গ্রেনেডের ছবি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৪৩

ফাঁদে আটকে পড়া জন্তুর মতোই ক্ষোভ ও নিজের প্রতি ধিক্কার নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন শামসুর রাহমান। ২৫ মার্চের পর ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন পাড়াতলী গ্রামে। সেখানে বসে লিখেছেন কবিতা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনতেন। এম আর আখতার মুকুলের চরমপত্র উদ্দীপিত করত তাঁদের।

এ সময় কমিউনিস্ট পার্টির মতিউর রহমান এসে হাজির হলেন চাদরে মাথা ঢেকে। জিজ্ঞেস করলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন, শামসুর রাহমান যাবেন কি না। 
শামসুর রাহমান বললেন, ‘আম্মার সঙ্গে কথা বলে নিতে চাই। তিনি অনুমতি দিলে যাব।’

মায়ের কাছে গিয়ে শামসুর রাহমান বললেন, ‘আমি কলকাতায় চলে যেতে চাই।’ মা বেদনার্ত কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি আমাদের ফেলে চলে যাবে?’

যেতে পারলেন না শামসুর রাহমান। দেড় মাস গ্রামে কাটানোর পর টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে গেল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মে মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় ফিরে উঠলেন নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত শ্বশুরবাড়িতে। তারপর শ্বশুর ও নানাজনের পরামর্শে যোগ দিলেন দৈনিক পাকিস্তানে।

সেখানেই আড্ডা হতো আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন, এখলাসউদ্দিন আহমদ, হেদায়েত হোসেন মোরশেদদের সঙ্গে। একদিন শামসুর রাহমান, হেদায়েত হোসেন মোরশেদ, ফজল শাহাবুদ্দীন আর কালাম মাহমুদ বসে আছেন অফিসরুমে। হেদায়েত হোসেন মোরশেদ শামসুর রাহমানের টেবিলে রাখা প্যাডে গোলাকার একটা নকশা আঁকলেন। ছবিটি শামসুর রাহমানের দিকে তুলে বললেন, ‘এই হাতবোমাটাই মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা শত্রুদের দিকে তুলে দেন।’

এরপর নিউজপ্রিন্টের প্যাডের পাতাটি দলা পাকিয়ে তিনি ফেলে দিলেন জানালার বাইরে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে কামরার দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল পাকিস্তানি এক অফিসার ও এক সৈন্য। অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, ‘এহা কোই গাদ্দার হ্যায়?’

ফজল শাহাবুদ্দীন ভালো উর্দু জানতেন। তিনি উর্দুতে যা বললেন, তার মর্মার্থ হলো—ওসব বালাই এই ঘরে কেন, সারা অফিসেই নেই।’

ওরা চলে গেল। আর সবার ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। একটু আগে এলেই হেদায়েত হোসেন মোরশেদের আঁকা গ্রেনেডের ছবিটা চোখে পড়ে যেত তাদের! 

সূত্র: শামসুর রাহমান গদ্যসংগ্রহ, পৃষ্ঠা ২৭০-২৭৪ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত