মৃত্যুর চেয়ে ফুল দামি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ১৫

অবচেতনের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করেছেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। কিন্তু সেটাই তো তাঁর একমাত্র কাজ ছিল না। অনেকেই বলে থাকেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানে গ্যালিলিও যা করেছেন, মনোবিজ্ঞানে ফ্রয়েড একই কাজ করেছেন।

সত্তর বছর পার হওয়ার পর মৃত্যুচিন্তাকে মহিমান্বিত করেছেন তিনি। ভেবেছেন, ঈশ্বর আসলেই মানুষের প্রতি সদয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন ক্রমেই বিসদৃশ ঠেকতে থাকে। শেষ জীবনে এসে বয়সটা যথেষ্ট ভারী হয়ে ওঠে। তখন সেই ভারের কাছে মৃত্যুকে খুব বেশি অসহ্য বলে মনে হয় না।

সত্তরতম জন্মদিন যখন হলো ফ্রয়েডের, তখন সারা পৃথিবীই মেতে উঠল তাঁর জন্মোৎসবে। ব্যতিক্রম তাঁর নিজের ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা কিন্তু তাদেরই লোক ফ্রয়েডকে সম্মাননা জানাল না। তাতে ফ্রয়েডের কিছু মনে হয়নি। তিনি ভেবেছেন, ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান জানালে তিনি নিজেই বিব্রত হতেন। বয়স সত্তর হয়েছে বলে বিশেষভাবে আলিঙ্গন করতে হবে—এ কেমন কথা? তিনি দেখেছেন, খ্যাতি মূলত মৃত্যুর পরই আসে। কিন্তু মরণোত্তর খ্যাতির ব্যাপারে ফ্রয়েডের কোনো আগ্রহ নেই।

মৃত্যুর পর বেঁচে থাকার ইচ্ছে থাকে অনেকের। মানুষ যেন মনে রাখে, এই আকাঙ্ক্ষা থেকে বের হওয়া কঠিন ব্যাপার। কিন্তু ফ্রয়েড মনে করতেন, এই চিন্তার কোনো মানে নেই; বরং নিজের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবাটাই জরুরি। জীবনকে সচ্ছল করে যেতে পারেননি।

সারা জীবনের সঞ্চয় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে যুদ্ধের কারণে। ফলে জীবন তখন সহজ ছিল না। কিন্তু বার্ধক্যকে তখনো বোঝা বলে মনে করেননি তিনি; বরং সত্তর বছর বয়সেও কাজের আনন্দ পাচ্ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে দার্শনিকতা ঢোকাতে চাননি তিনি; বরং ভেবেছেন, জীবনে দার্শনিকতার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে জীবনের ছোটখাটো আনন্দগুলো থেকে বঞ্চিত হতে চান না।

এবং একদিন হাঁটতে হাঁটতে পথসঙ্গীকে বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর আমার ভাগ্যে কী জুটবে, সে ভাবনার চেয়ে এই ফুলগুলোর ব্যাপারে আমি বেশি আগ্রহী। ’

সূত্র: শাহাদুজ্জামান, কথাপরম্পরা, পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত