙ্গার ধারে বাংলার এক প্রত্যন্ত জেলায় বোট হাউসে পরম নির্জনতায় দিন কাটিয়েছি। প্রতি হেমন্তে হিমালয়ের ঝিলগুলি থেকে যে-বুনো হাঁসেরা উড়ে আসত, একমাত্র তারাই ছিল আমার জীবন্ত সঙ্গী। সেই গভীর নির্জনতায় উন্মুক্ত বিশ্বের মাঝে ঝলমলে রৌদ্রের মধ্যে যেন আমি মাতাল হয়ে থাকতাম, নদীর কুলকুল বয়ে যাওয়ার শব্দ আমাকে প্রকৃতির রহস্য ধরিয়ে দিত। সেই নির্জন বিচ্ছিন্নতায় আমি দিন কাটাতাম। আমার স্বপ্ন, চিন্তাকে রূপ দিতাম কবিতায়, কলকাতার মানুষজনের কাছে তা পৌঁছে যেত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে।...

এরপর সেই সময় এল যখন নির্জনতা আর সহ্য হলো না, তার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণ ছটফট করতে লাগল। আমার চারপাশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে লাগলাম। স্বদেশবাসীর জন্য নির্দিষ্ট করে কিছু কাজ করা, আমার ধ্যানধারণা ও স্বপ্নের একটি নির্দিষ্ট রূপ দেওয়ার তাড়না তৈরি হলো।

একটি কাজের কথা মাথায় এলো। তা হল, শিশুদের পড়ানোর কথা। এমনটা নয় যে, এই কাজে আমি পারঙ্গম, আমি নিজেই তো ধারাবাহিক শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণ সুবিধা নিইনি। তাই প্রথমে এই কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও, ভেবে দেখলাম, প্রকৃতির প্রতি আমার গভীর টান রয়েছে, তেমন শিশুদের প্রতিও রয়েছে প্রগাঢ় ভালোবাসা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগ করার পূর্ণ অবকাশ ও স্বাধীনতা দেওয়া, প্রকৃতির সঙ্গে তাদের একাত্মতা গড়ে তুলতে সাহায্য করা। আমার শৈশবে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো এসেছে, ইশকুলে যাওয়া বহু শিশু সেই একই বাধাবিপত্তির শিকার, যে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা শিশুজীবনের স্বাধীনতা এবং আনন্দকে গুঁড়িয়ে দেয়। তাই, আমার লক্ষ্য ছিল সেই আনন্দ এবং স্বাধীনতাকে বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া।

কিছু ছেলেপুলে জুটে গেল, তাদের পড়াতে লাগলাম। তাদের আনন্দ দিতে চেষ্টা করলাম। আমি হয়ে উঠলাম তাদের খেলার সাথি। 

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯১৩ সালে

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত