চিররঞ্জন সরকার
একসময় টেলিভিশনে বেবি শ্যাম্পুর একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো। বিজ্ঞাপনে দেখানো হতো যে একটি শিশু ওই বেবি শ্যাম্পু দিয়ে আনন্দের সঙ্গে গোসল করার পর বলছে, চোখে লাগলে চোখ জ্বলে না, কান্নাও পায় না! আমরা এখন সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো বেবি শ্যাম্পুর জগতে বাস করছি। এখন আমাদের কোনো কিছুতেই ‘চোখও জ্বলে না, কান্নাও পায় না!’ তা না হলে কিছুদিন পর পর তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির পরও কেন দেশের মানুষ এমন নির্বিকার ভূমিকা পালন করবে?
আর্থিক চাপ সামলানোর কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একের পর এক দাম বাড়াচ্ছে সরকার। গত জুনে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সাত মাস পর এবার গ্যাসের দাম বাড়ল ৮২ শতাংশ। শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতের গ্রাহকেরা দেবেন বাড়তি এ দাম। তবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত সিএনজি ও বাসায় ব্যবহৃত গ্যাস, চা-শিল্প (চা-বাগান) ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ায়নি সরকার। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এখন বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে বাজারে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে; যা অনিবার্যভাবে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির চাপও আদতে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরই। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে আর কে পরোয়া করে?
২০০৯ সাল থেকে দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হতো গণশুনানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এটা করত। এতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কারণে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো যেত না। গত ডিসেম্বরে বিইআরসি আইন সংশোধন করে এ ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে সরকার। এরপর এ মাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এল নির্বাহী আদেশে। ফলে কেন দাম বাড়ানো এবং এত দাম বাড়ানোর আদৌ দরকার ছিল কি না, এসব প্রশ্ন করার কোনো জায়গা নেই।
ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়া ও রাজস্ব ঘাটতি কমানোর কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ছয় দিনের মাথায় গ্যাসের ব্যাপক এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিস্মিত করেছে। সরকারিভাবে স্বীকার করা না হলেও এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আইএমএফের ভূমিকাই যে প্রধান, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ, রিজার্ভ-সংকট মোকাবিলায় সরকার আইএমএফের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আর আইএমএফের পক্ষ থেকে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের আগে তাই মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ জ্বালানি পরিস্থিতিতে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান কৃষির সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান এবং গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে পূরণ করতে হবে। সে কারণে সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়াতেই পারে। কথা হলো তা একটা যৌক্তিক পর্যায়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এক লাফে কয়েক গুণ দাম যখন বাড়ে, তখন সরকারের সততা-আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এবার সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশে এখন দিনে গ্যাসের মোট চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট।
সরবরাহের সক্ষমতা আছে ৩৭৬ কোটি ঘনফুট। আর এখন গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬৬ কোটি ঘনফুট। দিনে ৩১০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ মোটামুটি নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সে ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার আছে কেবল দাম বাড়ানোর তালে। তবে দাম বাড়লেও সরকার এলএনজি আমদানি করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। দাম বাড়িয়ে সরকার হয়তো বাড়তি টাকা আদায় করতে পারবে। কিন্তু এলএনজি কিনতে ডলার লাগবে। দেশে ডলারের সংকট এখনো দূর হয়নি।
জ্বালানির ক্ষেত্রে কোনো টেকসই সমাধানের দিকে না গিয়ে সরকার দাম বাড়িয়ে চলমান সমস্যার সমাধান কেন খুঁজছে, তা স্পষ্ট নয়। আমাদের জ্বালানি খাতে সরকারের পরিকল্পনাহীনতার ছাপ স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনায় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা তৈরি না করায় উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ সুফল আসছে না; বরং দলীয় ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা চুক্তির ফাঁদে ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে যে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা অপরীক্ষিত এবং বহু ক্ষেত্রে মিথ্যা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি কোম্পানির পকেটেই গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। একটি কোম্পানির ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলোকে কখনোই সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার করা হয়নি বা যায়নি। ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অলস থাকার পরও ভারতের পাঁচটি উৎস থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। যদিও চাহিদা না থাকায় আমদানি সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। এরপরও ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে নতুন আমদানির চুক্তি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য।
এক দশকে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের মতোই সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতা পেয়ে বসেছে গ্যাস খাতকেও। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে চড়া দামের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি)। ফলে বারবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। আর এর চাপ সহ্য করতে হচ্ছে গ্রাহককে। আসলে বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলনে সরকারের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তারা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে চাহিদার বিরাট পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এর ফলে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে সরকার যে টাকা ব্যয় করছে, তা ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে প্রাপ্ত গ্যাসের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ইত্যাদি কাজে সরকারের কোনো উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস অনুসন্ধান বাদ দিয়ে আমদানিনির্ভর হয়ে সেই বাড়তি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। চুরি-অপচয়, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ইত্যাদি না কমিয়ে দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার সরকারি নীতি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যের অদক্ষতা আর ভুল পরিকল্পনার দায় কেন আমজনতা বহন করবে?
মূল্যবৃদ্ধি নয়, দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই টেকসই সমাধান রয়েছে। সরকারকে সেই পথে হাঁটতে হবে। দাম সমন্বয় মানে ভোক্তার ওপর বাড়তি দামের দায় চাপানো নয়। সরকারের নীতি সংশোধন না করে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অনৈতিকও বটে।
তেলের দাম আগেই বাড়ানো হয়েছে। এখন ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। কথা হলো, আমরা কি সেই বিজ্ঞাপনের শিশুটির মতো ‘চোখে লাগলে চোখ জ্বলে না, কান্নাও পায় না’ মার্কা অনুভূতি নিয়ে বসে থাকব? নাকি একটু নড়েচড়ে বসব, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করব?
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
একসময় টেলিভিশনে বেবি শ্যাম্পুর একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো। বিজ্ঞাপনে দেখানো হতো যে একটি শিশু ওই বেবি শ্যাম্পু দিয়ে আনন্দের সঙ্গে গোসল করার পর বলছে, চোখে লাগলে চোখ জ্বলে না, কান্নাও পায় না! আমরা এখন সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো বেবি শ্যাম্পুর জগতে বাস করছি। এখন আমাদের কোনো কিছুতেই ‘চোখও জ্বলে না, কান্নাও পায় না!’ তা না হলে কিছুদিন পর পর তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির পরও কেন দেশের মানুষ এমন নির্বিকার ভূমিকা পালন করবে?
আর্থিক চাপ সামলানোর কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একের পর এক দাম বাড়াচ্ছে সরকার। গত জুনে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সাত মাস পর এবার গ্যাসের দাম বাড়ল ৮২ শতাংশ। শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতের গ্রাহকেরা দেবেন বাড়তি এ দাম। তবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত সিএনজি ও বাসায় ব্যবহৃত গ্যাস, চা-শিল্প (চা-বাগান) ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ায়নি সরকার। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এখন বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে বাজারে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে; যা অনিবার্যভাবে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির চাপও আদতে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরই। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে আর কে পরোয়া করে?
২০০৯ সাল থেকে দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হতো গণশুনানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এটা করত। এতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কারণে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো যেত না। গত ডিসেম্বরে বিইআরসি আইন সংশোধন করে এ ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে সরকার। এরপর এ মাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এল নির্বাহী আদেশে। ফলে কেন দাম বাড়ানো এবং এত দাম বাড়ানোর আদৌ দরকার ছিল কি না, এসব প্রশ্ন করার কোনো জায়গা নেই।
ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়া ও রাজস্ব ঘাটতি কমানোর কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ছয় দিনের মাথায় গ্যাসের ব্যাপক এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিস্মিত করেছে। সরকারিভাবে স্বীকার করা না হলেও এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আইএমএফের ভূমিকাই যে প্রধান, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ, রিজার্ভ-সংকট মোকাবিলায় সরকার আইএমএফের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আর আইএমএফের পক্ষ থেকে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের আগে তাই মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক বিশেষ জ্বালানি পরিস্থিতিতে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান কৃষির সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান এবং গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে পূরণ করতে হবে। সে কারণে সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বাড়াতেই পারে। কথা হলো তা একটা যৌক্তিক পর্যায়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এক লাফে কয়েক গুণ দাম যখন বাড়ে, তখন সরকারের সততা-আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এবার সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশে এখন দিনে গ্যাসের মোট চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট।
সরবরাহের সক্ষমতা আছে ৩৭৬ কোটি ঘনফুট। আর এখন গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬৬ কোটি ঘনফুট। দিনে ৩১০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ মোটামুটি নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সে ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার আছে কেবল দাম বাড়ানোর তালে। তবে দাম বাড়লেও সরকার এলএনজি আমদানি করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। দাম বাড়িয়ে সরকার হয়তো বাড়তি টাকা আদায় করতে পারবে। কিন্তু এলএনজি কিনতে ডলার লাগবে। দেশে ডলারের সংকট এখনো দূর হয়নি।
জ্বালানির ক্ষেত্রে কোনো টেকসই সমাধানের দিকে না গিয়ে সরকার দাম বাড়িয়ে চলমান সমস্যার সমাধান কেন খুঁজছে, তা স্পষ্ট নয়। আমাদের জ্বালানি খাতে সরকারের পরিকল্পনাহীনতার ছাপ স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনায় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা তৈরি না করায় উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ সুফল আসছে না; বরং দলীয় ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা চুক্তির ফাঁদে ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে যে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা অপরীক্ষিত এবং বহু ক্ষেত্রে মিথ্যা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি কোম্পানির পকেটেই গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। একটি কোম্পানির ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলোকে কখনোই সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার করা হয়নি বা যায়নি। ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অলস থাকার পরও ভারতের পাঁচটি উৎস থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। যদিও চাহিদা না থাকায় আমদানি সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। এরপরও ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে নতুন আমদানির চুক্তি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য।
এক দশকে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের মতোই সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতা পেয়ে বসেছে গ্যাস খাতকেও। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে চড়া দামের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি)। ফলে বারবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। আর এর চাপ সহ্য করতে হচ্ছে গ্রাহককে। আসলে বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলনে সরকারের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তারা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে চাহিদার বিরাট পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এর ফলে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে সরকার যে টাকা ব্যয় করছে, তা ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে প্রাপ্ত গ্যাসের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ইত্যাদি কাজে সরকারের কোনো উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস অনুসন্ধান বাদ দিয়ে আমদানিনির্ভর হয়ে সেই বাড়তি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। চুরি-অপচয়, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ইত্যাদি না কমিয়ে দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার সরকারি নীতি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যের অদক্ষতা আর ভুল পরিকল্পনার দায় কেন আমজনতা বহন করবে?
মূল্যবৃদ্ধি নয়, দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই টেকসই সমাধান রয়েছে। সরকারকে সেই পথে হাঁটতে হবে। দাম সমন্বয় মানে ভোক্তার ওপর বাড়তি দামের দায় চাপানো নয়। সরকারের নীতি সংশোধন না করে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অনৈতিকও বটে।
তেলের দাম আগেই বাড়ানো হয়েছে। এখন ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। কথা হলো, আমরা কি সেই বিজ্ঞাপনের শিশুটির মতো ‘চোখে লাগলে চোখ জ্বলে না, কান্নাও পায় না’ মার্কা অনুভূতি নিয়ে বসে থাকব? নাকি একটু নড়েচড়ে বসব, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করব?
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে