‘শুঁটকি তৈরির জন্য জমি চাই’

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২০
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৭

শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে পটুয়াখালীর উপকূলের জেলেদের। এই এলাকায় রাসায়নিকমুক্ত শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে। কিন্তু শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার স্থায়ী কোনো জমি নেই বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলেন, শুঁটকি তৈরির জন্য আমা স্থায়ী জমি চাই। তবে সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর আলিপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, লেবুর চর, গঙ্গামতির চর, গোড়াখাল, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকাসহ বিভিন্ন চরে শতাধিক শুঁটকিপল্লি রয়েছে। এসব পল্লিতে দু-তিন হাজার মানুষ কাজ করেন। মৌসুমের শুরুতেই একেকটি স্পটে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী ছোট্ট ঝুপড়িতে শুঁটকি তৈরি করেন। সাগরসৈকতে সারি সারি এসব শুঁটকির মাচায় বছরের ৪-৫ মাস শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এই সময়ে লইট্টা, ফাইসা, ছুড়ি, পোমা, রুপচাঁদা, ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।

কুয়াকাটায় গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াকাটা মূল সৈকতের পশ্চিমে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরেই রয়েছে দুটি শুঁটকিপল্লি। ১২ থেকে ১৫ জন ব্যবসায়ী বাসা তৈরি করেছেন। কেউ মাছ আহরণ শেষে ধোয়ার কাজ করছেন, কেউ বড় মাছ কাটছেন। লবণ মিশিয়ে মাচানের ওপরে বিছিয়ে শুকানোর কাজ চলছে। কেউ কেউ শুঁটকি বস্তায় ভরছেন। বস্তার শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে যুক্ত। কোনো কোনো জায়গায় শিশুদেরও যুক্ত হতে দেখা গেছে।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শুঁটকি তৈরি করতে ব্যস্ত জেলেরা। শুঁটকিপল্লি থেকে গত শুক্রবার তোলা ছবিএ সময় কথা হয় শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ ব্যবসায় আমি ১৪ বছর। আইজ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী জায়গা পাই নাই। বছরে ৪ মাস ব্যবসা করি। অক্টোবরে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত। সাগরে নাই মাছ, অন্যদিকে নাই কোনো স্থায়ী জায়গা। এ রকম আর কত কাল। লস দিয়াই যাইতে হইবো, কয়েক দিন আগে পাশের ঘরের সিদ্দিক মৃধা ৫ লাখ টাকা লস দিয়া চইলা গেছে‌।’

এ সময় আরেক ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘গত বছর ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মাছ কিনছি। ২০ লাখ টাকা লাভ করছি। এবার শুরু থেইকাই লস। অক্টোবরের ২০ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ কিনছি। লাখ দুয়েক লাভ হইতে পারে।’

ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, ‘আমরা অনেক শুঁটকি করলেও লইট্টা ও চিংড়ির শুঁটকির চাহিদা বেশি। কুয়াকাটার শতাধিক শুঁটকির দোকানে সারা বছরই বিক্রি চলে। জেলাতেও এখানের শুঁটকির বাড়তি চাহিদা রয়েছে। তবে স্থায়ী কোনো জায়গা না থাকায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতেই বাধ্য হয়ে শুঁটকি উৎপাদন করতে হয়। ফলে লাভ-লোকসানের দোলাচলেই দশকের পর দশ এই ব্যবসা করে যাচ্ছি আমরা। সরকারের কাছে আবেদন, এই শুঁটকি ব্যবসার স্থায়ী কোনো জায়গা যেন করে দেন। আমাদের সহযোগিতা করেন।’

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। খাল গোড়ায় শুঁটকিপল্লির জন্য স্থায়ী জায়গা দেওয়া হবে।’

আলিপুর, মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আলিপুর মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করে সারা দেশে সরবরাহ করেন। কিন্তু আলিপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এসব ব্যবসায়ী আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, কক্সবাজারে যে আধুনিক একটি শুঁটকিপল্লি হচ্ছে, ও রকম যেন এই এলাকায়ও একটি শুঁটকিপল্লি নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে তাঁদের এই প্রস্তাব আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি এটি বাস্তবায়িত হলে এই এলাকায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং শুঁটকি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত