অয়ন রায় অংকন
জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্যাপন করে থাকেন।
সবচেয়ে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি মতে, খ্রিষ্টপূর্বে ১৫০৬ অব্দে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নেন মথুরার এক অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। বাসুদেব-দেবকীর ঘর আলোকিত করেঅষ্টমী তিথিতে অরাজকতার দিন অবসান করতে গভীর অন্ধকার রাতে জন্মগ্রহণ করেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বাসুদেব দেখলেন শিশুটির চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করে আছেন। নানা রকম মহামূল্য মণি-রত্নখচিত সব অলংকার তাঁর দেহে শোভা পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণই জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদের ঘরে।
বাসুদেব প্রণাম করে তাঁর বন্দনা শুরু করলেন। বাসুদেবের বন্দনার পর দেবকী প্রার্থনা শেষে একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করতে বললেন শ্রীকৃষ্ণকে। এর পর ঘটনাপরম্পরায় কৃষ্ণ-বধের নেশায় উন্মত্ত কংস মথুরায় মল্ল ক্রীড়ার আয়োজন করে। ক্রীড়া প্রাঙ্গণের সামনে পাগলা হাতি রাখা হয় কৃষ্ণকে পিষে মারার জন্য। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাজা কংস চানুর ও মুষ্টিক নামে দুই খ্যাতিমান মল্লবীরকে কৃষ্ণকে হত্যার জন্য উপস্থিত রাখেন।
অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন। তাঁর মুষ্টির আঘাতে মারা যায় হাতি, চানুর ও মুষ্টিক। হতভম্ব কংস রাজন্যবর্গ সেনাদল সহচর সবাইকে তাঁর পক্ষে অস্ত্রধারণ করতে বলেন, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। তখন নিরুপায় কংস যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে অস্ত্রধারণ করামাত্র কৃষ্ণ লৌহ মুষ্টির আঘাতে তাঁকে বধ করেন।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পাঠ ও কর্মকাণ্ড এই শিক্ষাই দেয়, অন্যায় করে কখনো পার পাওয়া যায় না। ন্যায়ের জয় অবশ্যম্ভাবী। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের পাশাপাশি এক শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন তথা জন্মাষ্টমী আমাদের মাঝে নিয়ে আসে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এক শুভ আনন্দময় বার্তা।
সমাজে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করে, ঠিক তখনই তাঁর আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। তিনি অর্জুনের মাধ্যমে গীতার ১৮টি অধ্যায়ে জাগতিক জ্ঞান, ধ্যান, কর্ম, বিভূতি, ভক্তি, মুক্তি, মোহ, যশ, খ্যাতি আর অর্থ-বিত্তের মায়াজাল, অন্যায়, অসত্য, পাপ আত্ম অহংকার, মোক্ষ লাভ প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান দান করেছেন। জীবকুলে তিনি সত্যের বাণী স্থাপন করেছেন।
বাঙালি কবি শেখ ফজলুল করিম লিখেছিলেন, ‘কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর!’ সত্যি, স্বর্গ, নরক বা পাতাল কোথায় জানি না। আকাশে না আমাদের পায়ের তলায়, মাটির অনেক নিচে? এটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার যে ‘মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।’ মর্ত্যেই স্বর্গ-নরক ও পাতাল অবস্থিত। ঈশ্বর বা দেবদেবীও আমাদের মধ্যেই আছেন; যেমন আছে নরকের ঘৃণ্য দানবেরা।
আরেকটি কথা, ‘গড ক্রিয়েটেড ম্যান’, অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর—কথাটি মেনে নিতে কোনো দ্বিধা যেমন নেই, (প্রকৃতির সমষ্টিগত ‘প্রাণশক্তি’র নামই তো ঈশ্বর) তেমনি মনে রাখতে হবে, মানুষই দেবতা বা দেবদেবীর স্রষ্টা। ঠাকুরের মূর্তি যাঁরা গড়েন, সেই ‘কুমোর’ বা মূর্তি-শিল্পীই তো সৃষ্টি করছেন, করেছেন কৃষ্ণ, গণেশ বা শিব, দুর্গা।
মানুষরূপে মর্ত্যে ভগবান অবতার শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের মিথটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে আমরা সেই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারি যে মানুষের মধ্যেই ভগবানের বাস। তাই তো আরেক বাঙালি সাধক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে যুগ যুগ ধরে যে যার বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সব মানুষ সমান মর্যাদা
ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম মনে করা হয়েছে।
হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকে অবদান রাখতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক—আজকের দিনে এই প্রত্যাশা।
লেখক: অয়ন রায় অংকন
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্যাপন করে থাকেন।
সবচেয়ে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি মতে, খ্রিষ্টপূর্বে ১৫০৬ অব্দে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নেন মথুরার এক অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। বাসুদেব-দেবকীর ঘর আলোকিত করেঅষ্টমী তিথিতে অরাজকতার দিন অবসান করতে গভীর অন্ধকার রাতে জন্মগ্রহণ করেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বাসুদেব দেখলেন শিশুটির চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করে আছেন। নানা রকম মহামূল্য মণি-রত্নখচিত সব অলংকার তাঁর দেহে শোভা পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণই জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদের ঘরে।
বাসুদেব প্রণাম করে তাঁর বন্দনা শুরু করলেন। বাসুদেবের বন্দনার পর দেবকী প্রার্থনা শেষে একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করতে বললেন শ্রীকৃষ্ণকে। এর পর ঘটনাপরম্পরায় কৃষ্ণ-বধের নেশায় উন্মত্ত কংস মথুরায় মল্ল ক্রীড়ার আয়োজন করে। ক্রীড়া প্রাঙ্গণের সামনে পাগলা হাতি রাখা হয় কৃষ্ণকে পিষে মারার জন্য। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাজা কংস চানুর ও মুষ্টিক নামে দুই খ্যাতিমান মল্লবীরকে কৃষ্ণকে হত্যার জন্য উপস্থিত রাখেন।
অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন। তাঁর মুষ্টির আঘাতে মারা যায় হাতি, চানুর ও মুষ্টিক। হতভম্ব কংস রাজন্যবর্গ সেনাদল সহচর সবাইকে তাঁর পক্ষে অস্ত্রধারণ করতে বলেন, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। তখন নিরুপায় কংস যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে অস্ত্রধারণ করামাত্র কৃষ্ণ লৌহ মুষ্টির আঘাতে তাঁকে বধ করেন।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পাঠ ও কর্মকাণ্ড এই শিক্ষাই দেয়, অন্যায় করে কখনো পার পাওয়া যায় না। ন্যায়ের জয় অবশ্যম্ভাবী। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের পাশাপাশি এক শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন তথা জন্মাষ্টমী আমাদের মাঝে নিয়ে আসে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এক শুভ আনন্দময় বার্তা।
সমাজে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করে, ঠিক তখনই তাঁর আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। তিনি অর্জুনের মাধ্যমে গীতার ১৮টি অধ্যায়ে জাগতিক জ্ঞান, ধ্যান, কর্ম, বিভূতি, ভক্তি, মুক্তি, মোহ, যশ, খ্যাতি আর অর্থ-বিত্তের মায়াজাল, অন্যায়, অসত্য, পাপ আত্ম অহংকার, মোক্ষ লাভ প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান দান করেছেন। জীবকুলে তিনি সত্যের বাণী স্থাপন করেছেন।
বাঙালি কবি শেখ ফজলুল করিম লিখেছিলেন, ‘কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর!’ সত্যি, স্বর্গ, নরক বা পাতাল কোথায় জানি না। আকাশে না আমাদের পায়ের তলায়, মাটির অনেক নিচে? এটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার যে ‘মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।’ মর্ত্যেই স্বর্গ-নরক ও পাতাল অবস্থিত। ঈশ্বর বা দেবদেবীও আমাদের মধ্যেই আছেন; যেমন আছে নরকের ঘৃণ্য দানবেরা।
আরেকটি কথা, ‘গড ক্রিয়েটেড ম্যান’, অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর—কথাটি মেনে নিতে কোনো দ্বিধা যেমন নেই, (প্রকৃতির সমষ্টিগত ‘প্রাণশক্তি’র নামই তো ঈশ্বর) তেমনি মনে রাখতে হবে, মানুষই দেবতা বা দেবদেবীর স্রষ্টা। ঠাকুরের মূর্তি যাঁরা গড়েন, সেই ‘কুমোর’ বা মূর্তি-শিল্পীই তো সৃষ্টি করছেন, করেছেন কৃষ্ণ, গণেশ বা শিব, দুর্গা।
মানুষরূপে মর্ত্যে ভগবান অবতার শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের মিথটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে আমরা সেই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারি যে মানুষের মধ্যেই ভগবানের বাস। তাই তো আরেক বাঙালি সাধক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে যুগ যুগ ধরে যে যার বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সব মানুষ সমান মর্যাদা
ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম মনে করা হয়েছে।
হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকে অবদান রাখতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক—আজকের দিনে এই প্রত্যাশা।
লেখক: অয়ন রায় অংকন
সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে