মহিউদ্দিন খান মোহন
জয়পুরহাট থেকে ফোন করেছিল বন্ধু আজম খান। মাঝেমধ্যেই ফোন করে রাজনীতি-সচেতন আমার এই বন্ধুটি। জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত, তোদের ওদিকে অবরোধ কী রকম হচ্ছে? জবাবে সে বলল, অবরোধ! সেটা আবার কী? বললাম, তুই কি ঘুমিয়ে আছিস নাকি?
জানিস না, দেশব্যাপী বিএনপির ডাকে লাগাতার অবরোধ চলছে? আজম উচ্চ স্বরে হেসে বলল, যেখানে আধা বেলা হরতাল পালন হয় না, সেখানে আবরোধ মানবে কে? শুধু ঢাকার গাড়িগুলো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর সব জায়গায় লোকাল বাস চলাচল করছে। এখন ঢাকায় গাড়ি না যাওয়াকে যদি অবরোধ বলিস তাহলে তা পালিত হচ্ছে বলতেই হবে।
এটা শুধু জয়পুরহাটের চিত্র নয়, গোটা বাংলাদেশের চিত্র। রাজধানী ঢাকা থেকে বড় বড় শহরে যানবাহন চলাচল বেশির ভাগ বন্ধ রয়েছে।
লোকাল পরিবহন চলছে ঠিকঠাকমতোই। ফলে বিএনপির ডাকা অবরোধ কার্যকারিতা হারিয়েছে ইতিমধ্যেই। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে। তখনো দূরপাল্লার যানবাহন আগুন ও পেট্রলবোমার ভয়ে বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে স্বাভাবিক চলাচল শুরু করেছিল। মাসখানেক পরে অবরোধের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে তিন মাস পর কোনো রকম ঘোষণা না দিয়েই অবরোধকে মৃত ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবারও সে রকম লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলীয় কর্মীরা মাঠে নামছেন না, জনসাধারণ সহযোগিতা করছে না। কিন্তু অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও-বার্তায় এক দিন বিরতি দিয়ে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দিয়ে চলেছেন একজন নেতা। এভাবে কোনো গণ-আন্দোলন সংগঠিত করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কথা উঠেছে বিএনপির নেতৃত্বের বাস্তবতা অনুধাবনের জ্ঞানগরিমা নিয়েও। তারা কি এটা বুঝতে পারছে না, জনগণের একটি অংশ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এই ধরনের নেতিবাচক কর্মসূচিকে তারা সমর্থন করছে না? ভোট হলে এবং সুযোগ পেলে তারা হয়তো বিএনপিকে ভোট দেবে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে তারা দলটির পক্ষে মাঠে নামবে না। তারপরও কেন বিএনপির নেতারা একটি আধমরা কর্মসূচিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন? পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে, বিএনপির এই কর্মসূচি সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়নি। আর প্রচণ্ড চাপের মুখে না পড়লে কোনো সরকারই যে কোনো আন্দোলনের কাছে মাথা নত করে না, তার প্রমাণ তো আমাদের নিকট অতীতেই রয়েছে। ১৯৯০-এ স্বৈরশাসক এরশাদ পদত্যাগে রাজি হয়েছিলেন গণ-আন্দোলনের চাপে দিশেহারা হয়ে। আর ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্মিলিত আন্দোলনের চাপে পড়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি সরকার। এটা স্বীকার করতেই হবে, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও সব দলকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার রোধে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা সত্ত্বেও জনগণ রাস্তায় নামেনি।
বাজারে গেলে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের কারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষের উষ্মা প্রকাশের বিষয়টি কর্ণগোচর হয় এটা ঠিক। তবে তা নিয়ে তারা মিছিলে নামতে রাজি নয়। বিএনপি হয়তো বলবে, সরকারের দমননীতির ভয়ে জনগণ কথা বলে না। তবে এটাও ঠিক জনগণ যতক্ষণ প্রকাশ্যে রাস্তায় না নামবে, ততক্ষণ সরকারকে টলানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। অবস্থা এখন যে পর্যায়ে এসে ঠেকেছে, তাতে বিএনপি কী করবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা কি চলমান অবরোধ কর্মসূচি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসবে? নাকি আন্দোলনের লাশ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত পায়ে পথ চলতে থাকবে? সিদ্ধান্ত একান্তই বিএনপির।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করেছে, যদিও এখনো পর্যন্ত তা জোরেশোরে নয়। তবে অচিরেই যে তা প্রবলভাবে বইতে শুরু করবে, সেই আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দলগুলো তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। মনোনয়নপত্র বিক্রির পর দলীয় মনোনয়নও চূড়ান্ত হয়েছে। মনোনয়নপত্র বিক্রি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়েছিল ঈদের আমেজ। নেতা-কর্মীর ভিড়ে জমজমাট অবস্থা। মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল। জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে যে একটু ধোঁয়াশা ছিল তা-ও পরিষ্কার হয়ে গেছে। ২২ নভেম্বর দলটির মহাসচিব স্পষ্ট করেই বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপি নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না; বরং নির্বাচন হতে দেবে না। বিএনপির এই নির্বাচন হতে না দেওয়ার ‘দৃঢ় প্রত্যয়’ নিয়ে রাজনীতি-সচেতন মহলে মুখরোচক কথাবার্তা চলছে। অনেকেই বলছেন, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ যে লেজেগোবরে অবস্থা তারা করেছে, তাতে সরকার এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নির্বাচন প্রতিহত করা তাদের দ্বারা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ১৯৮৮ সালে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, বাম জোটসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল বয়কট করা সত্ত্বেও স্বৈরশাসক এরশাদ একতরফা নির্বাচন করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তাতে সহযোগীরও অভাব হয়নি। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে সোচ্চার জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ৭০টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ’ সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সবারই জানা থাকার কথা, ভোটারবিহীন সে নির্বাচনে অলৌকিকভাবে নির্বাচিত হয়ে রব সাহেব সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসে জাতিকে ধন্য করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ বড় দল নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ডাক দিলেও তা ঠেকানো যায়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি দল বর্জন করেছিল, প্রতিহত করার জন্য আশ্রয় নিয়েছিল সহিংস আন্দোলনের।
কিন্তু ঠেকানো গেছে কি সেই নির্বাচন? আসলে সরকার বা রাষ্ট্রযন্ত্র যদি বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে যেভাবেই হোক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান আটকানো যায় না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভাবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। কারও কারও মতে, ওই নির্বাচন বয়কট করা সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বিএনপির। নির্বাচন বয়কট করা তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে, যদি তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়। আগেই বলেছি, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন প্রতিহত করা ‘অলৌকিক’ কোনো সাহায্য ছাড়া বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়।
এদিকে সর্বশেষ খবর হলো বিএনপির মিত্র এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২-দলীয় জোটনেতা মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের (অব.) নেতৃত্বে তিনটি দল ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনে করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিএনপির আন্দোলনের শরিক আরও কিছু রাজনৈতিক দল ভোটে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এমনকি বিএনপির কোনো কোনো নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। নিবন্ধনহারা দল জামায়াতে ইসলামীও ভিন্ন নামে হলেও নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে, এমন খবরও চাউর হয়েছে। তাহলে কি নির্বাচন ঠেকাতে সংকল্পবদ্ধ বিএনপি শেষ পর্যন্ত একা পড়ে থাকবে রাস্তায়?
এ কথাটিই ফোন করে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী। জনসমক্ষে বলা সমীচীন নয় তেমন একটি জোকস শুনিয়ে তাঁকে বললাম, নির্বাচন ঠেকানো পরের কথা, বিএনপি আগে তার শরিকদের নির্বাচনে যাওয়া ঠেকাক।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জয়পুরহাট থেকে ফোন করেছিল বন্ধু আজম খান। মাঝেমধ্যেই ফোন করে রাজনীতি-সচেতন আমার এই বন্ধুটি। জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত, তোদের ওদিকে অবরোধ কী রকম হচ্ছে? জবাবে সে বলল, অবরোধ! সেটা আবার কী? বললাম, তুই কি ঘুমিয়ে আছিস নাকি?
জানিস না, দেশব্যাপী বিএনপির ডাকে লাগাতার অবরোধ চলছে? আজম উচ্চ স্বরে হেসে বলল, যেখানে আধা বেলা হরতাল পালন হয় না, সেখানে আবরোধ মানবে কে? শুধু ঢাকার গাড়িগুলো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর সব জায়গায় লোকাল বাস চলাচল করছে। এখন ঢাকায় গাড়ি না যাওয়াকে যদি অবরোধ বলিস তাহলে তা পালিত হচ্ছে বলতেই হবে।
এটা শুধু জয়পুরহাটের চিত্র নয়, গোটা বাংলাদেশের চিত্র। রাজধানী ঢাকা থেকে বড় বড় শহরে যানবাহন চলাচল বেশির ভাগ বন্ধ রয়েছে।
লোকাল পরিবহন চলছে ঠিকঠাকমতোই। ফলে বিএনপির ডাকা অবরোধ কার্যকারিতা হারিয়েছে ইতিমধ্যেই। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে। তখনো দূরপাল্লার যানবাহন আগুন ও পেট্রলবোমার ভয়ে বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে স্বাভাবিক চলাচল শুরু করেছিল। মাসখানেক পরে অবরোধের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে তিন মাস পর কোনো রকম ঘোষণা না দিয়েই অবরোধকে মৃত ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবারও সে রকম লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলীয় কর্মীরা মাঠে নামছেন না, জনসাধারণ সহযোগিতা করছে না। কিন্তু অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও-বার্তায় এক দিন বিরতি দিয়ে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দিয়ে চলেছেন একজন নেতা। এভাবে কোনো গণ-আন্দোলন সংগঠিত করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কথা উঠেছে বিএনপির নেতৃত্বের বাস্তবতা অনুধাবনের জ্ঞানগরিমা নিয়েও। তারা কি এটা বুঝতে পারছে না, জনগণের একটি অংশ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এই ধরনের নেতিবাচক কর্মসূচিকে তারা সমর্থন করছে না? ভোট হলে এবং সুযোগ পেলে তারা হয়তো বিএনপিকে ভোট দেবে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে তারা দলটির পক্ষে মাঠে নামবে না। তারপরও কেন বিএনপির নেতারা একটি আধমরা কর্মসূচিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন? পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে, বিএনপির এই কর্মসূচি সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়নি। আর প্রচণ্ড চাপের মুখে না পড়লে কোনো সরকারই যে কোনো আন্দোলনের কাছে মাথা নত করে না, তার প্রমাণ তো আমাদের নিকট অতীতেই রয়েছে। ১৯৯০-এ স্বৈরশাসক এরশাদ পদত্যাগে রাজি হয়েছিলেন গণ-আন্দোলনের চাপে দিশেহারা হয়ে। আর ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্মিলিত আন্দোলনের চাপে পড়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি সরকার। এটা স্বীকার করতেই হবে, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও সব দলকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার রোধে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা সত্ত্বেও জনগণ রাস্তায় নামেনি।
বাজারে গেলে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের কারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষের উষ্মা প্রকাশের বিষয়টি কর্ণগোচর হয় এটা ঠিক। তবে তা নিয়ে তারা মিছিলে নামতে রাজি নয়। বিএনপি হয়তো বলবে, সরকারের দমননীতির ভয়ে জনগণ কথা বলে না। তবে এটাও ঠিক জনগণ যতক্ষণ প্রকাশ্যে রাস্তায় না নামবে, ততক্ষণ সরকারকে টলানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। অবস্থা এখন যে পর্যায়ে এসে ঠেকেছে, তাতে বিএনপি কী করবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা কি চলমান অবরোধ কর্মসূচি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসবে? নাকি আন্দোলনের লাশ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত পায়ে পথ চলতে থাকবে? সিদ্ধান্ত একান্তই বিএনপির।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করেছে, যদিও এখনো পর্যন্ত তা জোরেশোরে নয়। তবে অচিরেই যে তা প্রবলভাবে বইতে শুরু করবে, সেই আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দলগুলো তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। মনোনয়নপত্র বিক্রির পর দলীয় মনোনয়নও চূড়ান্ত হয়েছে। মনোনয়নপত্র বিক্রি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়েছিল ঈদের আমেজ। নেতা-কর্মীর ভিড়ে জমজমাট অবস্থা। মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল। জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে যে একটু ধোঁয়াশা ছিল তা-ও পরিষ্কার হয়ে গেছে। ২২ নভেম্বর দলটির মহাসচিব স্পষ্ট করেই বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপি নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না; বরং নির্বাচন হতে দেবে না। বিএনপির এই নির্বাচন হতে না দেওয়ার ‘দৃঢ় প্রত্যয়’ নিয়ে রাজনীতি-সচেতন মহলে মুখরোচক কথাবার্তা চলছে। অনেকেই বলছেন, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ যে লেজেগোবরে অবস্থা তারা করেছে, তাতে সরকার এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নির্বাচন প্রতিহত করা তাদের দ্বারা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ১৯৮৮ সালে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, বাম জোটসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল বয়কট করা সত্ত্বেও স্বৈরশাসক এরশাদ একতরফা নির্বাচন করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তাতে সহযোগীরও অভাব হয়নি। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে সোচ্চার জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ৭০টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ’ সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সবারই জানা থাকার কথা, ভোটারবিহীন সে নির্বাচনে অলৌকিকভাবে নির্বাচিত হয়ে রব সাহেব সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসে জাতিকে ধন্য করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ বড় দল নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ডাক দিলেও তা ঠেকানো যায়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি দল বর্জন করেছিল, প্রতিহত করার জন্য আশ্রয় নিয়েছিল সহিংস আন্দোলনের।
কিন্তু ঠেকানো গেছে কি সেই নির্বাচন? আসলে সরকার বা রাষ্ট্রযন্ত্র যদি বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে যেভাবেই হোক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান আটকানো যায় না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভাবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। কারও কারও মতে, ওই নির্বাচন বয়কট করা সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বিএনপির। নির্বাচন বয়কট করা তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে, যদি তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়। আগেই বলেছি, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন প্রতিহত করা ‘অলৌকিক’ কোনো সাহায্য ছাড়া বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়।
এদিকে সর্বশেষ খবর হলো বিএনপির মিত্র এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২-দলীয় জোটনেতা মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের (অব.) নেতৃত্বে তিনটি দল ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনে করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিএনপির আন্দোলনের শরিক আরও কিছু রাজনৈতিক দল ভোটে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এমনকি বিএনপির কোনো কোনো নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। নিবন্ধনহারা দল জামায়াতে ইসলামীও ভিন্ন নামে হলেও নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে, এমন খবরও চাউর হয়েছে। তাহলে কি নির্বাচন ঠেকাতে সংকল্পবদ্ধ বিএনপি শেষ পর্যন্ত একা পড়ে থাকবে রাস্তায়?
এ কথাটিই ফোন করে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী। জনসমক্ষে বলা সমীচীন নয় তেমন একটি জোকস শুনিয়ে তাঁকে বললাম, নির্বাচন ঠেকানো পরের কথা, বিএনপি আগে তার শরিকদের নির্বাচনে যাওয়া ঠেকাক।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১১ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে