Ajker Patrika

গরুর বংশমর্যাদা এবং ছকিনাদের ঈদ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ০৭: ৫০
গরুর বংশমর্যাদা এবং ছকিনাদের ঈদ

এবারের কোরবানির ঈদ বাংলাদেশের মুসলমানের জন্য অত্যন্ত মর্যাদা এনে দিয়েছে। কারণ, একটি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি নয়, তিনটি গরু ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ধানমন্ডি এলাকার এক ব্যক্তি কিনেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের নামকরা অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে। যিনি কিনেছেন, তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য বিক্রেতার দাবি, গরুটির দাম কোটি টাকা হওয়ার কারণ এর বংশমর্যাদা। বাংলাদেশে বংশপরিচয় দেখে গরু-ছাগল বিক্রি হবে, তা বছর দুয়েক আগেও কেউ চিন্তা করতে পারেনি। আমরা বিশ্বে একটি সমঝদার জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতে যাচ্ছি।

ছোটবেলায় শিক্ষকের মর্যাদা, পোশাকের মর্যাদা অনেকে পড়েছি। সে অনেক দিন আগের মোগল বাদশাহ আলমগীর আর পারস্যের কবি শেখ সাদির কথা। প্রাণীরও যে বংশমর্যাদা আছে, তার পূর্বপুরুষের যে সামাজিক মর্যাদা থাকতে পারে, তা নিয়ে কেউ কোনো গবেষণা করেছেন কি না, তা-ও অজানা। এই গরুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, ১১০ বছর আগে আমাদের এই ভারতবর্ষ থেকে এটির পূর্বপুরুষকে নেওয়া হয় আমেরিকায়। গরুটি যখন দুই মাস আগে প্রাণী প্রদর্শনী মেলায় তোলা হয়, তখন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কেউ কেউ আবার এই অ্যাগ্রো ফার্ম বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। তবে ওই ফার্মের স্বত্বাধিকারী বলেছেন, মানুষ না জেনেই শুধু শুধু সমালোচনা করছে। বিক্রেতা নাম না বললেও ক্রেতার প্রতিবেশীরা তো ঠিকই জেনে গেছেন। এই গরু যিনি কিনেছেন, তিনি আয়কর ঠিকমতো দেন কি না, তাঁর টাকার উৎস কী—এসব আর এখন কেউ জানতে চায় না। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সাদাটাকার মালিকদের কর ৩০ শতাংশ আর কালোটাকার মালিকদের কর ১৫ শতাংশ। 

অনেকের কোরবানির ঈদের দিন ভালো কাটলেও সাধারণ মানুষের ভালো কাটেনি। ছিন্নমূল মানুষের ঈদ কেমন কাটল, তা দেখতে সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিলাম ‘মাংসের হাটে’। তখনো জমে ওঠেনি কেনাবেচা। আধা ঘণ্টা পর পুরোপুরি জমে যায় এই হাট। যারা ঢাকায় থাকে না, তারা মাংসের হাটের সঙ্গে পরিচিত নয়। যারা গরিব ও দুস্থ, তারা কোরবানির দিন বাসায় বাসায় হেঁটে যে মাংসটুকু পায়, তা এই হাটে বিক্রির জন্য বসে থাকে। 

কে কতটুকু মাংস পেয়েছে, সে বিষয়ে দু-চারজনের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি, তাদের একজন ছকিনা বেগম। বাড়ি জামালপুর জেলায়। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর বাড়ি নদীতে ভেঙেছে ১৫ বছর আগে। স্বামী মারা গেছেন ১৯ বছর আগে। তিন মেয়ে আর এক ছেলে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে আগেই। ছেলে জামালপুর শহরে রিকশা চালান। ছকিনা বেগম রাজধানীতে এসেছেন মূলত ভিক্ষা করতে। উঠেছেন এক নাতির বস্তির বাসায়। সারা দিনে পেয়েছেন দুই কেজি মাংস। তা-ই বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন মাংসের হাটে। 
বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পান কি না, জিজ্ঞেস করতেই ছকিনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘বাবা রে, সে এক বিরাট ইতিহাস। আমরার গেরামের মেম্বরের দল করি না বইলা হ্যায় আমরারে কুনো কাড দেয় নাই। বুঝছুইন? কতবার হের ধারে গেছি, পত্তেকবার একই কতা কয়।’ 

সরকার বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ব্যবস্থা এবং এর আওতা বাড়ালেও সুফল সবাই পায় না। সেখানে অনেক ধরনের বিষয় কাজ করে। নানা ধরনের নয়ছয় হয়, সেসবের কিছু খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই। কিন্তু ছকিনাদের আক্ষেপের আর যেন শেষ নেই।

লেখক: আবদুল্লাহ জোয়ারদার, সংবাদকর্মী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নবরাত্রির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষা, পিরিয়ডের কারণে পালন করতে না পেরে আত্মহত্যা

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, খই-মুড়ির মতো বোমা ফুটছে জাজিরায়

অটোতে ফেলে যাওয়া ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দিলেন কলেজছাত্র

পরকীয়া নিয়ে ঝগড়া, স্ত্রীর কাঠের আঘাতে স্বামী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত