মশা আর ছারপোকা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৪৭

জীবনানন্দ গবেষক ক্লিনটন বি সিলি ১৯৮১ সালে ড. আনিসুজ্জামানের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ভালো বাংলায় কথা বলতে পারতেন তিনি। জীবনানন্দের কবিতা অনুবাদ করে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। অনেকেই জানেন, তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল ‘জীবনানন্দ দাশ’। সেবার তিনি এসেছিলেন গবেষণার উপকরণ সংগ্রহের জন্য। ঠিক করেছিলেন ছয় মাস থাকবেন। তিন মাস ঢাকায়, তিন মাস চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসনে তখন থাকেন আনিসুজ্জামান। আনিসুজ্জামান তাঁর স্ত্রী সিদ্দিকা জামানকে বললেন, ‘ক্লিনটন বি সিলি আমাদের বাড়িতে থাকলে কোনো অসুবিধা হবে?’

সিদ্দিকা জামান জানালেন, অসুবিধা নেই। আনিসুজ্জামানের বাড়িতে খাবারদাবার রুটিনে বাঁধা। সকাল ৮টায় নাশতা, ২টায় দুপুরের খাবার, রাত ১০টায় ডিনার। খাওয়ার সময় হলে ডাকলেই ক্লিন্ট হাজির হতেন খাবারের টেবিলে। দেরি করতেন না। তিনি বাঙালিদের মতো হাত দিয়েই খেতেন। কাঁটা চামচ-ছুরির আবশ্যকতা ছিল না।

বাড়ির ছেলেমেয়েরা ক্লিনটন বি সিলিকে খুব পছন্দ করত। তারা তাঁকে ‘ক্লিন্ট চাচা’ নামে ডাকত। তিনিও শিশুদের সঙ্গে গল্প বলতে পছন্দ করতেন।

সে সময় আনিসুজ্জামানের আলজিয়ার্সে যাওয়ার কথা। আনিসুজ্জামান বাড়িতে না থাকলে ক্লিন্ট কীভাবে এই বাড়িতে থাকবেন, তা নিয়ে ভাবনায় পড়লেন। ঠিক করলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে কারও বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। কেউ একজন তাঁকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।

কিন্তু আনিসুজ্জামান বললেন, ‘আমি দেশের বাইরে যাব। কিন্তু আপনি আমার বাসায় থাকতে পারেন।’ সেভাবেই রফা হলো।

একদিন চট্টগ্রাম শহরে নাটক দেখে সেখানেই রাতটা কাটিয়েছিলেন ক্লিন্ট। পরদিন আনিসুজ্জামানের বাড়িতে ফেরার পর সিদ্দিকা জামান প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার বেড়ানো কেমন হলো?’

ক্লিন্টন বি সিলি বললেন, ‘রাতে মশারা আমায় উড়িয়ে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু ছারপোকাগুলো টেনে ধরে রেখেছিল। আমি একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম!’ 

সূত্র: সিদ্দিকা জামান, ‘আমার বিপুলা পৃথিবী’, পৃষ্ঠা ৪৮-৪৯ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত