ইলিশ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ০৪

বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতায় ইলিশকে বলেছিলেন ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’। ইলিশের স্বাদ আর ঘ্রাণের সুখ্যাতি কে না করে? এই মাছটির সঙ্গে বাঙালির রসনার একটা সরাসরি যোগাযোগ আছে। একটা সময় ছিল, ইলিশ যখন যেকোনো মাছের মতোই স্বাভাবিক দরে বিকোত। কিন্তু তারপর কী যে হলো, ইলিশ চলে গেল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। যখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে, যখন জেলেদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তখনো ইলিশের দাম কমে না। ছা-পোষা মানুষ ইলিশের স্বাদ নেওয়ার কথা ভুলে যায়।

তবে হ্যাঁ, ইলিশের পোনা কেনা যায়, যাকে জাটকা বলা হয়। সে মাছ অনেকেই কেনেন, খান। কিন্তু ইলিশের খাঁটি স্বাদ পেতে হলে অন্তত আট শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পেতে হবে এবং সেই ইলিশ হতে হবে নদীর। এর ওপরে যার ওজন, তা তো তেলের ভারে অবনত, সেখানে মাছের স্বাদ আর তেলের স্বাদ একাকার হয়ে যায়। সে কারণে দেড় কেজির ওপরে ওজন হলে ইলিশ কেনা হয় কম। তা ছাড়া তার দামটাও যে হয় আকাশছোঁয়া, সে কথাও তো মনে রাখতে হবে।

বুদ্ধদেব বসু গোয়ালন্দের ইলিশের কথা বলেছিলেন তাঁর কবিতায়। ইলিশ নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের গল্প আছে। সৈয়দ মুজতবা আলীও ইলিশবিষয়ক গল্প শুনিয়েছেন মুহাম্মদ বিন তুঘলককে নিয়ে। সাহিত্যে ইলিশ এসেছে অনেক, সে সময় পাঠকেরাও জিহ্বায় পেয়েছেন তার স্বাদ। এখন সে স্বাদ পাওয়ার জন্য ট্যাঁকে যে পরিমাণ টাকা থাকতে হয়, তার অধিকারী নন দেশের বেশির ভাগ মানুষ।

তাই বলে বাজারে কি ইলিশ নেই? সেই ইলিশ কেনার কি মানুষ নেই? একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বাজারগুলোয় কিন্তু ইলিশ ব্যবসায়ীরা বিক্রির অভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে নেই। ইলিশের চাহিদা আছে এবং কেনাকাটাও চলছে বেশ। ওজনভেদে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। যাঁরা কিনছেন, তাঁদের হাতে টাকা আছে। কোথা থেকে কত টাকা আয় করছেন কোন মানুষ, সে খবর রাখা এখন দুষ্কর। আমাদের দেশে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়া মানুষদের দেখেও তো চেনা যায় না, এতটাই সাধারণ তাঁরা। ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশ করে জনগণের টাকা মেরে দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা দেখতে আপনার-আমার মতো মানুষই। তা ছাড়া, জিনিসপত্রের দাম অকারণেই বাড়িয়ে দেন যে ব্যবসায়ী, তাঁর হাতেও তো চলে আসে নগদ পয়সা। পয়সা কামানোর এ রকম কত গলিঘুঁজি আছে, তার হিসাব আর কে রাখে? তাই অভিজাত ইলিশ অবিক্রীত থাকে না। কিন্তু সেগুলোর স্বাদ পায় না সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকলেও পূজার জন্য ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে বিভিন্ন মহলে সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে।

একবার ফেসবুকেই আলোচনা হয়েছিল। মাছ কেটে কেটে এক টুকরো বা দুই টুকরো করে বিক্রি করা হলে অনেকেই তো খেতে পারে ইলিশ। ব্যাপারটা মন্দ নয়। চাহিদা-জোগানের হিসাব যখন অস্বাভাবিক, তখন এক টুকরো ইলিশের স্বাদ পাওয়ার জন্য টাকা জমানো যেতেই পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত