পাখিগুলো বাঁচবে তো?

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

প্রতিবছরই শীতকালে পরিযায়ী পাখিগুলো মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে এই পাখিগুলো উঠে আসে মানুষের খাবার টেবিলে। রসনা তৃপ্ত করার সময় কেউই ভাবে না, কেন শীতের এ সময়টিতে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসে ঠাঁই নেয় পাখিরা। কেন শীতের শেষের দিকে আবার পাড়ি দেয় শীতপ্রধান অঞ্চলে। নানাভাবে এই পাখিগুলোকে হত্যা না করার নির্দেশ দেওয়া হলেও মানছে কে?

পাবনার বেড়া উপজেলা থেকে একটি খবর এসেছে আজকের পত্রিকায়। বলা হচ্ছে, এখানে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে একটি চক্র অভিনব পন্থায় মৌসুমি পাখি শিকার করে চলেছে। নদী, হাওর, বিল, জলাশয়ে আসা বক, পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি। আর তাতে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এক জোড়া পাখির দাম হাঁকা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এত সস্তায় আমিষজাতীয় খাবার কোথায় পাবে মানুষ? তাই এই দামে পাখির মাংস পেয়ে কেউ আর আইনের তোয়াক্কা করছে না। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’।

অনেকেই জানেন, মূলত বর্ষা শেষে এবং শীতের আগমনী বার্তা আসার আগে থেকেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে থাকে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মার্চ মাসের দিকে গরম পড়া শুরু হলে তারা আবার ফিরে যায় নিজ গন্তব্যে। একসময় ধারণা করা হতো, সুদূর রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে এই পাখিরা আসে। তবে ইদানীং বলা হচ্ছে, সাইবেরিয়ার পাশাপাশি উত্তর মঙ্গোলিয়া, তিব্বতের একটি অংশ, চীন থেকেও পাখি আসে; অর্থাৎ এই পাখিরা উত্তর মেরু, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশ থেকে আসে। আসে হিমালয় পর্বতমালার আশপাশ থেকেও। সেসব জায়গায় যখন তীব্র শীত পড়ে, বরফে ঢেকে যায় মাটি, তখন পাখিদের খাদ্যাভাব হয়। সেই খাদ্যাভাব থেকে রেহাই পেতেই পাখিরা আমাদের দেশসহ ভারত, নেপালের কিছু অঞ্চলে চলে আসে। কিন্তু আমরা আইন ভঙ্গ করে এই পাখিদেরই আমাদের খাবারে পরিণত করি। বাংলাদেশে কেন আসে পাখিরা? শীতকালে থাকার উপযোগী পরিবেশ এখানে আছে বলেই আসে।স্বল্পকালীন আবাস গড়ে নেওয়া সহজ এখানে। এই অঞ্চলের কচি পাতা, শামুক, ঝিনুকের ভান্ডার পাখিদের বাঁচিয়ে রাখে।

পরিযায়ী পাখির জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে। পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ বলে আইন হয়েছে। এই আইন বা অভয়ারণ্য কতটা বাঁচাতে পারছে পাখিদের? রাস্তাঘাটে বন্দী পাখিদের নিয়ে বিক্রি করার দৃশ্য কি বিরল হয়েছে?

পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ, সে কথা জেনেও কেন মানুষ পাখি কেনে? একটা কারণ তো আর্থিক, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। আরও কারণ হলো, মানুষের বিবেকশূন্যতা, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া।

জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পরিযায়ী পাখিদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। কিন্তু কতভাবেই না পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে মানুষ! উন্নয়নের ধুয়া তুলেও চলছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আয়োজন। এর কুফল ভোগ করবে আগামী প্রজন্ম। আমরা কি সেই দায় নিতে পারব?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত