সংশয়ী জীবনানন্দ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩: ২৮

১৯৪৭ সালে দুর্গাপূজার কিছুদিন আগে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার চাকরিটা চলে যায় জীবনানন্দ দাশের। ১৯৫৩ সালের ১ জুলাই হাওড়া গার্লস কলেজে চাকরি পাওয়ার আগে প্রায় পাঁচ বছর তিনি ছিলেন বেকার। মাঝে খড়্গপুর কলেজে চার মাস এবং বড়িশা কলেজে ছয় মাস চাকরি করেছেন।

সে সময় কবিতা আর প্রবন্ধ লিখে টাকা আয় করা যেত না। গল্প-উপন্যাসে কিছু টাকা আসত। টিউশনি করতে চাইতেন, তাতে হাতে কিছু টাকা আসতে পারত। কিন্তু কোনো কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে টিউশনি পাননি। সে সময় অমল দত্তকে লিখেছিলেন কবি: ‘অমল, আমার টাকা চাই। বাঁচার মতো টাকা চাই। আমার একটা অপ্রকাশিত উপন্যাস আছে। মাল্যবান। সেটার চিত্ররূপ দেওয়া যায় না? আমি ভেবে পাই না, আমার যারা বন্ধুবান্ধব আছে চিত্রজগতে, কাহিনিকার-চিত্রনাট্যকার-ডিরেক্টর, টাকা রোজগার করছে, তারা কেন তাদের দলে আমাকে ভিড়িয়ে নিচ্ছে না?’

তার মানে, তাঁর উপন্যাস থেকে কাহিনি নিয়ে কেউ চিত্ররূপ দিলে যে টাকাটা পেতেন, তাতে তাঁর অভাব ঘুচত। কিন্তু সে সময় কেউ জীবনানন্দের গল্প বা উপন্যাস থেকে কাহিনি নিয়ে চিত্ররূপ দেননি।

কোন বন্ধুদের কথা বলছেন জীবনানন্দ দাশ?

তাঁদের একজন প্রেমেন্দ্র মিত্র। কল্লোল যুগের অন্যতম প্রতিনিধি। তাঁর তুখোড় কিশোর গল্প, ছোটগল্প আর কবিতা এখন পর্যন্ত মুগ্ধ করে রেখেছে পাঠককে। সেই প্রেমেন্দ্র মিত্র হঠাৎ করেই নাম লিখিয়েছিলেন চলচ্চিত্রজগতে। ‘পথ বেঁধে দিল’, ‘চুপি চুপি আসে’, ‘কুয়াশা’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের পরিচালক তিনি। বহু সিনেমার কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন। জীবনানন্দের কথা তিনি কেন ভাবেননি, সে প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যাবে না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, শৈলজারঞ্জনরাও তখন সিনেমার সঙ্গে যুক্ত।

অমল দত্তের কাছে পরামর্শ চাইছেন জীবনানন্দ, ‘প্রেমেন, শৈলজা সিনেমা করে, এদের বলব? বন্ধুমানুষ। বলা যায়?’

কে জানে, সংশয়ী জীবনানন্দ কোনো দিন বন্ধুদের সে কথা বলতে পেরেছিলেন কি না। 

সূত্র: গৌতম মিত্র, পাণ্ডুলিপি থেকে ডায়েরি, জীবনানন্দের খোঁজে, পৃষ্ঠা ৬৭-৬৮ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত