যানজট

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৩৪
Thumbnail image

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর এক বিজয় দিবসে সৈয়দ হক সস্ত্রীক বেরিয়েছিলেন শহর দেখতে। এরপর এক বন্ধু-দম্পতির গাড়িতে করে রওনা হয়েছিলেন নয়ারহাটে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের পথে। কিন্তু বিধি বাম। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা পৌঁছালেন কেবল আমিনবাজারে। তখনো অনেক পথ বাকি। গাড়ি আর এগোয় না।

কর্ণ নদীর ওপর যে ব্রিজটি, সেটি মেরামত করা হচ্ছে। ফলে একটা বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে চলছে গাড়ি। ব্রিজটি সংকীর্ণ। একটির বেশি গাড়ি তাতে পার হতে পারে না। এর ফলে মহা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরছিল ঢাকার দিকে, তারা বেইলি ব্রিজের কর্তৃত্ব ছাড়তে চাইছিল না; অর্থাৎ নয়ারহাটের দিক থেকে আসা গাড়িগুলোই কেবল ব্রিজ পার হচ্ছিল। এরই মধ্যে ঢাকাগামী একটি বাস পড়ে গেল রাস্তার পাশে গভীর খাদে। সে এক বিতিকিচ্ছির ব্যাপার।

এই ভীষণ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে এলেন সৈয়দ শামসুল হক। দেখলেন, স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরতে থাকা বাস ও ট্রাক ব্রিজ দিয়ে আসছে। তারা নয়ারহাটগামী বাস, ট্রাক, গাড়িকে ব্রিজে উঠতেই দেবে না। সৈয়দ হক একজন ছাত্রকে বললেন, ‘একেক দিক থেকে দশটা করে গাড়ি ছাড়ুন। নইলে ভয়ানক যানজট লেগে যাবে!’

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া সেই যুবক বলে ওঠে, ‘আপনাদের অসুবিধা হবে, তাতে আমার কী?’

হতভম্ব হয়ে তরুণটির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শেষে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজে উঠে পড়েন। ব্রিজে একটি মাইক্রোবাসের দেখা পাওয়া গেল, যাতে করে একজন বড় দলের পরিচিত নেতা ফিরছেন। সৈয়দ হক তাঁকে বললেন, ‘আপনার কর্মীদের বলুন না, এই যানজট ছাড়াবার ব্যবস্থা করতে!’

নেতা পেছনে এক সমাজতান্ত্রিক প্রাচীন দলের গাড়ি দেখিয়ে বললেন, ‘ওই ওদের বলুন, ওরা পারবে।’

সেই সমাজতান্ত্রিক দলের ছেলেরাই কিন্তু দাঁড়িয়ে যায় যানজট ছাড়াতে!

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত