হাফিজ আদনান রিয়াদ
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রযুক্তির পদক্ষেপ সব সময়ই অগ্রসরমাণ ছিল। একদিন সেই পদক্ষেপ যখন অনলাইন হলো, তখন প্রযুক্তি হাঁটা থেকে ছোটা শুরু করল। সেই ছুটে চলাটা বিস্ময়কর। উদ্বেলিত হলো গোটা বিশ্ব। প্রযুক্তির হাত ধরল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সঙ্গে অবাধ তথ্যপ্রবাহ। ব্যস! পুরোনো সব প্রযুক্তি ছাপিয়ে নেতৃত্বের আসনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি। বিশ্ব হয়ে গেল ডিজিটাল এবং স্মার্ট।
বাংলাদেশই-বা পিছিয়ে থাকবে কেন? ভাসা ভাসা জ্ঞান ও যথেষ্ট অদক্ষতা নিয়ে সেই অনলাইন প্রযুক্তির মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দিল বাংলাদেশ। হড়বড়িয়ে অদক্ষ ও ডিজিটালি আনস্মার্ট জনবল নিয়ে আধাখ্যাঁচড়াভাবে ডিজিটাল হয়েও গেল। এখনো বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে অত্যাধুনিক এমআর স্ক্যানারে পাসপোর্ট স্ক্যান হওয়ার পরেও ম্যানুয়াল সিলের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ইমিগ্রেশন পুলিশের ক্ষমতা দেখার জন্য! কিংবা স্মার্ট কার্ড, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট—এসব আলাদা আইডেন্টিটিকে একটা ন্যাশনাল পিন নম্বরের আওতায় আনা দূরে থাক, অন্তত ইন্টারকানেক্টেডও করা যায়নি এখনো। আগে ছোটরা বড়দের কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইত, সাহায্য চাইত। আর এখন আনস্মার্ট বড়রাই ছোটদের মুখাপেক্ষী হয় সাধারণ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিখতে। প্রযুক্তি ব্যবহারে ছোটরা অনেকটুকু এগিয়ে বড়দের চেয়ে।
এ দেশের সরকারগুলো প্রত্যেকেই ক্ষমতাকাঠামো নিরঙ্কুশ করতে গণমাধ্যমকে অন্তরালে নিয়ন্ত্রণ করেছে, এতে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমেই কমেছে। মানুষ এখন ‘ফেসবুকের খবর’ বিশ্বাস করে। ছাপানো পত্রিকা পড়া কমিয়েছে। কিন্তু ফেসবুকসহ অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যা দেখা যায়, তা যে এর ব্যবহারকারীদেরই তৈরি ও পরিবেশিত এবং এসব তথ্য বা সংবাদ কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াও প্রচারিত হতে পারে, সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। মনমতো বা আগ্রহের কোনো কনটেন্ট হলেই শেয়ার, লাইক, কমেন্টস দিয়ে দিচ্ছি। এর ফলে আমরা নিজেদের অজান্তেই হয়তো কোনো ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা জাতিকে অসম্মান করছি। ডিজিটাল ডিসইনফরমেশন বা অনলাইন কুতথ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা কিছু কিছু জানছি বটে। কিন্তু শিখছি না, তাই মানছিও না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো নারী আলোচনায় এল তো, সহস্র কণ্ঠে তার চরিত্রহরণ শুরু হয়ে যায়। এই তো সেদিন, একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পীর এইডস আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তথ্যটা সঠিক কি না, তা জানার কোনো বালাই নেই, হাজার হাজার মূর্খ তাঁর চরিত্র নিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে দিয়েছে। অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানকে ফেসবুকে যে কতবার মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কেউ কেউ তো তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে অনলাইন পোস্টার ছেড়ে দিয়েছিল। সাবিনা ইয়াসমীন, নায়করাজ রাজ্জাক থেকে নোয়াম চমস্কিসহ বেঁচে থাকা অনেকের নামই এসেছে মৃতের তালিকায়। তারপর ধরুন, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক নানা মিথ্যা পোস্ট দিয়ে সেই রামু বৌদ্ধবিহার, সুনামগঞ্জের হিন্দুপল্লি, নাসিরনগরের মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কুমিল্লায় পূজার সময় ঠাকুরের কোলের ওপর কোরআন শরিফ রেখে লাইভ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া, মসজিদে কোরআন অবমাননার অভিযোগে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা, ধর্ম অবমাননাকারী ছাত্রকে বাঁচানোর অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা দিয়ে বের করা—এমন অনেক ঘটনাই বলা যাবে। মিথ্যা, বানোয়াট বা ভুল তথ্য দিয়ে বাজার অস্থির করে তোলার ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। তেমনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও অনেক ধরনের পরস্পরবিরোধী অপপ্রচার আমরা দেখতে পাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আমাদের অসচেতনতায় এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়। এভাবে ধর্ম, সম্প্রদায়, মতাদর্শ, জাতি, গোষ্ঠী, দল, সংগঠন—সবই নেতিবাচক বিদ্বেষে আক্রান্ত হচ্ছে এখানে। এতে আমাদের সমাজের সামাজিক বুনন, বৈচিত্র্যের ঐক্য, সর্বোপরি সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে।
ইংরেজি শব্দ ‘ডিসইনফরমেশন’কে বিশেষজ্ঞরা মিসইনফরমেশন (ভুল তথ্য), ম্যালইনফরমেশন (কুটতথ্য), ডিসইনফরমেশন (কুতথ্য) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ডিপফেইক, হেইট স্পিচ—সবকিছুই ডিসইনফরমেশনের অন্তর্ভুক্ত। এসবের বিপদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত। এর পাশাপাশি ডিজিটাল হাইজিন ও সুরক্ষা জ্ঞানের অভাবে অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমে আমরা নিজেরাও প্রতারিত হচ্ছি, ঝুঁকিতে পড়ছি প্রতিনিয়ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কী দেখব, কী প্রতিক্রিয়া দেব, কী পোস্ট করব—এসব বিষয়ে যদি ধীরে চলা শিখতে না পারি, তবে সামনে আরও দুর্দিন আমাদের দেখতে হবে। অনলাইন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিমুহূর্তে আমাদের আগ্রহকে অনুসরণ করছে। আপনি যখন ফুলের ছবিতে লাইক দেবেন, তো ফুলের ছবি আপনার ফিডে বেশি করে আসবে। তেমনি আপনি যেমন ওয়াজ শুনবেন, তেমন ওয়াজ বেশি করে দেখতে পাবেন। আপনি যদি পর্ণো দেখেন, তো সেসব কনটেন্টই বেশি পাবেন। অর্থাৎ, আমরা যদি ভালো কিছু, ইতিবাচক কিছু পোস্ট করি, তো সেটাই সবাই দেখব।
কুতথ্যের বিপদ থেকে বাঁচতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এখন ফ্যাক্টচেকিং সেল চালু করেছে। যেকোনো সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই সেল কাজ করে। তার পরও মাঝেমধ্যেই ইচ্ছাকৃত বা অসতর্কতায় কখনো কখনো কুতথ্য প্রকাশিত হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃত হয় মূলত বেশি হিট, টিআরপি পাওয়ার জন্য। এর সঙ্গে অশুভ ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা খবরটা ‘খেয়েছেন’, তাঁরা তো মহা উৎসাহে সেটা ভাইরাল করে দিয়েছেন। সাধারণ ব্যবহারকারীদের সবকিছু এত যাচাই করা, ফ্যাক্টচেক, ইমেজ সার্চ করার কথাও না। কিন্তু মানুষকে সচেতন করতে, শেখাতে সরকারি পর্যায় থেকে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান প্রচেষ্টাও তো নেই। বেসরকারি পর্যায়ে কাজ যা হয় তা-ও ফান্ড-নির্ভর, সীমিত পরিসরে। আমাদের চারপাশের নেতিবাচক ঘটনাপরম্পরায় আমরা ইতিবাচক ভাবনা ভাবতেও ভুলে গেছি।
অনলাইনেও নেতিবাচক কুতথ্য আমাদের এতটাই জর্জরিত করছে যে, আমরা সাধারণ সচেতনতায় সেগুলো এড়িয়ে চলতেও পারি না, আবার ইতিবাচক লেখা বা কনটেন্ট দিয়ে সেগুলোকে নাকচও করতে পারছি না। নিদেনপক্ষে, যেকোনো পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে একটু অপেক্ষা করি, কিছুক্ষণ ভাবি এর সত্যতা। সংবাদটা কে দিয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু, বোঝার চেষ্টা করতে পারি। মোট কথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আমাদের একটু ধীরে চলা শিখতে হবে। বাংলাদেশ আজ কুতথ্যের মহাসমুদ্র সাঁতরে চলেছে। এখন আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রযুক্তির পদক্ষেপ সব সময়ই অগ্রসরমাণ ছিল। একদিন সেই পদক্ষেপ যখন অনলাইন হলো, তখন প্রযুক্তি হাঁটা থেকে ছোটা শুরু করল। সেই ছুটে চলাটা বিস্ময়কর। উদ্বেলিত হলো গোটা বিশ্ব। প্রযুক্তির হাত ধরল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সঙ্গে অবাধ তথ্যপ্রবাহ। ব্যস! পুরোনো সব প্রযুক্তি ছাপিয়ে নেতৃত্বের আসনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি। বিশ্ব হয়ে গেল ডিজিটাল এবং স্মার্ট।
বাংলাদেশই-বা পিছিয়ে থাকবে কেন? ভাসা ভাসা জ্ঞান ও যথেষ্ট অদক্ষতা নিয়ে সেই অনলাইন প্রযুক্তির মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দিল বাংলাদেশ। হড়বড়িয়ে অদক্ষ ও ডিজিটালি আনস্মার্ট জনবল নিয়ে আধাখ্যাঁচড়াভাবে ডিজিটাল হয়েও গেল। এখনো বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে অত্যাধুনিক এমআর স্ক্যানারে পাসপোর্ট স্ক্যান হওয়ার পরেও ম্যানুয়াল সিলের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ইমিগ্রেশন পুলিশের ক্ষমতা দেখার জন্য! কিংবা স্মার্ট কার্ড, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট—এসব আলাদা আইডেন্টিটিকে একটা ন্যাশনাল পিন নম্বরের আওতায় আনা দূরে থাক, অন্তত ইন্টারকানেক্টেডও করা যায়নি এখনো। আগে ছোটরা বড়দের কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইত, সাহায্য চাইত। আর এখন আনস্মার্ট বড়রাই ছোটদের মুখাপেক্ষী হয় সাধারণ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিখতে। প্রযুক্তি ব্যবহারে ছোটরা অনেকটুকু এগিয়ে বড়দের চেয়ে।
এ দেশের সরকারগুলো প্রত্যেকেই ক্ষমতাকাঠামো নিরঙ্কুশ করতে গণমাধ্যমকে অন্তরালে নিয়ন্ত্রণ করেছে, এতে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমেই কমেছে। মানুষ এখন ‘ফেসবুকের খবর’ বিশ্বাস করে। ছাপানো পত্রিকা পড়া কমিয়েছে। কিন্তু ফেসবুকসহ অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যা দেখা যায়, তা যে এর ব্যবহারকারীদেরই তৈরি ও পরিবেশিত এবং এসব তথ্য বা সংবাদ কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াও প্রচারিত হতে পারে, সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। মনমতো বা আগ্রহের কোনো কনটেন্ট হলেই শেয়ার, লাইক, কমেন্টস দিয়ে দিচ্ছি। এর ফলে আমরা নিজেদের অজান্তেই হয়তো কোনো ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা জাতিকে অসম্মান করছি। ডিজিটাল ডিসইনফরমেশন বা অনলাইন কুতথ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা কিছু কিছু জানছি বটে। কিন্তু শিখছি না, তাই মানছিও না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো নারী আলোচনায় এল তো, সহস্র কণ্ঠে তার চরিত্রহরণ শুরু হয়ে যায়। এই তো সেদিন, একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পীর এইডস আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তথ্যটা সঠিক কি না, তা জানার কোনো বালাই নেই, হাজার হাজার মূর্খ তাঁর চরিত্র নিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে দিয়েছে। অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানকে ফেসবুকে যে কতবার মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কেউ কেউ তো তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে অনলাইন পোস্টার ছেড়ে দিয়েছিল। সাবিনা ইয়াসমীন, নায়করাজ রাজ্জাক থেকে নোয়াম চমস্কিসহ বেঁচে থাকা অনেকের নামই এসেছে মৃতের তালিকায়। তারপর ধরুন, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক নানা মিথ্যা পোস্ট দিয়ে সেই রামু বৌদ্ধবিহার, সুনামগঞ্জের হিন্দুপল্লি, নাসিরনগরের মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কুমিল্লায় পূজার সময় ঠাকুরের কোলের ওপর কোরআন শরিফ রেখে লাইভ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া, মসজিদে কোরআন অবমাননার অভিযোগে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা, ধর্ম অবমাননাকারী ছাত্রকে বাঁচানোর অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা দিয়ে বের করা—এমন অনেক ঘটনাই বলা যাবে। মিথ্যা, বানোয়াট বা ভুল তথ্য দিয়ে বাজার অস্থির করে তোলার ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। তেমনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও অনেক ধরনের পরস্পরবিরোধী অপপ্রচার আমরা দেখতে পাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আমাদের অসচেতনতায় এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়। এভাবে ধর্ম, সম্প্রদায়, মতাদর্শ, জাতি, গোষ্ঠী, দল, সংগঠন—সবই নেতিবাচক বিদ্বেষে আক্রান্ত হচ্ছে এখানে। এতে আমাদের সমাজের সামাজিক বুনন, বৈচিত্র্যের ঐক্য, সর্বোপরি সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে।
ইংরেজি শব্দ ‘ডিসইনফরমেশন’কে বিশেষজ্ঞরা মিসইনফরমেশন (ভুল তথ্য), ম্যালইনফরমেশন (কুটতথ্য), ডিসইনফরমেশন (কুতথ্য) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ডিপফেইক, হেইট স্পিচ—সবকিছুই ডিসইনফরমেশনের অন্তর্ভুক্ত। এসবের বিপদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত। এর পাশাপাশি ডিজিটাল হাইজিন ও সুরক্ষা জ্ঞানের অভাবে অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমে আমরা নিজেরাও প্রতারিত হচ্ছি, ঝুঁকিতে পড়ছি প্রতিনিয়ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কী দেখব, কী প্রতিক্রিয়া দেব, কী পোস্ট করব—এসব বিষয়ে যদি ধীরে চলা শিখতে না পারি, তবে সামনে আরও দুর্দিন আমাদের দেখতে হবে। অনলাইন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিমুহূর্তে আমাদের আগ্রহকে অনুসরণ করছে। আপনি যখন ফুলের ছবিতে লাইক দেবেন, তো ফুলের ছবি আপনার ফিডে বেশি করে আসবে। তেমনি আপনি যেমন ওয়াজ শুনবেন, তেমন ওয়াজ বেশি করে দেখতে পাবেন। আপনি যদি পর্ণো দেখেন, তো সেসব কনটেন্টই বেশি পাবেন। অর্থাৎ, আমরা যদি ভালো কিছু, ইতিবাচক কিছু পোস্ট করি, তো সেটাই সবাই দেখব।
কুতথ্যের বিপদ থেকে বাঁচতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এখন ফ্যাক্টচেকিং সেল চালু করেছে। যেকোনো সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই সেল কাজ করে। তার পরও মাঝেমধ্যেই ইচ্ছাকৃত বা অসতর্কতায় কখনো কখনো কুতথ্য প্রকাশিত হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃত হয় মূলত বেশি হিট, টিআরপি পাওয়ার জন্য। এর সঙ্গে অশুভ ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা খবরটা ‘খেয়েছেন’, তাঁরা তো মহা উৎসাহে সেটা ভাইরাল করে দিয়েছেন। সাধারণ ব্যবহারকারীদের সবকিছু এত যাচাই করা, ফ্যাক্টচেক, ইমেজ সার্চ করার কথাও না। কিন্তু মানুষকে সচেতন করতে, শেখাতে সরকারি পর্যায় থেকে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান প্রচেষ্টাও তো নেই। বেসরকারি পর্যায়ে কাজ যা হয় তা-ও ফান্ড-নির্ভর, সীমিত পরিসরে। আমাদের চারপাশের নেতিবাচক ঘটনাপরম্পরায় আমরা ইতিবাচক ভাবনা ভাবতেও ভুলে গেছি।
অনলাইনেও নেতিবাচক কুতথ্য আমাদের এতটাই জর্জরিত করছে যে, আমরা সাধারণ সচেতনতায় সেগুলো এড়িয়ে চলতেও পারি না, আবার ইতিবাচক লেখা বা কনটেন্ট দিয়ে সেগুলোকে নাকচও করতে পারছি না। নিদেনপক্ষে, যেকোনো পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে একটু অপেক্ষা করি, কিছুক্ষণ ভাবি এর সত্যতা। সংবাদটা কে দিয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু, বোঝার চেষ্টা করতে পারি। মোট কথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আমাদের একটু ধীরে চলা শিখতে হবে। বাংলাদেশ আজ কুতথ্যের মহাসমুদ্র সাঁতরে চলেছে। এখন আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে