মামুন আবদুল্লাহ ও বিভুরঞ্জন সরকার
আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন উপদেষ্টা সম্পাদক মামুন আব্দুল্লাহ ও সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার।
প্রথমেই আপনাকে আজকের পত্রিকা পক্ষ থেকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। আপনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের আগেও দুটো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। বন পরিবেশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এগুলোর মধ্যে কোনটিতে কাজ করতে ভালো লেগেছে?
ড. হাছান মাহমুদ: আমি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজ এনঞ্জয় করেছি। নিজের কাজকে উপভোগ করতে না পারলে, কাজ যদি পছন্দ না হয়, তবে কাজ ভালো করা যায় না। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাত মাস ছিলাম। সেখানে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। কাজকে এনজয় করেছি। এরপরে যখন আমাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেখানে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। কারণ পৃথিবীতে এখন ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি বা পরিবেশ কূটনীতি বলে একটা বিষয় আছে। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের পক্ষে ওকালতি করা, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা সহায়তা করেছে। আমি যেহেতু পরিবেশবিজ্ঞানের ছাত্র, পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে আমি মাস্টার্স করেছি, পিএইচডি করেছি, ছাত্রজীবনে আমি গ্রিনপিচ ইন্টারন্যাশনালের সদস্য ছিলাম, আমি একজন পরিবেশকর্মী। দলের আমি ১০ বছর পরিবেশ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সে কাজটিও আমি খুব যত্নসহকারে করেছি। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার আগে ছয় বছর দলের প্রচার সম্পাদকের কাজ করেছি। দলের প্রচার সম্পাদকের কাজ করার পর আমাকে সরকারের প্রচার বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আমার তরুণ বয়সে যখন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, এমনকি কলেজের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, তখন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভার মাইকিং করতাম। আমি একজন মাইকিং করা কর্মী। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের মাইকটি আমার হাতে দিয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের কাজটা আপনার মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়ে থাকে। কী বলবেন?
ড. হাছান মাহমুদ: আমরা কোনোভাবেই গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা বরং গণমাধ্যমকে প্রোমোট করছি, সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। আমরা সরকার গঠনের আগে ২০০৯ সালে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৪৫০, কিন্তু বর্তমানে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১২৫০। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল ১০টি, এখন ৩৫টি। কোথায় নিয়ন্ত্রণ দেখছেন?
বঙ্গবন্ধু ভিন্নমত পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার কি ভিন্নমত পছন্দ করে?
ড. হাছান মাহমুদ: অবশ্যই। আমরা একটি বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বাস করি। বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভিন্নমত থাকতে হয়, সমালোচনা থাকতে হয়। সমালোচনা ও ভিন্নমত ছাড়া বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা হয় না। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সমালোচনা সমাদৃত করেন, শোনেন। সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সমালোচনা যদি অন্ধের মতো হয়, বধিরের মতো হয়, সেটি ভিন্ন কথা। সমালোচনা কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সমালোচনাকে সমাদৃত করলে কাজ শুদ্ধ হয়, সুন্দর হয়। একটি দৃষ্টান্ত দিই। আমি যখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, তখন বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকা সরকারের অনেক সমালোচনা করত। পরিবেশ কোথায় বিপর্যস্ত হচ্ছে, সরকারের কোথায় নজর দেওয়া দরকার, কোথায় নজর দিচ্ছে না। এমনকি আমারও কার্টুন ছাপিয়েছে। কার্টুন তো ব্যঙ্গ করেই ছাপানো হয়। আমি সেই পত্রিকাকেও জাতীয় পরিবেশ পদক দিয়েছি। আপনারা জানেন এখন তৎপরতা তেমন দেখা না গেলেও একসময় বাপা (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে খুব ভালো ভূমিকা পালন করেছে। বাপা সরকারের অনেক সমালোচনা করেছে। সেই বাপাকেই আমি প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পরিবেশ পদকে পুরস্কার দিয়েছি। প্রতিবছর প্রেস কাউন্সিল থেকে একটি পত্রিকাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। আপনি খেয়াল করবেন, গত কয়েক বছরে যেসব পত্রিকা পুরস্কৃত হয়েছে তারা সবাই সরকারের সমালোচনা করেছে।
আপনি একজন পরিবেশকর্মী। আপনি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও এবার অংশগ্রহণ করেছেন। রামপালে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ, সে বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ড. হাছান মাহমুদ: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন থেকে ১২-১৪ কিলোমিটার দূরে এবং এটি তৈরি হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যার ফলে এতে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। জার্মানিতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। আমি যখন পরিবেশমন্ত্রী, তখন আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটি পরিদর্শন করার জন্য। কীভাবে পরিবেশভিত্তিক একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে পারে, সেটি দেখার জন্য আমি গিয়েছিলাম। জার্মানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাউন্ডারির পাশে ভুট্টাখেত এবং এর আধা কিলোমিটারের মধ্যে ঘন বন রয়েছে। সেখানে হরিণ আছে, অন্যান্য বন্য প্রাণী আছে। সেখানে যেমন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, আমাদের দেশেও তেমন হবে। এর ফলে কোনো কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে না। এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সুন্দরবন থেকেও অনেক দূরে হওয়ার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
আপনি তো দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবার আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখেছি। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আপনাদের পদক্ষেপ কী?
ড. হাছান মাহমুদ: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। আর কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছে; অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিকল্প আওয়ামী লীগ।
আপনারা অতীতে বলেছিলেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আসলে এটা হয় কি?
ড. হাছান মাহমুদ: গত নির্বাচনে তাঁদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করেছেন, তাঁদের এ বছর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনার বক্তব্য কী?
ড. হাছান মাহমুদ: তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের নাম পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের বাইরে থেকে কোনো নাম কেন্দ্রে আসেনি। তবে এমন হয়েছে তৃণমূল থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের নাম দেওয়া হয়নি।
আমরা দেখলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। যাঁরা বিশ্বাস করেন এ সরকারের সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁরাও এটি স্বীকার করেছেন। আগামী নির্বাচন কি এ রকমই হতে দেখব?
ড. হাছান মাহমুদ: আমি বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই স্বচ্ছ, সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর হবে। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনও ঠিক এমন হতে পারত যদি বিএনপি নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন প্রতিহত করার পথ বেছে না নিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনও আরও অনেক উৎসবমুখর হতো, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত যেনতেনভাবে নির্বাচনে না যেত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, নির্বাচনকে বিতর্কিত ও বানচাল করা।
বিএনপি তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলছে। সরকার কি তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো ভূমিকা পালন করবে?
ড. হাছান মাহমুদ: দেখুন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, এটা তাদের নিজস্ব দলীয় সিদ্ধান্ত। মওলানা ভাসানী সত্তরের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এটা তাঁর দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল, তাই বলে কি নির্বাচন বন্ধ হয়েছিল? এখন বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, এটাও তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা তো চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের রায়কে বিশ্বাস করে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বিএনপির জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন আত্মহননমূলক ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা বানচালের চেষ্টা করাও তাদের দলের জন্য বেশ ক্ষতি ডেকে এনেছে। এখনো যে নির্বাচনে না যাওয়া, নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত, তা তাদের জনবিচ্ছিন্ন করছে। তাদের তৃণমূলে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরাও হতাশ হচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন আইনের প্রশ্নটি যখন এসেছিল, তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন এবারও করা সম্ভব হবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম পজিশনটা বদলে গেল। যাঁরা সরকারের সমালোচক, তাঁরা বলছেন এটি দুরভিসন্ধিমূলক এবং এতে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?
ড. হাছান মাহমুদ: যদি স্বয়ং জিবরাইল ফেরেশতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয় তারপরও বিএনপি খুশি হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জিবরাইল (আ.) বিএনপিকে জেতানোর নিশ্চয়তা না দেবেন! এখানে বিএনপিই বলেছিল, আইন তৈরি করতে বেশি সময় লাগবে না। দুই দিনেই করা যায়। আর সুশীল সমাজের যাঁরা এখন উল্টো স্বরে কথা বলছেন, আইন আনার আগের ও পরের তাঁদের ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে আছে। বিএনপির ভিডিও ক্লিপও আমাদের কাছে আছে। তাঁরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আগে বলেছিলেন, দরকার হলে এই আইন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ দিয়ে করে ফেলেন। ওনাদের একজন এ-ও বলেছিলেন ১৫ দিনেও আইন করা যায়। এখন তো ১৫ দিনে নয়, আরও বেশি সময় নিয়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সংসদের মাধ্যমে নিয়ম মেনে এই আইন তৈরি করা হয়েছে। এই আইনকে তাঁদের স্বাগত জানানো উচিত। আসলে তাঁরা এটিকে একটি ইস্যু বানাতে চেয়েছিলেন। সবকিছুতে না বলার একটি বাতিক তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
আপনি কি মনে করেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেওয়া উচিত?
ড. হাছান মাহমুদ: বেগম খালেদা জিয়া যখনই অসুস্থ হন, তখনই বিএনপি ওনাকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর দাবি জানায়। এর আগেও তিনি আরেকবার অসুস্থ হয়েছিলেন, তখনো বলেছিল খালেদা জিয়াকে বিদেশ না নিলে ওনার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে, তিনি বাঁচবেন কি না, সন্দেহ আছে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। এবারও তাঁরা বলছিলেন যে খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। কিন্তু এখন আর এ কথা বলেন না। কিন্তু তাঁকে এখন আইসিইউ থেকে এইচডিইউ এবং সেখান থেকে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ অনেকটা। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এবং বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের দেশের ব্রিলিয়ান্ট ডাক্তারদের চিকিৎসায় খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবেন। তাঁদের যে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার দাবি, আমরা যদি সে ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে এটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে র্যাব নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। র্যাব তো সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান। র্যাবের বিরুদ্ধে আনা এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের দায় সরকার, নাকি র্যাবের?
ড. হাছান মাহমুদ: র্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৪ সালে। তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে কারিগরিসহ নানা সহায়তা দিয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক দমনে র্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক উন্নত দেশ যেখানে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারেনি, সেখানে র্যাবের সাহায্যে আমরা সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছি। মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। র্যাবের বিরুদ্ধে এখন যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা শুরু থেকেই ছিল। র্যাব প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এ অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে রয়েছে। এসব জেনেই কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে সহায়তা করেছে। তখন এসব কথা আসেনি কেন? এখন কেন এসব প্রশ্ন আসছে? র্যাবের সাতজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার এক সপ্তাহের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও র্যাবের প্রশংসা করেছে।...র্যাব জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
ড. হাছান মাহমুদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দেশটি অব্যাহতভাবে আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। এই যে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা, সেটিকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। কারণ এক সপ্তাহ পরেই র্যাবের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমি মনে করি র্যাব নিয়ে যে ভুল-বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছে, তা নিরসন হয়ে যাবে।
আপনি মন্ত্রিত্ব এবং রাজনীতির বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। কোনটি বেশি ভালো লাগে?
ড. হাছান মাহমুদ: রাজনীতি আমি ছোটবেলা থেকেই করি। আবার শিক্ষকতাও আমি খুব উপভোগ করি। অনেক সময় মনে হয় ফুল টাইম যদি শিক্ষকতা করতে পারতাম। দুটোই আমি এনজয় করি।
সরকারের কোনো একটা অসাফল্য বা ব্যর্থতা কি আপনি দেখেন, যা দূর করা হলে মানুষের মধ্যে উৎসাহ আরও বাড়বে?
ড. হাছান মাহমুদ: পৃথিবীর কোনো সরকার অতীতে বা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারেনি, এখনো পারে না, ভবিষ্যতেও একেবারে নির্ভুল কাজ পৃথিবীর কোনো সরকার করতে পারবে না। যেকোনো সরকারের কাজে কিছুটা হলেও ভুলত্রুটি থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। সেটা যদি না হয় তাহলে সরকার তো ফেরেশতার পর্যায়ে চলে যাবে। সেটা তো সম্ভব না। আমাদের সরকারের যে ভুল নেই তা নয়। তবে আমাদের সরকারের ভুল যেটুকু আছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি সাফল্য। আজকে রাষ্ট্র কোথায় গেছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত ছিলাম। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলার পরিবর্তে নৌকা চলত। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতে বড় লঞ্চডুবি হতো। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন সাইক্লোনে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতো। এখন বিশ্ব সংবাদ হয় বাংলাদেশ...এখন বিশ্ব সংবাদ হয় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আমাদের যুব ফুটবল, যুব ক্রিকেটাররা যখন চ্যাম্পিয়ন হয়। আর নারী ক্রিকেট টিম যখন এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়। তখন আমরা বিশ্ব সংবাদ হই। আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে, খাদ্যঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে। আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাদের দেশ ৯২তম। কিন্তু ধান উৎপাদনের দিক থেকে আমাদের দেশ সারা বিশ্বে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। এটি কোনো জাদুর কারণে হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে হয়েছে। আমাদেরও ভুলত্রুটি আছে। তাই আমরা সমালোচনা পছন্দ করি, সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিকে লালন করি।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. হাছান মাহমুদ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন উপদেষ্টা সম্পাদক মামুন আব্দুল্লাহ ও সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার।
প্রথমেই আপনাকে আজকের পত্রিকা পক্ষ থেকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। আপনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের আগেও দুটো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। বন পরিবেশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এগুলোর মধ্যে কোনটিতে কাজ করতে ভালো লেগেছে?
ড. হাছান মাহমুদ: আমি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজ এনঞ্জয় করেছি। নিজের কাজকে উপভোগ করতে না পারলে, কাজ যদি পছন্দ না হয়, তবে কাজ ভালো করা যায় না। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাত মাস ছিলাম। সেখানে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। কাজকে এনজয় করেছি। এরপরে যখন আমাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেখানে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। কারণ পৃথিবীতে এখন ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি বা পরিবেশ কূটনীতি বলে একটা বিষয় আছে। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের পক্ষে ওকালতি করা, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা সহায়তা করেছে। আমি যেহেতু পরিবেশবিজ্ঞানের ছাত্র, পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে আমি মাস্টার্স করেছি, পিএইচডি করেছি, ছাত্রজীবনে আমি গ্রিনপিচ ইন্টারন্যাশনালের সদস্য ছিলাম, আমি একজন পরিবেশকর্মী। দলের আমি ১০ বছর পরিবেশ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সে কাজটিও আমি খুব যত্নসহকারে করেছি। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার আগে ছয় বছর দলের প্রচার সম্পাদকের কাজ করেছি। দলের প্রচার সম্পাদকের কাজ করার পর আমাকে সরকারের প্রচার বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আমার তরুণ বয়সে যখন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, এমনকি কলেজের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, তখন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভার মাইকিং করতাম। আমি একজন মাইকিং করা কর্মী। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের মাইকটি আমার হাতে দিয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের কাজটা আপনার মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়ে থাকে। কী বলবেন?
ড. হাছান মাহমুদ: আমরা কোনোভাবেই গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা বরং গণমাধ্যমকে প্রোমোট করছি, সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। আমরা সরকার গঠনের আগে ২০০৯ সালে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৪৫০, কিন্তু বর্তমানে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১২৫০। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল ১০টি, এখন ৩৫টি। কোথায় নিয়ন্ত্রণ দেখছেন?
বঙ্গবন্ধু ভিন্নমত পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার কি ভিন্নমত পছন্দ করে?
ড. হাছান মাহমুদ: অবশ্যই। আমরা একটি বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বাস করি। বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভিন্নমত থাকতে হয়, সমালোচনা থাকতে হয়। সমালোচনা ও ভিন্নমত ছাড়া বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা হয় না। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সমালোচনা সমাদৃত করেন, শোনেন। সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সমালোচনা যদি অন্ধের মতো হয়, বধিরের মতো হয়, সেটি ভিন্ন কথা। সমালোচনা কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সমালোচনাকে সমাদৃত করলে কাজ শুদ্ধ হয়, সুন্দর হয়। একটি দৃষ্টান্ত দিই। আমি যখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, তখন বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকা সরকারের অনেক সমালোচনা করত। পরিবেশ কোথায় বিপর্যস্ত হচ্ছে, সরকারের কোথায় নজর দেওয়া দরকার, কোথায় নজর দিচ্ছে না। এমনকি আমারও কার্টুন ছাপিয়েছে। কার্টুন তো ব্যঙ্গ করেই ছাপানো হয়। আমি সেই পত্রিকাকেও জাতীয় পরিবেশ পদক দিয়েছি। আপনারা জানেন এখন তৎপরতা তেমন দেখা না গেলেও একসময় বাপা (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে খুব ভালো ভূমিকা পালন করেছে। বাপা সরকারের অনেক সমালোচনা করেছে। সেই বাপাকেই আমি প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পরিবেশ পদকে পুরস্কার দিয়েছি। প্রতিবছর প্রেস কাউন্সিল থেকে একটি পত্রিকাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। আপনি খেয়াল করবেন, গত কয়েক বছরে যেসব পত্রিকা পুরস্কৃত হয়েছে তারা সবাই সরকারের সমালোচনা করেছে।
আপনি একজন পরিবেশকর্মী। আপনি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও এবার অংশগ্রহণ করেছেন। রামপালে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ, সে বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ড. হাছান মাহমুদ: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন থেকে ১২-১৪ কিলোমিটার দূরে এবং এটি তৈরি হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যার ফলে এতে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। জার্মানিতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। আমি যখন পরিবেশমন্ত্রী, তখন আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটি পরিদর্শন করার জন্য। কীভাবে পরিবেশভিত্তিক একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে পারে, সেটি দেখার জন্য আমি গিয়েছিলাম। জার্মানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাউন্ডারির পাশে ভুট্টাখেত এবং এর আধা কিলোমিটারের মধ্যে ঘন বন রয়েছে। সেখানে হরিণ আছে, অন্যান্য বন্য প্রাণী আছে। সেখানে যেমন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, আমাদের দেশেও তেমন হবে। এর ফলে কোনো কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে না। এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সুন্দরবন থেকেও অনেক দূরে হওয়ার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
আপনি তো দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবার আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখেছি। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আপনাদের পদক্ষেপ কী?
ড. হাছান মাহমুদ: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। আর কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছে; অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিকল্প আওয়ামী লীগ।
আপনারা অতীতে বলেছিলেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আসলে এটা হয় কি?
ড. হাছান মাহমুদ: গত নির্বাচনে তাঁদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করেছেন, তাঁদের এ বছর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনার বক্তব্য কী?
ড. হাছান মাহমুদ: তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের নাম পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের বাইরে থেকে কোনো নাম কেন্দ্রে আসেনি। তবে এমন হয়েছে তৃণমূল থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্রতিনিধিদের নাম দেওয়া হয়নি।
আমরা দেখলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। যাঁরা বিশ্বাস করেন এ সরকারের সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁরাও এটি স্বীকার করেছেন। আগামী নির্বাচন কি এ রকমই হতে দেখব?
ড. হাছান মাহমুদ: আমি বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই স্বচ্ছ, সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর হবে। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনও ঠিক এমন হতে পারত যদি বিএনপি নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন প্রতিহত করার পথ বেছে না নিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনও আরও অনেক উৎসবমুখর হতো, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত যেনতেনভাবে নির্বাচনে না যেত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, নির্বাচনকে বিতর্কিত ও বানচাল করা।
বিএনপি তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলছে। সরকার কি তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো ভূমিকা পালন করবে?
ড. হাছান মাহমুদ: দেখুন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, এটা তাদের নিজস্ব দলীয় সিদ্ধান্ত। মওলানা ভাসানী সত্তরের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এটা তাঁর দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল, তাই বলে কি নির্বাচন বন্ধ হয়েছিল? এখন বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, এটাও তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা তো চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের রায়কে বিশ্বাস করে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বিএনপির জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন আত্মহননমূলক ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা বানচালের চেষ্টা করাও তাদের দলের জন্য বেশ ক্ষতি ডেকে এনেছে। এখনো যে নির্বাচনে না যাওয়া, নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত, তা তাদের জনবিচ্ছিন্ন করছে। তাদের তৃণমূলে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরাও হতাশ হচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন আইনের প্রশ্নটি যখন এসেছিল, তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন এবারও করা সম্ভব হবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম পজিশনটা বদলে গেল। যাঁরা সরকারের সমালোচক, তাঁরা বলছেন এটি দুরভিসন্ধিমূলক এবং এতে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?
ড. হাছান মাহমুদ: যদি স্বয়ং জিবরাইল ফেরেশতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয় তারপরও বিএনপি খুশি হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জিবরাইল (আ.) বিএনপিকে জেতানোর নিশ্চয়তা না দেবেন! এখানে বিএনপিই বলেছিল, আইন তৈরি করতে বেশি সময় লাগবে না। দুই দিনেই করা যায়। আর সুশীল সমাজের যাঁরা এখন উল্টো স্বরে কথা বলছেন, আইন আনার আগের ও পরের তাঁদের ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে আছে। বিএনপির ভিডিও ক্লিপও আমাদের কাছে আছে। তাঁরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আগে বলেছিলেন, দরকার হলে এই আইন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ দিয়ে করে ফেলেন। ওনাদের একজন এ-ও বলেছিলেন ১৫ দিনেও আইন করা যায়। এখন তো ১৫ দিনে নয়, আরও বেশি সময় নিয়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সংসদের মাধ্যমে নিয়ম মেনে এই আইন তৈরি করা হয়েছে। এই আইনকে তাঁদের স্বাগত জানানো উচিত। আসলে তাঁরা এটিকে একটি ইস্যু বানাতে চেয়েছিলেন। সবকিছুতে না বলার একটি বাতিক তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
আপনি কি মনে করেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেওয়া উচিত?
ড. হাছান মাহমুদ: বেগম খালেদা জিয়া যখনই অসুস্থ হন, তখনই বিএনপি ওনাকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর দাবি জানায়। এর আগেও তিনি আরেকবার অসুস্থ হয়েছিলেন, তখনো বলেছিল খালেদা জিয়াকে বিদেশ না নিলে ওনার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে, তিনি বাঁচবেন কি না, সন্দেহ আছে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। এবারও তাঁরা বলছিলেন যে খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। কিন্তু এখন আর এ কথা বলেন না। কিন্তু তাঁকে এখন আইসিইউ থেকে এইচডিইউ এবং সেখান থেকে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ অনেকটা। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এবং বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের দেশের ব্রিলিয়ান্ট ডাক্তারদের চিকিৎসায় খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবেন। তাঁদের যে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার দাবি, আমরা যদি সে ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে এটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে র্যাব নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। র্যাব তো সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান। র্যাবের বিরুদ্ধে আনা এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের দায় সরকার, নাকি র্যাবের?
ড. হাছান মাহমুদ: র্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৪ সালে। তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে কারিগরিসহ নানা সহায়তা দিয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক দমনে র্যাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক উন্নত দেশ যেখানে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারেনি, সেখানে র্যাবের সাহায্যে আমরা সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছি। মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। র্যাবের বিরুদ্ধে এখন যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা শুরু থেকেই ছিল। র্যাব প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এ অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে রয়েছে। এসব জেনেই কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে সহায়তা করেছে। তখন এসব কথা আসেনি কেন? এখন কেন এসব প্রশ্ন আসছে? র্যাবের সাতজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার এক সপ্তাহের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও র্যাবের প্রশংসা করেছে।...র্যাব জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
ড. হাছান মাহমুদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দেশটি অব্যাহতভাবে আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। এই যে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা, সেটিকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। কারণ এক সপ্তাহ পরেই র্যাবের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমি মনে করি র্যাব নিয়ে যে ভুল-বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছে, তা নিরসন হয়ে যাবে।
আপনি মন্ত্রিত্ব এবং রাজনীতির বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। কোনটি বেশি ভালো লাগে?
ড. হাছান মাহমুদ: রাজনীতি আমি ছোটবেলা থেকেই করি। আবার শিক্ষকতাও আমি খুব উপভোগ করি। অনেক সময় মনে হয় ফুল টাইম যদি শিক্ষকতা করতে পারতাম। দুটোই আমি এনজয় করি।
সরকারের কোনো একটা অসাফল্য বা ব্যর্থতা কি আপনি দেখেন, যা দূর করা হলে মানুষের মধ্যে উৎসাহ আরও বাড়বে?
ড. হাছান মাহমুদ: পৃথিবীর কোনো সরকার অতীতে বা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারেনি, এখনো পারে না, ভবিষ্যতেও একেবারে নির্ভুল কাজ পৃথিবীর কোনো সরকার করতে পারবে না। যেকোনো সরকারের কাজে কিছুটা হলেও ভুলত্রুটি থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। সেটা যদি না হয় তাহলে সরকার তো ফেরেশতার পর্যায়ে চলে যাবে। সেটা তো সম্ভব না। আমাদের সরকারের যে ভুল নেই তা নয়। তবে আমাদের সরকারের ভুল যেটুকু আছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি সাফল্য। আজকে রাষ্ট্র কোথায় গেছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত ছিলাম। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলার পরিবর্তে নৌকা চলত। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতে বড় লঞ্চডুবি হতো। বিশ্ব সংবাদ হতাম, যখন সাইক্লোনে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতো। এখন বিশ্ব সংবাদ হয় বাংলাদেশ...এখন বিশ্ব সংবাদ হয় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আমাদের যুব ফুটবল, যুব ক্রিকেটাররা যখন চ্যাম্পিয়ন হয়। আর নারী ক্রিকেট টিম যখন এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়। তখন আমরা বিশ্ব সংবাদ হই। আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে, খাদ্যঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে। আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাদের দেশ ৯২তম। কিন্তু ধান উৎপাদনের দিক থেকে আমাদের দেশ সারা বিশ্বে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। এটি কোনো জাদুর কারণে হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে হয়েছে। আমাদেরও ভুলত্রুটি আছে। তাই আমরা সমালোচনা পছন্দ করি, সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিকে লালন করি।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. হাছান মাহমুদ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে