মহিউদ্দিন খান মোহন
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ কিংবা ১৯৭৩ সালে ‘নকল মানুষ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল। এ ধরনের আরও সিনেমা হয়েছে। যেমন ‘কে আসল কে নকল’, ‘নকল শাহজাদা’ ইত্যাদি। এই দুনিয়ায় আসল-নকলের অবস্থান পাশাপাশি। দ্বন্দ্বও চিরকালীন। কখনো কখনো আসলের চেয়ে নকল হয়ে ওঠে বেশি শক্তিশালী, দাপুটে। নকলের দাপটে আসল হয়ে পড়ে কোণঠাসা। আর প্রবল প্রতাপে নকল রাজত্ব করতে থাকে সমাজ-সংসারে। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘ত্যাগ’ সিনেমায় এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে একটি গান আছে—‘নকল মানুষ সেজে রে তুই করবি কত খেলা/ খেলা শেষে বেড়ে যাবে তোর বুকের জ্বালা/ করবি কী তখন রে মন, করবি কী তখন’। গানটির কলিতে শাশ্বত সত্যের বাণীই উচ্চারিত হয়েছে। কেননা, নকল বা অসত্য সাময়িকভাবে রাজত্ব করতে পারলেও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একসময় তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। সমস্ত বাগাড়ম্বর, দাপট মিশে যায় ধুলোয়। যারা নকল রূপ ধারণ করে মানুষের চোখে ধুলো দেয়, তাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে। তখন অপরাধের অন্তর্জ্বালায় তারা দগ্ধ হয়। মানুষ যখন থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে শুরু করেছে, আসল-নকলের এই দ্বন্দ্ব তখন থেকেই চলে আসছে। যদিও বলা হয়, আসল বা সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, তবে কোনো কোনো অসত্য বা নকল সমাজে পাকাপোক্ত জায়গা করে নেয়। তখন নকলের ভিড় এমনই প্রচণ্ড হয়ে ওঠে যে, আসলের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়।
আমাদের দেশে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি নতুন নয়। বহুকাল আগে থেকেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দেওয়া বা নকল পণ্য বাজারে সরবরাহের অপকর্মটি করে আসছেন। নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ আইনত দণ্ডনীয় হলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না। বরং বলা যায়, সাম্প্রতিককালে এর দাপট বহুলাংশে বেড়েছে। নকল পণ্যের এই দাপটের কথা সম্প্রতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না। কসমেটিকস থেকে শুরু করে শিশুখাদ্য—সবকিছু নকল হচ্ছে। এই তথ্যগুলো আমাদের দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।’ (আজকের পত্রিকা, ৩ জুন, ২০২৪)।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। বাজারে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ—সবই এখন নকল হচ্ছে। একসময় নকল পণ্যের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাড়ের জিঞ্জিরাকে দায়ী করা হতো। বলা হতো, সেখানেই নাকি সব ধরনের নকল পণ্য উৎপাদিত হয়। ‘জিঞ্জিরা মেড’ বা ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’ কথাগুলো তখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এখন নকল পণ্য উৎপাদনের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে। সবখানেই নকল পণ্যের কারখানার সন্ধান মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। এসব পণ্য দেখতে আসল পণ্যের মতোই, কিন্তু আসল নয়। পার্থক্যটা ধরা পড়ে গুণে। বিদেশি সাবান-শ্যাম্পু, লোশন-ক্রিম সবই তৈরি হচ্ছে আমাদের নকলবাজদের ফ্যাক্টরিতে। শিশুদের প্রিয় পানীয় ফলের জুস কোনটা নকল আর কোনটা আসল পার্থক্য করা কঠিন। পানির সঙ্গে নানা ধরনের কেমিক্যাল আর রং মিশিয়ে বানানো হয় অরেঞ্জ জুস, ম্যাঙ্গো জুস। এসব বিষাক্ত পানীয় পান করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের পীড়ায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নকল পণ্যবিরোধী অভিযানের কথা মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। কীভাবে নোংরা পরিবেশে ওরা এসব ‘সুস্বাদু’ জুস উৎপাদন করে, তার ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়। কখনো কখনো এই দুর্বৃত্ত চক্রের কেউ কেউ ধরাও পড়ে, কিন্তু দুর্বৃত্তপনার শেষ হয় না। আইনের ফাঁক গলে এই দুষ্টচক্রের সদস্যরা একসময় বেরিয়ে আসে মুক্ত হয়ে। এসে আবার নবোদ্যমে শুরু করে পুরোনো দুষ্কর্ম।
শুনেছি, উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যপণ্য বা জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল দেওয়াকে খুনের সমতুল্য অপরাধ গণ্য করা হয়। বিচারক একজন খুনিকে অবস্থা বিবেচনায় খালাস দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু খাদ্য বা ওষুধে ভেজালকারী অপরাধীকে কখনো নিষ্কৃতি দেওয়া হয় না। তাদের অপরাধ গণহত্যার শামিল। একজন খুনি এক বা দুজনকে খুন করতে পারে। কিন্তু ভেজাল ও নকল পণ্যের উৎপাদকেরা একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। তাদের কারণে অগণিত মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সে জন্যই আইনকে তাদের বেলায় কঠোর করা হয়েছে। নকল বা ভেজালবিরোধী আইন আমাদের দেশেও রয়েছে। তবে, তার কঠোরতা এই অপরাধ বন্ধের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয় না। যে কারণে এই অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
নকল পণ্যের মতো আমাদের সমাজে নকল মানুষের উপদ্রবও বেড়ে গেছে ইদানীং। আজকাল সামাজিক মাধ্যমে একটি কথা অনেকেই লেখেন—‘অমানুষ চেনার উপায় নেই। কারণ অমানুষগুলো দেখতে ঠিক মানুষেরই মতো।’ এক বর্ণও মিথ্যা বা অতিরঞ্জন নেই এ কথায়। বাহ্যিক রূপ, অর্থাৎ মুখ-চোখ-নাক দেখে কারও ভেতরটা বোঝা যায় না। হাসিমাখা মুখের অন্তরালে যে হিংস্রতা লুকিয়ে নেই কে বলবে? এখন আর কাউকে বিশ্বাস করার উপায় নেই। পাশে বসে থাকা অন্তরঙ্গ মানুষটি যে পরমুহূর্তে হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না, এর কোনো গ্যারান্টি নেই।
সমাজে চলছে নকল মানুষের রাজত্ব। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে ভুয়া পুলিশ, ভুয়া মেজর, ভুয়া সচিব ইত্যাদি গ্রেপ্তারের খবর আসে। তবে নকল সমাজসেবক, নকল রাজনীতিক গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায় না। অথচ তাদের দ্বারা আজ সমাজ ভরপুর। কথায় তারা মানবদরদি ও সমাজহিতৈষী, কাজে মুখোশ পরিহিত সমাজবিরোধী চক্রের অংশ। যে ব্যক্তি দিনের আলোয় মঞ্চে উঠে সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন, রাতের অন্ধকারে তিনিই হয়ে ওঠেন মাদক কিংবা সোনা চোরাচালানের গডফাদার। তাদের পরিহিত মুখোশ এতটাই নিখুঁত যে, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে একসময় বনে যান জনপ্রতিনিধি। কেউ কেউ হয়ে যান আইনপ্রণেতা।
সম্প্রতি আমাদের এমনই একজন আইনপ্রণেতা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। জাতীয় সংসদের ওই সদস্যের হত্যাকাণ্ডের যেসব কারণ এখন অবধি জানা গেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সোনা চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরেই তাঁর এই মর্মান্তিক পরিণতি। জানা গেছে, তিনি সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানিদের অভিভাবক ছিলেন। বহু মামলার আসামি ওই মরহুম এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশও জারি করেছিল। ২০১৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর সেই রেড নোটিশ বাতিলে সক্ষম হন তিনি। এহেন রেকর্ডের অধিকারী একজন বিতর্কিত মানুষ যখন দেশের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় সংসদের সদস্য হন, বুঝতে অসুবিধা হয় না নকলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুধু এই একজনই নন, আরও আছেন। তাঁদের কেউ খ্যাত ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে, কেউ খুনের মামলার আসামি। আবার কেউ নারী ও মানব পাচারের অভিযোগে বিদেশে দণ্ডিত হয়ে রয়েছেন চৌদ্দ শিকের অন্তরালে। অস্বীকার করা যাবে না, আমরাই এদের মর্যাদার ওই উঁচু আসনে বসার সুযোগ করে দিয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, যখন দায়িত্ববানেরা বলেন, সে আগে কী ছিল সেটা কোনো ব্যাপার না, তার জনপ্রিয়তা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, এসব নকল মানুষ কী করে আসল মানুষের সারিতে উঠে আসে।
নকল পণ্য যেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি নকল সমাজসেবী-নেতারাও সমাজ কলুষিত হওয়ার প্রধান কারণ। জনসচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগই এই উপদ্রব থেকে জাতির পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ কিংবা ১৯৭৩ সালে ‘নকল মানুষ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল। এ ধরনের আরও সিনেমা হয়েছে। যেমন ‘কে আসল কে নকল’, ‘নকল শাহজাদা’ ইত্যাদি। এই দুনিয়ায় আসল-নকলের অবস্থান পাশাপাশি। দ্বন্দ্বও চিরকালীন। কখনো কখনো আসলের চেয়ে নকল হয়ে ওঠে বেশি শক্তিশালী, দাপুটে। নকলের দাপটে আসল হয়ে পড়ে কোণঠাসা। আর প্রবল প্রতাপে নকল রাজত্ব করতে থাকে সমাজ-সংসারে। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘ত্যাগ’ সিনেমায় এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে একটি গান আছে—‘নকল মানুষ সেজে রে তুই করবি কত খেলা/ খেলা শেষে বেড়ে যাবে তোর বুকের জ্বালা/ করবি কী তখন রে মন, করবি কী তখন’। গানটির কলিতে শাশ্বত সত্যের বাণীই উচ্চারিত হয়েছে। কেননা, নকল বা অসত্য সাময়িকভাবে রাজত্ব করতে পারলেও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একসময় তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। সমস্ত বাগাড়ম্বর, দাপট মিশে যায় ধুলোয়। যারা নকল রূপ ধারণ করে মানুষের চোখে ধুলো দেয়, তাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে। তখন অপরাধের অন্তর্জ্বালায় তারা দগ্ধ হয়। মানুষ যখন থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে শুরু করেছে, আসল-নকলের এই দ্বন্দ্ব তখন থেকেই চলে আসছে। যদিও বলা হয়, আসল বা সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, তবে কোনো কোনো অসত্য বা নকল সমাজে পাকাপোক্ত জায়গা করে নেয়। তখন নকলের ভিড় এমনই প্রচণ্ড হয়ে ওঠে যে, আসলের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়।
আমাদের দেশে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি নতুন নয়। বহুকাল আগে থেকেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দেওয়া বা নকল পণ্য বাজারে সরবরাহের অপকর্মটি করে আসছেন। নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ আইনত দণ্ডনীয় হলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না। বরং বলা যায়, সাম্প্রতিককালে এর দাপট বহুলাংশে বেড়েছে। নকল পণ্যের এই দাপটের কথা সম্প্রতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না। কসমেটিকস থেকে শুরু করে শিশুখাদ্য—সবকিছু নকল হচ্ছে। এই তথ্যগুলো আমাদের দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।’ (আজকের পত্রিকা, ৩ জুন, ২০২৪)।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। বাজারে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ—সবই এখন নকল হচ্ছে। একসময় নকল পণ্যের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাড়ের জিঞ্জিরাকে দায়ী করা হতো। বলা হতো, সেখানেই নাকি সব ধরনের নকল পণ্য উৎপাদিত হয়। ‘জিঞ্জিরা মেড’ বা ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’ কথাগুলো তখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এখন নকল পণ্য উৎপাদনের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে। সবখানেই নকল পণ্যের কারখানার সন্ধান মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। এসব পণ্য দেখতে আসল পণ্যের মতোই, কিন্তু আসল নয়। পার্থক্যটা ধরা পড়ে গুণে। বিদেশি সাবান-শ্যাম্পু, লোশন-ক্রিম সবই তৈরি হচ্ছে আমাদের নকলবাজদের ফ্যাক্টরিতে। শিশুদের প্রিয় পানীয় ফলের জুস কোনটা নকল আর কোনটা আসল পার্থক্য করা কঠিন। পানির সঙ্গে নানা ধরনের কেমিক্যাল আর রং মিশিয়ে বানানো হয় অরেঞ্জ জুস, ম্যাঙ্গো জুস। এসব বিষাক্ত পানীয় পান করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের পীড়ায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নকল পণ্যবিরোধী অভিযানের কথা মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। কীভাবে নোংরা পরিবেশে ওরা এসব ‘সুস্বাদু’ জুস উৎপাদন করে, তার ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়। কখনো কখনো এই দুর্বৃত্ত চক্রের কেউ কেউ ধরাও পড়ে, কিন্তু দুর্বৃত্তপনার শেষ হয় না। আইনের ফাঁক গলে এই দুষ্টচক্রের সদস্যরা একসময় বেরিয়ে আসে মুক্ত হয়ে। এসে আবার নবোদ্যমে শুরু করে পুরোনো দুষ্কর্ম।
শুনেছি, উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যপণ্য বা জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল দেওয়াকে খুনের সমতুল্য অপরাধ গণ্য করা হয়। বিচারক একজন খুনিকে অবস্থা বিবেচনায় খালাস দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু খাদ্য বা ওষুধে ভেজালকারী অপরাধীকে কখনো নিষ্কৃতি দেওয়া হয় না। তাদের অপরাধ গণহত্যার শামিল। একজন খুনি এক বা দুজনকে খুন করতে পারে। কিন্তু ভেজাল ও নকল পণ্যের উৎপাদকেরা একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। তাদের কারণে অগণিত মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সে জন্যই আইনকে তাদের বেলায় কঠোর করা হয়েছে। নকল বা ভেজালবিরোধী আইন আমাদের দেশেও রয়েছে। তবে, তার কঠোরতা এই অপরাধ বন্ধের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয় না। যে কারণে এই অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
নকল পণ্যের মতো আমাদের সমাজে নকল মানুষের উপদ্রবও বেড়ে গেছে ইদানীং। আজকাল সামাজিক মাধ্যমে একটি কথা অনেকেই লেখেন—‘অমানুষ চেনার উপায় নেই। কারণ অমানুষগুলো দেখতে ঠিক মানুষেরই মতো।’ এক বর্ণও মিথ্যা বা অতিরঞ্জন নেই এ কথায়। বাহ্যিক রূপ, অর্থাৎ মুখ-চোখ-নাক দেখে কারও ভেতরটা বোঝা যায় না। হাসিমাখা মুখের অন্তরালে যে হিংস্রতা লুকিয়ে নেই কে বলবে? এখন আর কাউকে বিশ্বাস করার উপায় নেই। পাশে বসে থাকা অন্তরঙ্গ মানুষটি যে পরমুহূর্তে হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না, এর কোনো গ্যারান্টি নেই।
সমাজে চলছে নকল মানুষের রাজত্ব। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে ভুয়া পুলিশ, ভুয়া মেজর, ভুয়া সচিব ইত্যাদি গ্রেপ্তারের খবর আসে। তবে নকল সমাজসেবক, নকল রাজনীতিক গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায় না। অথচ তাদের দ্বারা আজ সমাজ ভরপুর। কথায় তারা মানবদরদি ও সমাজহিতৈষী, কাজে মুখোশ পরিহিত সমাজবিরোধী চক্রের অংশ। যে ব্যক্তি দিনের আলোয় মঞ্চে উঠে সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন, রাতের অন্ধকারে তিনিই হয়ে ওঠেন মাদক কিংবা সোনা চোরাচালানের গডফাদার। তাদের পরিহিত মুখোশ এতটাই নিখুঁত যে, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে একসময় বনে যান জনপ্রতিনিধি। কেউ কেউ হয়ে যান আইনপ্রণেতা।
সম্প্রতি আমাদের এমনই একজন আইনপ্রণেতা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। জাতীয় সংসদের ওই সদস্যের হত্যাকাণ্ডের যেসব কারণ এখন অবধি জানা গেছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সোনা চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরেই তাঁর এই মর্মান্তিক পরিণতি। জানা গেছে, তিনি সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানিদের অভিভাবক ছিলেন। বহু মামলার আসামি ওই মরহুম এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশও জারি করেছিল। ২০১৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর সেই রেড নোটিশ বাতিলে সক্ষম হন তিনি। এহেন রেকর্ডের অধিকারী একজন বিতর্কিত মানুষ যখন দেশের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় সংসদের সদস্য হন, বুঝতে অসুবিধা হয় না নকলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুধু এই একজনই নন, আরও আছেন। তাঁদের কেউ খ্যাত ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে, কেউ খুনের মামলার আসামি। আবার কেউ নারী ও মানব পাচারের অভিযোগে বিদেশে দণ্ডিত হয়ে রয়েছেন চৌদ্দ শিকের অন্তরালে। অস্বীকার করা যাবে না, আমরাই এদের মর্যাদার ওই উঁচু আসনে বসার সুযোগ করে দিয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, যখন দায়িত্ববানেরা বলেন, সে আগে কী ছিল সেটা কোনো ব্যাপার না, তার জনপ্রিয়তা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, এসব নকল মানুষ কী করে আসল মানুষের সারিতে উঠে আসে।
নকল পণ্য যেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি নকল সমাজসেবী-নেতারাও সমাজ কলুষিত হওয়ার প্রধান কারণ। জনসচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগই এই উপদ্রব থেকে জাতির পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে