ফারকোট

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪: ২৬

জ্যেষ্ঠ কন্যা মীনাক্ষী, মানে মিমির তখন এক বছর বয়স। বুদ্ধদেব বসু আর প্রতিভা বসু ঠিক করলেন সমুদ্রের কাছে যাবেন। লেখালেখি আর পড়াশোনায় বুদ্ধদেব বসুর তুলনা মেলা ভার, কিন্তু সন্তান পালনে তাঁর অসহায়ত্ব অবর্ণনীয়। স্নানঘরে প্রতিভা বসু গেলে শুনতে পেতেন বুদ্ধদেবের চিৎকার, ‘রানু, অ্যাই দেখো, খাট থেকে নামতে চাইছে, পড়ে গেলে আমি কী করব?’

রানু, মানে প্রতিভা চেঁচিয়ে বলতেন, ‘ধরে রাখো, ধরে রাখো!’

‘রানু, এই দ্যাখো, আমার হাত থেকে বই নিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে।’

‘কী আশ্চর্য, বইটা ওর হাত থেকে কেড়ে নিচ্ছ না কেন?’

এরপর অধৈর্য হয়ে বুদ্ধদেব বলছেন, ‘তোমার কি আর স্নান হয় না নাকি?...আমি আর রাখতে পারছি না। আমার চুল টানছে।’

এমন এক লোককে নিয়ে আসা হয়েছে ওয়ালটেয়ারে, সমুদ্র দেখতে। ঘোড়ার গাড়িওয়ালাকে বলা হলো, সমুদ্রের কাছাকাছি একটা হোটেল খুঁজে দিতে। হোটেলের নিচের তলার ঘরগুলো ছোট, বিশ্রী রকম অন্ধকার। পছন্দ হলো না। ওপরে নাকি একটা বড় ভালো ঘর আছে, কিন্তু দাম চড়া। সেই ঘরটাই পছন্দ হয়ে গেল। প্রশস্ত ঘরের সঙ্গে বারান্দা।

একজন আয়া ঠিক হলো, নাম সর্মা (সরমা)। সর্মাকে পেয়ে বুদ্ধদেব-প্রতিভা খুব খুশি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেল প্রতিভার দামি ফারকোটটা নেই।

ঠিক এ সময় দরজার বাইরে থেকে একটি কণ্ঠ শোনা গেল, ‘বুদ্ধদেব বাবু আছেন নাকি?’

পাশের ঘরের দুজন লোক এসেছেন বুদ্ধদেবের নাম শুনে। প্রতিভা তার ফারকোট হারানোর কথা বলতেই বোঝা গেল, লোক দুজনের একজন পুলিশের লোক! তিনি সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হলেন। তাঁর হাঁকডাকে ম্যানেজার পর্যন্ত চলে এল। লোকটি বললেন, ‘কোট হারালে আমি এই হোটেল তুলে দেব।’

একটু পর নিচতলা থেকে একজন কোটটা এনে বলল, ‘ওরা নিচের ঘরে রেখে এসেছিলেন ফারকোট।’ কথাটা হয়তো সত্য নয়।

পুলিশের লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলেও তাঁর নামটি মনে রাখতে পারেননি বুদ্ধদেব-প্রতিভা। 

সূত্র: প্রতিভা বসু, জীবনের জলছবি, পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৫ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত