সেই প্রেম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ১৯

১৯৪৩ সালে সলিল চৌধুরী আসাম থেকে পেলেন বাবার টেলিগ্রাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। তাই তিনি ছেলেকে আসামে চলে আসতে বললেন। সলিল চৌধুরী সঙ্গে আনলেন কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো, অরিজিন অব সোসাইটি, ইলিউশন অ্যান্ড রিয়ালিটি, হাউ টু বি এ গুড কমিউনিস্ট ইত্যাদি বই। বইগুলো পড়তেন, কিন্তু সব বুঝতেন না। চা-বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে অনেক দূর চলে যেতেন তিনি, পৌঁছে যেতেন মিকির পাহাড়ে। সেখানেই আবিষ্কার করলেন একটা প্রাগৈতিহাসিক গুহা।

তার ভেতরে হতো অসাধারণ প্রতিধ্বনি। একবার ‘আঃ’ বললে তার অনুরণন চলত এক মিনিটের বেশি সময় ধরে। সে গুহায় বসে বাঁশি বাজালেন সলিল চৌধুরী। সুরের পর সুরের লহরি এসে একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খেতে লাগল। এই সুর পাহাড়ের গা বেয়ে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করে যায়। গুজব রটে গেল, মন্দিরে নাকি শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বাঁশি বাজান। কেউ জানতই না, এটা সলিলের কীর্তি।

সেখানেই একদিন দেখা হয়ে যায় সুখিয়ার সঙ্গে। নির্জন হ্রদে কাপড় ছেড়ে স্নান করছিল সুখিয়া। লুকিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছিলেন হঠাৎ সেখানে এসে পড়া সলিল।

সুখিয়া ঠিকই চিনে ফেলল ‘ডাক্তারবাবুর বেটাকে।’

‘তুই বেহুলা, মানে সুখিয়া না?’

‘হঁ। আর তুতো হামার নখিন্দর, তাই না বটে? তু ইখানে বোস, হামি আসছি।’ শাড়ি-ব্লাউজ গুছিয়ে পরে আবার এল সুখিয়া এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সলিল চৌধুরী সুখিয়া নামের আদিবাসী মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেল। দুহাতে ওকে বুকে টানতেই সুখিয়া নিজেকে সমর্পণ করল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওর চোখে পড়ল বাঁশি। বাঁশি দেখে আড়ষ্ট হয়ে গেল সুখিয়া। সলিল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছেরে সুখিয়া?’

সুখিয়া বলল, ‘তু ভগমান বটিস। হামাকে মাপ করে দে।’ বলে ছুটতে শুরু করল।

সলিলের চিৎকারে ‘সুখিয়া’ ডাকটা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। কিন্তু সলিলকে সাক্ষাৎ ভগবান ভেবে সুখিয়া পালাল।

সুখিয়াকে সত্যিই ভালো বেসেছিলেন সলিল চৌধুরী। ওর জন্য তিনি জাহান্নামেও যেতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মেয়েটা হারিয়ে গিয়েছিল সলিলের জীবন থেকে।
 
সূত্র: সলিল চৌধুরী, জীবন উজ্জীবন, পৃষ্ঠা ১০৮-১১০

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত