আবু তাহের খান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বছর চারেক আগে তাঁর এক বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমেই একটি উচ্চতর মাদ্রাসায় রূপ নিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ নম্বরই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের গড় থেকে নেওয়ার ভ্রান্ত পদ্ধতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা অত্যন্ত উদারভাবে মূল্যায়ন করে, যা সাধারণত শুরুই হয় ৯০ শতাংশ নম্বর দিয়ে, যেখানে ইংরেজির প্রায় কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই। অথচ সাধারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক পরিশ্রম করেও তার কাছাকাছি পর্যায়ের নম্বর পান না। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অনেক নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থী দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার সুবাদে খুব সহজেই ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাচ্ছেন এবং
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমেই একটি উচ্চতর মাদ্রাসায় রূপ নিতে শুরু করেছে।
অধ্যাপক মেসবাহ কামালের এই উদ্বেগের সঙ্গে দেশের অনেক সচেতন মানুষেরও একাত্ম হওয়ার কথা। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দেশের মানুষ বাংলাদেশ-সমাজের দর্পণ হিসেবেই গণ্য করে। সেখানে যা ঘটে এবং যা ঘটে না, এ উভয়ই বস্তুত এ দেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে, তারই নির্দেশক।১৯৪৮-৭১ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের যে ইতিহাস, তা বস্তুত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেরই ইতিহাস, যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জিন্নাহর ভাষণের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। একইভাবে ১৯৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ কোন পথে এগিয়েছে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই অনেকটা স্পষ্ট হবে। এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্রমেই একটি মাদ্রাসা হয়ে উঠছে, এটি বস্তুত বাংলাদেশ সমাজেরই একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সামাজিক শক্তির প্রাধান্যযুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়ে ওঠার প্রবণতারই সমান্তরাল ঘটনা।
নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা শুধু যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আধিক্য গড়ে তুলছেন তা-ই নয়, একই অবস্থা ঘটছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও। কওমি ও সাধারণ ধারার যেকোনো মাদ্রাসা থেকে ১৬ ও ১৭ বছরের শিক্ষাকাল অতিক্রম করলেই সেখানকার একজন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমানের সনদ পেয়ে যাচ্ছেন। আর এরূপ একটি সনদ হাতে থাকলে তদবিরের জোরে চাকরি পেয়ে যাওয়া, বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, এখন খুবই মামুলি ব্যাপার এবং বাস্তবে তা এতটাই ঘটছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব দখলের মতো বিভিন্ন স্তরের চাকরিবাকরি ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেও ক্রমান্বয়ে ওই মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অধিকারেই চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র শুধু যে প্রশ্রয়ই দিচ্ছে তা-ই নয়, অবিরাম পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে। কখনো হেফাজতের সঙ্গে আবার কখনো কওমি মাদ্রাসাপন্থীদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন সেই পৃষ্ঠপোষকতারই প্রামাণ্য দলিল। আর এটা তো সহজেই বোধগম্য যে এ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পাদিত রাজনৈতিক চুক্তি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিরই সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়।
হেফাজত ও কওমি মাদ্রাসাপন্থীদের পরামর্শে শিক্ষার পাঠ্যক্রম বদলে ফেলাটাও বিজ্ঞান ও ইংরেজিবর্জিত মাদ্রাসাশিক্ষাকে এগিয়ে রাখারই একটি কৌশল মাত্র। আর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এ ধারায় এগোতে থাকলে মাদ্রাসা শিক্ষায়ই ক্রমান্বয়ে এ দেশে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে ওঠে কি না, সে ঝুঁকিও অনেকটা থেকে যায় বৈকি! এই বক্তব্যের বাস্তবতা উপলব্ধি করা যাবে শুধু ঢাকা শহরেই কতসংখ্যক অননুমোদিত প্রাথমিক মাদ্রাসা আছে, তার হিসাব নেওয়া গেলে। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এ সংখ্যা শতক নয়, হাজারের কোঠায় হিসাব করতে হবে। তো, শুধু ঢাকা শহরেই যদি এ সংখ্যা কয়েক হাজার হয়, তাহলে সারা দেশে কত হতে পারে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আর এ অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা কি অবহিত আছেন? আর অবহিত থাকলে তাঁরা কি এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণমূলক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন, নাকি এ অবস্থা সৃষ্টিতে তাঁদের নীরব সমর্থন আছে বলেই বিষয়টিতে তাঁরা চুপ করে থাকছেন?
প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থাটি কীভাবে তৈরি হলো? এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় যে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এ-জাতীয় মাদ্রাসা স্থাপনে কোনো সরকারি অনুমতি লাগে না। তাহলে প্রশ্ন, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যদি অনুমোদন লাগে, তাহলে প্রাথমিক মাদ্রাসার জন্য নয় কেন? এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এগুলো স্থাপনে যেহেতু সরকারি অনুমতির প্রয়োজন নেই, সেহেতু এগুলো অননুমোদিত হলেও অবৈধ নয়।
আর এ ধরনের বৈধ অনিয়মের আওতাতেই দেশে মাদ্রাসাশিক্ষার প্রথম সোপানটি চতুর্দিকে শিকড় গেড়ে বসছে এবং সে ধারায় একসময় তা আফগানিস্তানের তালেবান সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করলে তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সে কাজটিই সম্ভবত অতি নীরবে এখন ঘটে চলেছে এবং এরাই হয়তো একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়ে উঠবেন, যেমন করে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তায় দীক্ষিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ হয়ে উঠতে পারে।
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ২০ বছর পর এ ক্যাম্পাস যদি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মৌলবাদী ওরিয়েন্টেশনে গড়া রোহিঙ্গাদের ভিড়েও সরব হয়ে ওঠে, তাহলে সেটিকে বোধ হয় আজ নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের যেভাবে মেনে নিতে হচ্ছে, তেমনি করে অসহায় চোখে মেনে নিতে হবে। লক্ষণীয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের যেসব নীতিনির্ধারক এসব ভ্রান্তিপূর্ণ নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন, তাঁরা হয়তো তাঁদের কার্যকাল শেষে চলে যাবেন; কিন্তু এর চরম মূল্য ও খেসারত দিতে হবে এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা আগামী দিনের রাষ্ট্র ও সমাজ তথা পুরো জাতিকে। আর সে ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ভূমিকা ইতিহাসের অন্যতম নেতিবাচক অনুষঙ্গ হয়েই থাকবে বৈকি!
এটিও এখন প্রতিষ্ঠিত আলোচনা যে, বৃহৎ মাদ্রাসার মতোই সান্ধ্য কোর্সের সুবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে একটি বৃহৎ কোচিং সেন্টারে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে নীল-সাদায় তেমন কোনো বিরোধ নেই। একইভাবে সুবিধার পাতে ভাগ বসানোর জন্য রাতারাতি যেমন একই রাজনৈতিক দলের ৭৩টি অঙ্গসংগঠন গড়ে ওঠে, তেমনি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতারাতি গড়ে উঠেছে অপ্রয়োজনীয় সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানেও ওই মাদ্রাসা থেকে আসাদেরই ভিড়। ওই যে রাজনৈতিক পরিচয় মেনে শিক্ষক নিয়োগ, শোনা তো যায় যে সেখানেও শুভ্র ভূষণের ওপর নীল টিপ পরে ঢুকে যাচ্ছে মৌলবাদীরাই। তাহলে কোন পথে এগোচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নাকি কেবলই পেছাচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, ১৯৭৩-এর স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশের সুযোগ নিয়ে আপনারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য হচ্ছেন। একই সুযোগকে ব্যবহার করে আপনারা কেন এ সিদ্ধান্তটুকু নিতে পারছেন না যে, এ দেশের শ্রেষ্ঠ-মেধাবী সন্তানদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হিসেবে আকৃষ্ট করার জন্য বাইরের যেকোনো নির্দেশ ও পরামর্শকে উপেক্ষা করে সর্বোত্তম ভর্তি ও নিয়োগ ব্যবস্থাটি এখানে গড়ে তুলবেন? এ দেশের প্রায় নিরক্ষর কৃষক খরা, বন্যা, ভূমির মালিকানাহীনতা ও নানাবিধ প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে গত পঞ্চাশ বছরে দেশের খাদ্যোৎপাদনকে প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বাড়িয়েছেন। আর আপনারা এত শিক্ষা-দীক্ষা ও রাষ্ট্রের নানা আনুকূল্য নিয়েও এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গত পঞ্চাশ বছরের আগের অবস্থার চেয়েও পিছিয়ে দিলেন?
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বছর চারেক আগে তাঁর এক বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমেই একটি উচ্চতর মাদ্রাসায় রূপ নিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ নম্বরই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের গড় থেকে নেওয়ার ভ্রান্ত পদ্ধতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদ্রাসাগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা অত্যন্ত উদারভাবে মূল্যায়ন করে, যা সাধারণত শুরুই হয় ৯০ শতাংশ নম্বর দিয়ে, যেখানে ইংরেজির প্রায় কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই। অথচ সাধারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক পরিশ্রম করেও তার কাছাকাছি পর্যায়ের নম্বর পান না। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অনেক নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থী দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার সুবাদে খুব সহজেই ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাচ্ছেন এবং
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমেই একটি উচ্চতর মাদ্রাসায় রূপ নিতে শুরু করেছে।
অধ্যাপক মেসবাহ কামালের এই উদ্বেগের সঙ্গে দেশের অনেক সচেতন মানুষেরও একাত্ম হওয়ার কথা। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দেশের মানুষ বাংলাদেশ-সমাজের দর্পণ হিসেবেই গণ্য করে। সেখানে যা ঘটে এবং যা ঘটে না, এ উভয়ই বস্তুত এ দেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে, তারই নির্দেশক।১৯৪৮-৭১ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের যে ইতিহাস, তা বস্তুত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামেরই ইতিহাস, যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জিন্নাহর ভাষণের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। একইভাবে ১৯৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ কোন পথে এগিয়েছে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই অনেকটা স্পষ্ট হবে। এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্রমেই একটি মাদ্রাসা হয়ে উঠছে, এটি বস্তুত বাংলাদেশ সমাজেরই একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সামাজিক শক্তির প্রাধান্যযুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়ে ওঠার প্রবণতারই সমান্তরাল ঘটনা।
নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা শুধু যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আধিক্য গড়ে তুলছেন তা-ই নয়, একই অবস্থা ঘটছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও। কওমি ও সাধারণ ধারার যেকোনো মাদ্রাসা থেকে ১৬ ও ১৭ বছরের শিক্ষাকাল অতিক্রম করলেই সেখানকার একজন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমানের সনদ পেয়ে যাচ্ছেন। আর এরূপ একটি সনদ হাতে থাকলে তদবিরের জোরে চাকরি পেয়ে যাওয়া, বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, এখন খুবই মামুলি ব্যাপার এবং বাস্তবে তা এতটাই ঘটছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব দখলের মতো বিভিন্ন স্তরের চাকরিবাকরি ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেও ক্রমান্বয়ে ওই মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অধিকারেই চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র শুধু যে প্রশ্রয়ই দিচ্ছে তা-ই নয়, অবিরাম পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে। কখনো হেফাজতের সঙ্গে আবার কখনো কওমি মাদ্রাসাপন্থীদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন সেই পৃষ্ঠপোষকতারই প্রামাণ্য দলিল। আর এটা তো সহজেই বোধগম্য যে এ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পাদিত রাজনৈতিক চুক্তি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিরই সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়।
হেফাজত ও কওমি মাদ্রাসাপন্থীদের পরামর্শে শিক্ষার পাঠ্যক্রম বদলে ফেলাটাও বিজ্ঞান ও ইংরেজিবর্জিত মাদ্রাসাশিক্ষাকে এগিয়ে রাখারই একটি কৌশল মাত্র। আর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এ ধারায় এগোতে থাকলে মাদ্রাসা শিক্ষায়ই ক্রমান্বয়ে এ দেশে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে ওঠে কি না, সে ঝুঁকিও অনেকটা থেকে যায় বৈকি! এই বক্তব্যের বাস্তবতা উপলব্ধি করা যাবে শুধু ঢাকা শহরেই কতসংখ্যক অননুমোদিত প্রাথমিক মাদ্রাসা আছে, তার হিসাব নেওয়া গেলে। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এ সংখ্যা শতক নয়, হাজারের কোঠায় হিসাব করতে হবে। তো, শুধু ঢাকা শহরেই যদি এ সংখ্যা কয়েক হাজার হয়, তাহলে সারা দেশে কত হতে পারে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আর এ অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা কি অবহিত আছেন? আর অবহিত থাকলে তাঁরা কি এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণমূলক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন, নাকি এ অবস্থা সৃষ্টিতে তাঁদের নীরব সমর্থন আছে বলেই বিষয়টিতে তাঁরা চুপ করে থাকছেন?
প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থাটি কীভাবে তৈরি হলো? এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় যে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এ-জাতীয় মাদ্রাসা স্থাপনে কোনো সরকারি অনুমতি লাগে না। তাহলে প্রশ্ন, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যদি অনুমোদন লাগে, তাহলে প্রাথমিক মাদ্রাসার জন্য নয় কেন? এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এগুলো স্থাপনে যেহেতু সরকারি অনুমতির প্রয়োজন নেই, সেহেতু এগুলো অননুমোদিত হলেও অবৈধ নয়।
আর এ ধরনের বৈধ অনিয়মের আওতাতেই দেশে মাদ্রাসাশিক্ষার প্রথম সোপানটি চতুর্দিকে শিকড় গেড়ে বসছে এবং সে ধারায় একসময় তা আফগানিস্তানের তালেবান সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করলে তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সে কাজটিই সম্ভবত অতি নীরবে এখন ঘটে চলেছে এবং এরাই হয়তো একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়ে উঠবেন, যেমন করে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তায় দীক্ষিত রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ হয়ে উঠতে পারে।
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ২০ বছর পর এ ক্যাম্পাস যদি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মৌলবাদী ওরিয়েন্টেশনে গড়া রোহিঙ্গাদের ভিড়েও সরব হয়ে ওঠে, তাহলে সেটিকে বোধ হয় আজ নিম্ন মেধার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের যেভাবে মেনে নিতে হচ্ছে, তেমনি করে অসহায় চোখে মেনে নিতে হবে। লক্ষণীয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের যেসব নীতিনির্ধারক এসব ভ্রান্তিপূর্ণ নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন, তাঁরা হয়তো তাঁদের কার্যকাল শেষে চলে যাবেন; কিন্তু এর চরম মূল্য ও খেসারত দিতে হবে এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা আগামী দিনের রাষ্ট্র ও সমাজ তথা পুরো জাতিকে। আর সে ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ভূমিকা ইতিহাসের অন্যতম নেতিবাচক অনুষঙ্গ হয়েই থাকবে বৈকি!
এটিও এখন প্রতিষ্ঠিত আলোচনা যে, বৃহৎ মাদ্রাসার মতোই সান্ধ্য কোর্সের সুবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে একটি বৃহৎ কোচিং সেন্টারে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে নীল-সাদায় তেমন কোনো বিরোধ নেই। একইভাবে সুবিধার পাতে ভাগ বসানোর জন্য রাতারাতি যেমন একই রাজনৈতিক দলের ৭৩টি অঙ্গসংগঠন গড়ে ওঠে, তেমনি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতারাতি গড়ে উঠেছে অপ্রয়োজনীয় সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানেও ওই মাদ্রাসা থেকে আসাদেরই ভিড়। ওই যে রাজনৈতিক পরিচয় মেনে শিক্ষক নিয়োগ, শোনা তো যায় যে সেখানেও শুভ্র ভূষণের ওপর নীল টিপ পরে ঢুকে যাচ্ছে মৌলবাদীরাই। তাহলে কোন পথে এগোচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নাকি কেবলই পেছাচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, ১৯৭৩-এর স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশের সুযোগ নিয়ে আপনারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য হচ্ছেন। একই সুযোগকে ব্যবহার করে আপনারা কেন এ সিদ্ধান্তটুকু নিতে পারছেন না যে, এ দেশের শ্রেষ্ঠ-মেধাবী সন্তানদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হিসেবে আকৃষ্ট করার জন্য বাইরের যেকোনো নির্দেশ ও পরামর্শকে উপেক্ষা করে সর্বোত্তম ভর্তি ও নিয়োগ ব্যবস্থাটি এখানে গড়ে তুলবেন? এ দেশের প্রায় নিরক্ষর কৃষক খরা, বন্যা, ভূমির মালিকানাহীনতা ও নানাবিধ প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে গত পঞ্চাশ বছরে দেশের খাদ্যোৎপাদনকে প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বাড়িয়েছেন। আর আপনারা এত শিক্ষা-দীক্ষা ও রাষ্ট্রের নানা আনুকূল্য নিয়েও এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গত পঞ্চাশ বছরের আগের অবস্থার চেয়েও পিছিয়ে দিলেন?
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে