সম্পাদকীয়
এবারের কোরবানির ঈদ বাংলাদেশের মুসলমানের জন্য অত্যন্ত মর্যাদা এনে দিয়েছে। কারণ, একটি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি নয়, তিনটি গরু ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ধানমন্ডি এলাকার এক ব্যক্তি কিনেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের নামকরা অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে। যিনি কিনেছেন, তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য বিক্রেতার দাবি, গরুটির দাম কোটি টাকা হওয়ার কারণ এর বংশমর্যাদা। বাংলাদেশে বংশপরিচয় দেখে গরু-ছাগল বিক্রি হবে, তা বছর দুয়েক আগেও কেউ চিন্তা করতে পারেনি। আমরা বিশ্বে একটি সমঝদার জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতে যাচ্ছি।
ছোটবেলায় শিক্ষকের মর্যাদা, পোশাকের মর্যাদা অনেকে পড়েছি। সে অনেক দিন আগের মোগল বাদশাহ আলমগীর আর পারস্যের কবি শেখ সাদির কথা। প্রাণীরও যে বংশমর্যাদা আছে, তার পূর্বপুরুষের যে সামাজিক মর্যাদা থাকতে পারে, তা নিয়ে কেউ কোনো গবেষণা করেছেন কি না, তা-ও অজানা। এই গরুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, ১১০ বছর আগে আমাদের এই ভারতবর্ষ থেকে এটির পূর্বপুরুষকে নেওয়া হয় আমেরিকায়। গরুটি যখন দুই মাস আগে প্রাণী প্রদর্শনী মেলায় তোলা হয়, তখন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কেউ কেউ আবার এই অ্যাগ্রো ফার্ম বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। তবে ওই ফার্মের স্বত্বাধিকারী বলেছেন, মানুষ না জেনেই শুধু শুধু সমালোচনা করছে। বিক্রেতা নাম না বললেও ক্রেতার প্রতিবেশীরা তো ঠিকই জেনে গেছেন। এই গরু যিনি কিনেছেন, তিনি আয়কর ঠিকমতো দেন কি না, তাঁর টাকার উৎস কী—এসব আর এখন কেউ জানতে চায় না। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সাদাটাকার মালিকদের কর ৩০ শতাংশ আর কালোটাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ।
অনেকের কোরবানির ঈদের দিন ভালো কাটলেও সাধারণ মানুষের ভালো কাটেনি। ছিন্নমূল মানুষের ঈদ কেমন কাটল, তা দেখতে সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিলাম ‘মাংসের হাটে’। তখনো জমে ওঠেনি কেনাবেচা। আধা ঘণ্টা পর পুরোপুরি জমে যায় এই হাট। যারা ঢাকায় থাকে না, তারা মাংসের হাটের সঙ্গে পরিচিত নয়। যারা গরিব ও দুস্থ, তারা কোরবানির দিন বাসায় বাসায় হেঁটে যে মাংসটুকু পায়, তা এই হাটে বিক্রির জন্য বসে থাকে।
কে কতটুকু মাংস পেয়েছে, সে বিষয়ে দু-চারজনের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি, তাদের একজন ছকিনা বেগম। বাড়ি জামালপুর জেলায়। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর বাড়ি নদীতে ভেঙেছে ১৫ বছর আগে। স্বামী মারা গেছেন ১৯ বছর আগে। তিন মেয়ে আর এক ছেলে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে আগেই। ছেলে জামালপুর শহরে রিকশা চালান। ছকিনা বেগম রাজধানীতে এসেছেন মূলত ভিক্ষা করতে। উঠেছেন এক নাতির বস্তির বাসায়। সারা দিনে পেয়েছেন দুই কেজি মাংস। তা-ই বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন মাংসের হাটে।
বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পান কি না, জিজ্ঞেস করতেই ছকিনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘বাবা রে, সে এক বিরাট ইতিহাস। আমরার গেরামের মেম্বরের দল করি না বইলা হ্যায় আমরারে কুনো কাড দেয় নাই। বুঝছুইন? কতবার হের ধারে গেছি, পত্তেকবার একই কতা কয়।’
সরকার বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ব্যবস্থা এবং এর আওতা বাড়ালেও সুফল সবাই পায় না। সেখানে অনেক ধরনের বিষয় কাজ করে। নানা ধরনের নয়ছয় হয়, সেসবের কিছু খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই। কিন্তু ছকিনাদের আক্ষেপের আর যেন শেষ নেই।
লেখক: আবদুল্লাহ জোয়ারদার, সংবাদকর্মী
এবারের কোরবানির ঈদ বাংলাদেশের মুসলমানের জন্য অত্যন্ত মর্যাদা এনে দিয়েছে। কারণ, একটি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি নয়, তিনটি গরু ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ধানমন্ডি এলাকার এক ব্যক্তি কিনেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের নামকরা অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে। যিনি কিনেছেন, তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য বিক্রেতার দাবি, গরুটির দাম কোটি টাকা হওয়ার কারণ এর বংশমর্যাদা। বাংলাদেশে বংশপরিচয় দেখে গরু-ছাগল বিক্রি হবে, তা বছর দুয়েক আগেও কেউ চিন্তা করতে পারেনি। আমরা বিশ্বে একটি সমঝদার জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতে যাচ্ছি।
ছোটবেলায় শিক্ষকের মর্যাদা, পোশাকের মর্যাদা অনেকে পড়েছি। সে অনেক দিন আগের মোগল বাদশাহ আলমগীর আর পারস্যের কবি শেখ সাদির কথা। প্রাণীরও যে বংশমর্যাদা আছে, তার পূর্বপুরুষের যে সামাজিক মর্যাদা থাকতে পারে, তা নিয়ে কেউ কোনো গবেষণা করেছেন কি না, তা-ও অজানা। এই গরুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, ১১০ বছর আগে আমাদের এই ভারতবর্ষ থেকে এটির পূর্বপুরুষকে নেওয়া হয় আমেরিকায়। গরুটি যখন দুই মাস আগে প্রাণী প্রদর্শনী মেলায় তোলা হয়, তখন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কেউ কেউ আবার এই অ্যাগ্রো ফার্ম বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। তবে ওই ফার্মের স্বত্বাধিকারী বলেছেন, মানুষ না জেনেই শুধু শুধু সমালোচনা করছে। বিক্রেতা নাম না বললেও ক্রেতার প্রতিবেশীরা তো ঠিকই জেনে গেছেন। এই গরু যিনি কিনেছেন, তিনি আয়কর ঠিকমতো দেন কি না, তাঁর টাকার উৎস কী—এসব আর এখন কেউ জানতে চায় না। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সাদাটাকার মালিকদের কর ৩০ শতাংশ আর কালোটাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ।
অনেকের কোরবানির ঈদের দিন ভালো কাটলেও সাধারণ মানুষের ভালো কাটেনি। ছিন্নমূল মানুষের ঈদ কেমন কাটল, তা দেখতে সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিলাম ‘মাংসের হাটে’। তখনো জমে ওঠেনি কেনাবেচা। আধা ঘণ্টা পর পুরোপুরি জমে যায় এই হাট। যারা ঢাকায় থাকে না, তারা মাংসের হাটের সঙ্গে পরিচিত নয়। যারা গরিব ও দুস্থ, তারা কোরবানির দিন বাসায় বাসায় হেঁটে যে মাংসটুকু পায়, তা এই হাটে বিক্রির জন্য বসে থাকে।
কে কতটুকু মাংস পেয়েছে, সে বিষয়ে দু-চারজনের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি, তাদের একজন ছকিনা বেগম। বাড়ি জামালপুর জেলায়। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর বাড়ি নদীতে ভেঙেছে ১৫ বছর আগে। স্বামী মারা গেছেন ১৯ বছর আগে। তিন মেয়ে আর এক ছেলে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে আগেই। ছেলে জামালপুর শহরে রিকশা চালান। ছকিনা বেগম রাজধানীতে এসেছেন মূলত ভিক্ষা করতে। উঠেছেন এক নাতির বস্তির বাসায়। সারা দিনে পেয়েছেন দুই কেজি মাংস। তা-ই বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন মাংসের হাটে।
বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পান কি না, জিজ্ঞেস করতেই ছকিনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘বাবা রে, সে এক বিরাট ইতিহাস। আমরার গেরামের মেম্বরের দল করি না বইলা হ্যায় আমরারে কুনো কাড দেয় নাই। বুঝছুইন? কতবার হের ধারে গেছি, পত্তেকবার একই কতা কয়।’
সরকার বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ব্যবস্থা এবং এর আওতা বাড়ালেও সুফল সবাই পায় না। সেখানে অনেক ধরনের বিষয় কাজ করে। নানা ধরনের নয়ছয় হয়, সেসবের কিছু খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই। কিন্তু ছকিনাদের আক্ষেপের আর যেন শেষ নেই।
লেখক: আবদুল্লাহ জোয়ারদার, সংবাদকর্মী
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
২ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪