আবদুল বাছেদ
দুর্নীতি ও অপশাসনের কবলে পড়ে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো গত বছর এপ্রিলে দেউলিয়া হয়ে যায় ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। জনবিক্ষোভের মুখে রাজাপক্ষে ভ্রাতৃদ্বয় দেশ ছেড়ে পালানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফের ঋণ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখনো নেতিবাচক অবস্থায় থাকলেও সংকট কাটিয়ে আগামী বছরই প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাত্র দেড় বছর আগেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায় দেশটি। আগের সরকারের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে করোনা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি ও জ্বালানির উচ্চমূল্য দেশটিকে মারাত্মক সংকটে ফেলে। ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ওষুধ, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়। ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার মুখে তখন সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। দেশ ছাড়তে হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপক্ষেকে।
২০২২ সালের সেই সংকটকালে দেশটির মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়ে ৪৯ শতাংশের ওপরে ওঠে। চরম বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। সেই অবস্থা থেকে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির অর্থনীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়। আইএমএফের সহায়তার পর সেই সংকোচন হ্রাস পেয়েছে। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। বছর শেষে তা আরও কমে ২ শতাংশে নামবে বলে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা। এক বছরের মাথায় এত দ্রুত জাদুর কাঠির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ কী?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গত বছরের মে মাসে দেউলিয়া হয়ে যায় দ্বীপদেশটি। এই অর্থসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারের ঋণের বোঝা দেশটির জনগণের কাঁধে। অনেক দেন-দরবারের পর চলতি বছর মার্চে আইএমএফ ২৯০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়। এরপর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। অর্থসহায়তা দেওয়ার পর সংস্থাটি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করেছে। আইএমএফ বলেছে, এই ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার জনসাধারণের অবদান রয়েছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে অর্থনীতিকে ফের সচল করতে সঠিক বিনিয়োগ, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও জনগণের সদিচ্ছার মতো ইতিবাচক দিকগুলো।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বিষয়ে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশটি মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে। এর সঙ্গে পর্যটন খাতের আয় বাড়ার পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নও কমেছে।
বিশ্বব্যাংক এখন আশা করছে, ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রসারিত হবে, যেখানে আগের পূর্বাভাস ছিল ১ শতাংশ। একই সঙ্গে এ বছর অর্থনীতি মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে আগে বলা হয়েছিল, এই সংকোচন হবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত ছয় মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার চরম মুদ্রাস্ফীতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস এবং মুদ্রার মান প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অগ্রগতি যেভাবে
আইএমএফ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় পিটার ব্রুয়ার ও মিসেস কাতসিয়ারিনা ভিরিদজেনকার নেতৃত্বাধীন আইএমএফের পর্যবেক্ষক দল আইএমএফের এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ব্যবস্থার অধীনে প্রথম পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং নীতিমালা নিয়ে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে।
এসবের মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি রয়েছে দরিদ্র ও দুর্বলদের রক্ষা, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, দুর্নীতি মোকাবিলা এবং শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে কাঠামোগত সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া।
আইএমএফের প্রতিনিধিদল বলেছে, শ্রীলঙ্কার সরকার কাঠামোগত সংস্কারে ধারাবাহিক অগ্রগতি করেছে। সংসদে পাস হওয়া নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন এবং দুর্নীতি দমন আইনসহ আগের মূল আইনগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হলে শাসনব্যবস্থার উন্নতি হতে পারে। আইএমএফ গভর্নেন্স ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট প্রকাশের পর শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য ভবিষ্যৎ সংস্কার সম্পর্কে অবহিত করবে।
অভ্যন্তরীণ ঋণ পুনর্গঠন এবং বহিরাগত ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ অগ্রগতি করেছে। আর যেহেতু শ্রীলঙ্কা জনগণের ঋণের পুনর্গঠন করছে, যা এখনো বকেয়া আছে, তাই এক্সিকিউটিভ বোর্ডের পরবর্তী তহবিলের অনুমোদনের জন্য ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। এই অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা ঋণ পুনর্গঠনের সঙ্গে এগিয়েছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে; যা সময়মতো এবং ঋণের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামনে যেসব ঝুঁকি
এত ইতিবাচক খবরের মধ্যেও দেশটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিশ্বব্যাংক ৩ অক্টোবর জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণ এখনো অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা এবং ঝুঁকি রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট রিচার্ড ওয়াকার বলেছেন, ‘প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নির্ভর করবে ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য নতুন কাঠামো বাস্তবায়নের ওপর। কেননা আমরা আরও অর্থনৈতিক শিথিলতা এবং শক্তিশালী বিনিময় হারের চাপ দেখতে পাচ্ছি, যা এখনকার নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
চলতি বছরের মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়াত্ব থেকে বের হতে শর্ত-সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। তবে সরকারি রাজস্ব ঘাটতির কারণে দ্বিতীয় ধাপের তহবিল বিলম্বিত হতে পারে।
এ বিষয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বলেছে, রাজস্ব বাড়াতে এবং উন্নত শাসনব্যবস্থার দিকে শ্রীলঙ্কার কর বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে করছাড় বাতিল এবং কর ফাঁকি দূর করা জরুরি।
এই বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও শ্রীলঙ্কাকে ৭০০ মিলিয়ন অর্থসহায়তা দেয়। দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জন, স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধার, দরিদ্র ও দুর্বলদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি প্রশমনের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক বেসরকারি খাতের পুনরুদ্ধারে এই অর্থ বিনিয়োগ করতে বলা হয়।
বিশ্বব্যাংক-আইএমফের চেয়েও আশাবাদী শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা এ বছর ২ শতাংশ মৃদু সংকোচন এবং ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। যেখানে ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তবে এখানে সিংহভাগ অবদানই ভারতের, যার অর্থনীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে এই অর্থবছরে। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো প্রাক-মহামারি সময়ের চেয়ে ধীরগতির।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেছেন, যদিও সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া স্থিতিশীল অগ্রগতির পথে রয়েছে, তবে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হার, তাতে এক প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
তথ্যসূত্র: আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, রয়টার্স, বিবিসি
দুর্নীতি ও অপশাসনের কবলে পড়ে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো গত বছর এপ্রিলে দেউলিয়া হয়ে যায় ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। জনবিক্ষোভের মুখে রাজাপক্ষে ভ্রাতৃদ্বয় দেশ ছেড়ে পালানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফের ঋণ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখনো নেতিবাচক অবস্থায় থাকলেও সংকট কাটিয়ে আগামী বছরই প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাত্র দেড় বছর আগেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায় দেশটি। আগের সরকারের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে করোনা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি ও জ্বালানির উচ্চমূল্য দেশটিকে মারাত্মক সংকটে ফেলে। ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ওষুধ, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়। ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার মুখে তখন সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। দেশ ছাড়তে হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপক্ষেকে।
২০২২ সালের সেই সংকটকালে দেশটির মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়ে ৪৯ শতাংশের ওপরে ওঠে। চরম বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। সেই অবস্থা থেকে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির অর্থনীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়। আইএমএফের সহায়তার পর সেই সংকোচন হ্রাস পেয়েছে। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। বছর শেষে তা আরও কমে ২ শতাংশে নামবে বলে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা। এক বছরের মাথায় এত দ্রুত জাদুর কাঠির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ কী?
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গত বছরের মে মাসে দেউলিয়া হয়ে যায় দ্বীপদেশটি। এই অর্থসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারের ঋণের বোঝা দেশটির জনগণের কাঁধে। অনেক দেন-দরবারের পর চলতি বছর মার্চে আইএমএফ ২৯০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়। এরপর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। অর্থসহায়তা দেওয়ার পর সংস্থাটি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করেছে। আইএমএফ বলেছে, এই ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার জনসাধারণের অবদান রয়েছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে অর্থনীতিকে ফের সচল করতে সঠিক বিনিয়োগ, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও জনগণের সদিচ্ছার মতো ইতিবাচক দিকগুলো।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বিষয়ে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশটি মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে। এর সঙ্গে পর্যটন খাতের আয় বাড়ার পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নও কমেছে।
বিশ্বব্যাংক এখন আশা করছে, ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রসারিত হবে, যেখানে আগের পূর্বাভাস ছিল ১ শতাংশ। একই সঙ্গে এ বছর অর্থনীতি মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে আগে বলা হয়েছিল, এই সংকোচন হবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত ছয় মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার চরম মুদ্রাস্ফীতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস এবং মুদ্রার মান প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অগ্রগতি যেভাবে
আইএমএফ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় পিটার ব্রুয়ার ও মিসেস কাতসিয়ারিনা ভিরিদজেনকার নেতৃত্বাধীন আইএমএফের পর্যবেক্ষক দল আইএমএফের এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ব্যবস্থার অধীনে প্রথম পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং নীতিমালা নিয়ে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে।
এসবের মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি রয়েছে দরিদ্র ও দুর্বলদের রক্ষা, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, দুর্নীতি মোকাবিলা এবং শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে কাঠামোগত সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া।
আইএমএফের প্রতিনিধিদল বলেছে, শ্রীলঙ্কার সরকার কাঠামোগত সংস্কারে ধারাবাহিক অগ্রগতি করেছে। সংসদে পাস হওয়া নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন এবং দুর্নীতি দমন আইনসহ আগের মূল আইনগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হলে শাসনব্যবস্থার উন্নতি হতে পারে। আইএমএফ গভর্নেন্স ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট প্রকাশের পর শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য ভবিষ্যৎ সংস্কার সম্পর্কে অবহিত করবে।
অভ্যন্তরীণ ঋণ পুনর্গঠন এবং বহিরাগত ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ অগ্রগতি করেছে। আর যেহেতু শ্রীলঙ্কা জনগণের ঋণের পুনর্গঠন করছে, যা এখনো বকেয়া আছে, তাই এক্সিকিউটিভ বোর্ডের পরবর্তী তহবিলের অনুমোদনের জন্য ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। এই অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা ঋণ পুনর্গঠনের সঙ্গে এগিয়েছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে; যা সময়মতো এবং ঋণের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামনে যেসব ঝুঁকি
এত ইতিবাচক খবরের মধ্যেও দেশটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিশ্বব্যাংক ৩ অক্টোবর জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণ এখনো অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা এবং ঝুঁকি রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট রিচার্ড ওয়াকার বলেছেন, ‘প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নির্ভর করবে ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য নতুন কাঠামো বাস্তবায়নের ওপর। কেননা আমরা আরও অর্থনৈতিক শিথিলতা এবং শক্তিশালী বিনিময় হারের চাপ দেখতে পাচ্ছি, যা এখনকার নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
চলতি বছরের মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়াত্ব থেকে বের হতে শর্ত-সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। তবে সরকারি রাজস্ব ঘাটতির কারণে দ্বিতীয় ধাপের তহবিল বিলম্বিত হতে পারে।
এ বিষয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বলেছে, রাজস্ব বাড়াতে এবং উন্নত শাসনব্যবস্থার দিকে শ্রীলঙ্কার কর বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে করছাড় বাতিল এবং কর ফাঁকি দূর করা জরুরি।
এই বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও শ্রীলঙ্কাকে ৭০০ মিলিয়ন অর্থসহায়তা দেয়। দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জন, স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধার, দরিদ্র ও দুর্বলদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি প্রশমনের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক বেসরকারি খাতের পুনরুদ্ধারে এই অর্থ বিনিয়োগ করতে বলা হয়।
বিশ্বব্যাংক-আইএমফের চেয়েও আশাবাদী শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা এ বছর ২ শতাংশ মৃদু সংকোচন এবং ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। যেখানে ২০২২ সালে দেশটির অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।
সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তবে এখানে সিংহভাগ অবদানই ভারতের, যার অর্থনীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে এই অর্থবছরে। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো প্রাক-মহামারি সময়ের চেয়ে ধীরগতির।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেছেন, যদিও সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া স্থিতিশীল অগ্রগতির পথে রয়েছে, তবে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হার, তাতে এক প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
তথ্যসূত্র: আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, রয়টার্স, বিবিসি
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে