টিসিবির ট্রাক সেলে মিলছে পচা পেঁয়াজ

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ৫৫
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৭

দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কিনে খুশি হয়েছিলেন আমেনা বেগম। কিন্তু পণ্যের প্যাকেট খুলতে তাঁর সেই হাসিমুখ মলিন হয়ে যায়। দেখতে পান দাম দিয়ে কেনা পেঁয়াজের বেশির ভাগই পচা। পরে বিষয়টি পণ্য সরবরাহকারীদের জানিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি। উল্টো গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা তাঁকে বলেন, ‘নিলে নেন, না হয় চলে যান। কম টাকায় এর চেয়ে ভালো কোথায় পাবেন?’

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকায় ঘটে এই ঘটনা। কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ওই এলাকার প্যারেড মাঠের পাশে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনেন আমেনার মতো শতাধিক মানুষ। তাঁদের সবার ভাগ্যেই জুটেছে পচা পেঁয়াজ। শুধু এই এলাকায় নয়, নগরীর আরও ১৬টি জায়গায় কম দামে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। এসব জায়গাতেও গ্রাহকদের পচা পেঁয়াজ সরবরাহ করছে টিসিবি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে খুলশী থানাধীন দামপাড়া এলাকায় টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্যে কেনা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কম দামে বিক্রির নামে টিসিবি অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অন্য পণ্যের সঙ্গে গ্রাহকেরা আড়াই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারেন। আজ (গতকাল) পণ্য নেওয়ার পর পেঁয়াজের প্যাকেট খুলে দেখি অর্ধেকের বেশি পচা।’ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম রাখা হয়েছে ৩০ টাকা। সেই হিসেবে বাইরে থেকে কিনলে আরও সাশ্রয়ী হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীতে ১৭টি ট্রাকে এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৩টি ট্রাকে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি ও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন টিসিবির ডিলারেরা। সেখানে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার নগরীর জামালখান, কাঠগড়, ইপিজেড, কাস্টমস, আগ্রাবাদ, হালিশহর, কাজীর দেউড়ি, কোতোয়ালি, বহদ্দারহাট এলাকায় ঘুরেও একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সব এলাকার টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নেওয়া অনেক ক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁদের সরবরাহ করা পেঁয়াজের অধিকাংশই পচা।

ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৩০০ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। সেই হিসেবে দৈনিক ৫ হাজার ১০০ কেজি (প্রায় ১২৭ মণ) পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। এর অর্ধেকের বেশি পচা বলে অভিযোগ করেছেন খোদ ডিলারেরাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির ডিলার খোকন বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত যতগুলো পেঁয়াজ আমাদের সরবরাহ করা হয়েছে সব বস্তাতেই পচা পেঁয়াজ ছিল। আমরা টিসিবিকে জানিয়েছি, কিন্তু এরপরও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা গ্রাহকদের বেছে ভালো পেঁয়াজগুলো দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচা থাকলে আমাদের কী করার আছে?’

পচা পেঁয়াজ সরবরাহ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (অফিস প্রধান) জামাল উদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, পেঁয়াজগুলো তুরস্ক থেকে আনা হয়েছে। আসার পথেই এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত