মামুনুর রশীদ
মানুষ এক স্মৃতিকাতর প্রাণী। তার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি থেকে যখন ভবিষ্যতের দুয়ার খুলতে থাকে, তখনই সে প্রতিমূর্তিকে খোঁজে। শৈশবের নায়ক তার পিতাকে প্রথমেই শিক্ষক হিসেবে দেখতে চায়। ভালো শিক্ষক মানেই তার মন্তব্য হয়ে থাকে স্যারটি বাবার মতো। হয়তো শিক্ষকের সবটাই বাবার মতো নয়, আদলটাও নয়। কিন্তু পিতার কাছে যে নিরাপত্তা, সেই নিরাপত্তাটাই খোঁজে শিক্ষকের কাছে।
সুদীর্ঘ দিনের শিক্ষকতার জীবনে আমাদের প্রিয় ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মধ্যে হাজার হাজার ছাত্র পিতার আদল খুঁজে পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দাপুটে শিক্ষকদের মধ্যে ষাটের দশকে যেসব শিক্ষকের মধ্যে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানেরা একটা আশ্রয় খুঁজে পেত, তিনি হলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংক্ষেপে SIC স্যার। আমাদের দেশে একটা বড় প্রবণতা হচ্ছে ক্ষমতাবানেরা কেমন ভারী হয়ে যান, তেমনি জ্ঞানীরাও বড় ভারী হয়ে পড়েন। এত ভারী হয়ে যান যে সবাইকে অবজ্ঞা করতে শেখেন। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য সারা জীবন তৎপর থাকেন। SIC স্যার ৮৬ বছরের জীবনে কখনো নিজেকে ভারী করেননি। অথবা ভারী করার কথা ভাবেননি। সে জন্য তাঁর দরজা ছিল চিরদিনই খোলা। কারও কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কখনো মনে মনে হাসেননি। যার ফলে সবাই একটা নিরাপত্তা খুঁজে পায় এই মানুষটির কাছে। মেধা, অভিজ্ঞতা এবং অবিরাম জ্ঞানের অন্বেষায় তিনি সর্বদা কর্মতৎপর। মধ্যবিত্তকে বোঝা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের নির্মাণযন্ত্র অন্বেষণ করা তাঁর অবিরাম কৌতূহল। এই কৌতূহল থেকে তিনি বলে যাচ্ছেন, লিখে যাচ্ছেন এবং অন্বেষণ করছেন হয়তো নতুন জ্ঞান।
তিনি উপলব্ধি করছেন জ্ঞানের বাজার ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তাই বলে তিনি হাল ছেড়ে দেননি, হতাশাও তাঁকে গ্রাস করেনি। বারবার হয়তো একই কথাই বলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি যেমন লিখেছেন—‘রাজনীতিকেরা কি শিক্ষকদের অব্যাহতি দেবেন?’ রাজনীতিক এবং সরকারগুলো কীভাবে যে শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামিয়ে দিল তা তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন। শিক্ষা যে সুবুদ্ধিতে রূপান্তরিত হচ্ছে না, এটা তিনি বহুবার উপলব্ধি করছেন এবং সেই উপলব্ধির কথা তিনি বলেও যাচ্ছেন এবং লিখেও যাচ্ছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মাণ এবং রাজনীতিবিদদের সর্বনাশা সিদ্ধান্ত কীভাবে রাষ্ট্রকে অমানবিক করে দিচ্ছে, বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছে, এ ব্যাপারেও তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন।
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, মানুষ যখন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছায় তখন তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত বা ভাবনা মুখ্য হয়ে ওঠে। গবেষণার বিষয়টি আর থাকে না। এখনো তাঁর লেখায়-গবেষণায়, বিশেষ করে রাষ্ট্রকে নিয়ে তাঁর লেখনীতে আমরা যেসব তথ্য পাই, তা শুধু নতুন নয়, একেবারেই নতুন নতুন চিন্তার উদ্রেক করে। তার মানে তাঁর লাইব্রেরিতে চলাচল এখনো অক্ষুণ্ন আছে। স্যারকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনি উপন্যাস লেখেন না কেন?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা নেই।’ অতি সরল স্বীকারোক্তি। কিন্তু অভিজ্ঞতা নেই, এটা অর্ধসত্য। তাঁর জীবনের কথা যেসব জায়গায় উল্লেখ আছে, সেখানে পাওয়া যায় কলকাতা থেকে রাজশাহী, রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং ঢাকার দীর্ঘ জীবন এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড গমন—এসবই তাঁর অভিজ্ঞতার উৎস।
তিনি বাংলাদেশে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের আবাসভূমি বিক্রমপুরের মানুষ। ঢাকা শহরটাকে চোখের সামনে গড়ে উঠতে দেখেছেন। সদরঘাট অঞ্চল থেকে গুলিস্তান। মতিঝিল হয়ে বনানী, গুলশান এবং সেখান থেকে উত্তরা সম্প্রসারণ হতে দেখেছেন। ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের বাঙালির সংগ্রাম, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম, বিকাশ, স্বাধীনতার বঞ্চনা থেকে শুরু করে ৫১ বছরের রাষ্ট্রকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি যে সবটাই অবলোকন করেছেন, তা-ও তাঁর লেখায় আমরা পেয়েছি। পেয়েছি তাঁর আধুনিক চিন্তার ব্যাখ্যা নিয়ে। তাঁর সহকর্মীরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু স্যার আছেন একেবারেই ক্ষুদ্র বলয়ের মধ্যে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কিন্তু বড় ধরনের কোনো আন্দোলন রচনা করতে পারে না। সেই ছোট ছোট বিষয়ের মধ্যে তিনি জ্ঞানের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। কিন্তু জ্ঞানতাপস বা জ্ঞানী লোকের নেতা হতে চাননি। তিনি সন্তুষ্ট থাকছেন একেবারে অল্পতেই।
জীবনের ভোগবিলাস, বৈষয়িক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করেনি। এসব স্পর্শ করেনি বলেই তিনি এত বেশি কাজ করতে পেরেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর যে সুখ্যাতি, হয়তো তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ, নিদেনপক্ষে একটি শিক্ষা কমিশন তাঁর নামে হতে পারত। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাঁকে ভয় পায়। তাই বিশ্বাসও করে না। শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাস আমাদের দেশের এক অদ্ভুত ব্যাপার। তা হলো, রাজনৈতিক দলের প্রতি বিশ্বস্ততাই সেখানে প্রধান যোগ্যতা। এবং সেই বিশ্বস্ততা প্রতি পদে পদে। সবচেয়ে যেটি কঠিন তা হলো ওই রাজনৈতিক দলের সব ভালো-মন্দের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন। এই সমর্থন দেওয়া স্যারের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
যদি পরিস্থিতিটা উল্টো হতো—বুদ্ধিজীবীরা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তত্ত্ব দাঁড় করাবেন এবং রাজনীতিকেরা তাকে অনুসরণ করবেন, তাহলে রাষ্ট্র অনেক বেশি ফলপ্রসূ ও মানবিক হতে পারত। সেই পথ পরিহার করেই একের পর এক শাসকগোষ্ঠী আসে এবং তাদের অনুগত একটা তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী শ্রেণি পেয়ে যায়। যার ফলে সত্য উপেক্ষিত হয়। শাসকগোষ্ঠীও তাদের নিয়ে নানা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করে না। সাম্প্রতিক লেখাগুলোতে তিনি বারবার শিক্ষার বিষয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন। শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদি লগ্নি এবং রাষ্ট্রকে এই লগ্নিটা করতে হয় অনেক ভেবেচিন্তে।
যে দেশে রাজনৈতিক চাপের কাছে শিক্ষাব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়ে সিলেবাস পরিবর্তন হয় এবং শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয় লাখ টাকায়, সেই দেশে প্রমাণ পাওয়া যায় যে শাসকগোষ্ঠী বা নীতিনির্ধারকেরা, বিশেষ করে তাঁরই ছাত্র আমলারা এসবের কোনো তোয়াক্কা করেন না। এই রকম এক অসহায় অবস্থায় পড়েও স্যার নিজেকে কখনো পরাজিত ভাবেননি। একা ভাবেননি কিংবা নিঃসঙ্গও ভাবেননি। দীর্ঘ জীবনে তাই তাঁর প্রেরণা হয়েছে জনগণ। জনগণের নির্বুদ্ধিতা আছে, বোঝার সমস্যা আছে। কিন্তু তিনি ভেবেছেন যে, একদিন হয়তো তারা বুঝবে। আর একদল মানুষ সংখ্যায় তারা কম হলেও যদি বোঝাবার প্রক্রিয়াটা বন্ধ করে দেয়, তাহলে অসত্যেরই জয় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আমরা অনেক মেধাবী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষকদের পেয়েছি, যাঁরা কেউ উচ্চকিত কণ্ঠে অথবা একেবারেই নেপথ্যে বড় বড় কাজ করে গেছেন। কিন্তু এ রকম মানুষ খুব বিরল, যিনি সারা জীবন একইভাবে একই নিষ্ঠা নিয়ে মানুষের সমস্যা, রাষ্ট্রের সমস্যা এবং ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে লিখে যাচ্ছেন, বলে যাচ্ছেন। ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে পাশ্চাত্যের আধুনিক জ্ঞান তিনি অর্জন করেছিলেন। তাঁর মধ্যে একটা জনবিচ্ছিন্নতা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু একেবারেই বাংলা ভাষায় সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে তিনি কঠিন কঠিন বিষয়কেও ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি এ বিষয়ে ক্ষমতাবান। রাষ্ট্রীয় দুঃশাসন বা কোনো অপরাজনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে যখন রুখে দাঁড়াবার প্রয়োজন হয়েছে, তখন মুষ্টিমেয় কিছু লোককেই খুঁজে পাওয়া যেত। স্যার তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
বর্তমানে সাহসী বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের বড়ই অভাব। অনবরত সামনের সারিতে আসার আকাঙ্ক্ষার বুদ্ধিজীবীদের অভাব নেই। উপাচার্যের মতো একটি সম্মানজনক পদের জন্য শিক্ষকদের মধ্যে কী লজ্জাজনক প্রতিযোগিতা! জ্ঞানের চর্চায় বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কাজে শিক্ষকেরা আজকাল বড়ই সক্রিয়। সেই জায়গায় আমাদের প্রিয় শিক্ষক SIC স্যার, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর কলমকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। আমরা সব সময়ই অনুভব করি আমাদের একজন অভিভাবক আছেন, যিনি দেখে যাচ্ছেন কোথাও কোনো গোলমাল হচ্ছে কি না। আমাদের ন্যায়-অন্যায়কেও তিনি দেখে যাচ্ছেন। তাঁর জন্মদিনে আমরা যাঁরা টিনের তলোয়ার নিয়ে লড়াই করি, তাঁদের পক্ষ থেকে স্যারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
মানুষ এক স্মৃতিকাতর প্রাণী। তার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি থেকে যখন ভবিষ্যতের দুয়ার খুলতে থাকে, তখনই সে প্রতিমূর্তিকে খোঁজে। শৈশবের নায়ক তার পিতাকে প্রথমেই শিক্ষক হিসেবে দেখতে চায়। ভালো শিক্ষক মানেই তার মন্তব্য হয়ে থাকে স্যারটি বাবার মতো। হয়তো শিক্ষকের সবটাই বাবার মতো নয়, আদলটাও নয়। কিন্তু পিতার কাছে যে নিরাপত্তা, সেই নিরাপত্তাটাই খোঁজে শিক্ষকের কাছে।
সুদীর্ঘ দিনের শিক্ষকতার জীবনে আমাদের প্রিয় ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মধ্যে হাজার হাজার ছাত্র পিতার আদল খুঁজে পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দাপুটে শিক্ষকদের মধ্যে ষাটের দশকে যেসব শিক্ষকের মধ্যে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানেরা একটা আশ্রয় খুঁজে পেত, তিনি হলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংক্ষেপে SIC স্যার। আমাদের দেশে একটা বড় প্রবণতা হচ্ছে ক্ষমতাবানেরা কেমন ভারী হয়ে যান, তেমনি জ্ঞানীরাও বড় ভারী হয়ে পড়েন। এত ভারী হয়ে যান যে সবাইকে অবজ্ঞা করতে শেখেন। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য সারা জীবন তৎপর থাকেন। SIC স্যার ৮৬ বছরের জীবনে কখনো নিজেকে ভারী করেননি। অথবা ভারী করার কথা ভাবেননি। সে জন্য তাঁর দরজা ছিল চিরদিনই খোলা। কারও কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কখনো মনে মনে হাসেননি। যার ফলে সবাই একটা নিরাপত্তা খুঁজে পায় এই মানুষটির কাছে। মেধা, অভিজ্ঞতা এবং অবিরাম জ্ঞানের অন্বেষায় তিনি সর্বদা কর্মতৎপর। মধ্যবিত্তকে বোঝা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের নির্মাণযন্ত্র অন্বেষণ করা তাঁর অবিরাম কৌতূহল। এই কৌতূহল থেকে তিনি বলে যাচ্ছেন, লিখে যাচ্ছেন এবং অন্বেষণ করছেন হয়তো নতুন জ্ঞান।
তিনি উপলব্ধি করছেন জ্ঞানের বাজার ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তাই বলে তিনি হাল ছেড়ে দেননি, হতাশাও তাঁকে গ্রাস করেনি। বারবার হয়তো একই কথাই বলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি যেমন লিখেছেন—‘রাজনীতিকেরা কি শিক্ষকদের অব্যাহতি দেবেন?’ রাজনীতিক এবং সরকারগুলো কীভাবে যে শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামিয়ে দিল তা তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন। শিক্ষা যে সুবুদ্ধিতে রূপান্তরিত হচ্ছে না, এটা তিনি বহুবার উপলব্ধি করছেন এবং সেই উপলব্ধির কথা তিনি বলেও যাচ্ছেন এবং লিখেও যাচ্ছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মাণ এবং রাজনীতিবিদদের সর্বনাশা সিদ্ধান্ত কীভাবে রাষ্ট্রকে অমানবিক করে দিচ্ছে, বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছে, এ ব্যাপারেও তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন।
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, মানুষ যখন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছায় তখন তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত বা ভাবনা মুখ্য হয়ে ওঠে। গবেষণার বিষয়টি আর থাকে না। এখনো তাঁর লেখায়-গবেষণায়, বিশেষ করে রাষ্ট্রকে নিয়ে তাঁর লেখনীতে আমরা যেসব তথ্য পাই, তা শুধু নতুন নয়, একেবারেই নতুন নতুন চিন্তার উদ্রেক করে। তার মানে তাঁর লাইব্রেরিতে চলাচল এখনো অক্ষুণ্ন আছে। স্যারকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনি উপন্যাস লেখেন না কেন?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা নেই।’ অতি সরল স্বীকারোক্তি। কিন্তু অভিজ্ঞতা নেই, এটা অর্ধসত্য। তাঁর জীবনের কথা যেসব জায়গায় উল্লেখ আছে, সেখানে পাওয়া যায় কলকাতা থেকে রাজশাহী, রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং ঢাকার দীর্ঘ জীবন এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড গমন—এসবই তাঁর অভিজ্ঞতার উৎস।
তিনি বাংলাদেশে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের আবাসভূমি বিক্রমপুরের মানুষ। ঢাকা শহরটাকে চোখের সামনে গড়ে উঠতে দেখেছেন। সদরঘাট অঞ্চল থেকে গুলিস্তান। মতিঝিল হয়ে বনানী, গুলশান এবং সেখান থেকে উত্তরা সম্প্রসারণ হতে দেখেছেন। ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের বাঙালির সংগ্রাম, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম, বিকাশ, স্বাধীনতার বঞ্চনা থেকে শুরু করে ৫১ বছরের রাষ্ট্রকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি যে সবটাই অবলোকন করেছেন, তা-ও তাঁর লেখায় আমরা পেয়েছি। পেয়েছি তাঁর আধুনিক চিন্তার ব্যাখ্যা নিয়ে। তাঁর সহকর্মীরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু স্যার আছেন একেবারেই ক্ষুদ্র বলয়ের মধ্যে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কিন্তু বড় ধরনের কোনো আন্দোলন রচনা করতে পারে না। সেই ছোট ছোট বিষয়ের মধ্যে তিনি জ্ঞানের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। কিন্তু জ্ঞানতাপস বা জ্ঞানী লোকের নেতা হতে চাননি। তিনি সন্তুষ্ট থাকছেন একেবারে অল্পতেই।
জীবনের ভোগবিলাস, বৈষয়িক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করেনি। এসব স্পর্শ করেনি বলেই তিনি এত বেশি কাজ করতে পেরেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর যে সুখ্যাতি, হয়তো তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ, নিদেনপক্ষে একটি শিক্ষা কমিশন তাঁর নামে হতে পারত। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাঁকে ভয় পায়। তাই বিশ্বাসও করে না। শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাস আমাদের দেশের এক অদ্ভুত ব্যাপার। তা হলো, রাজনৈতিক দলের প্রতি বিশ্বস্ততাই সেখানে প্রধান যোগ্যতা। এবং সেই বিশ্বস্ততা প্রতি পদে পদে। সবচেয়ে যেটি কঠিন তা হলো ওই রাজনৈতিক দলের সব ভালো-মন্দের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন। এই সমর্থন দেওয়া স্যারের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
যদি পরিস্থিতিটা উল্টো হতো—বুদ্ধিজীবীরা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তত্ত্ব দাঁড় করাবেন এবং রাজনীতিকেরা তাকে অনুসরণ করবেন, তাহলে রাষ্ট্র অনেক বেশি ফলপ্রসূ ও মানবিক হতে পারত। সেই পথ পরিহার করেই একের পর এক শাসকগোষ্ঠী আসে এবং তাদের অনুগত একটা তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী শ্রেণি পেয়ে যায়। যার ফলে সত্য উপেক্ষিত হয়। শাসকগোষ্ঠীও তাদের নিয়ে নানা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করে না। সাম্প্রতিক লেখাগুলোতে তিনি বারবার শিক্ষার বিষয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন। শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদি লগ্নি এবং রাষ্ট্রকে এই লগ্নিটা করতে হয় অনেক ভেবেচিন্তে।
যে দেশে রাজনৈতিক চাপের কাছে শিক্ষাব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়ে সিলেবাস পরিবর্তন হয় এবং শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয় লাখ টাকায়, সেই দেশে প্রমাণ পাওয়া যায় যে শাসকগোষ্ঠী বা নীতিনির্ধারকেরা, বিশেষ করে তাঁরই ছাত্র আমলারা এসবের কোনো তোয়াক্কা করেন না। এই রকম এক অসহায় অবস্থায় পড়েও স্যার নিজেকে কখনো পরাজিত ভাবেননি। একা ভাবেননি কিংবা নিঃসঙ্গও ভাবেননি। দীর্ঘ জীবনে তাই তাঁর প্রেরণা হয়েছে জনগণ। জনগণের নির্বুদ্ধিতা আছে, বোঝার সমস্যা আছে। কিন্তু তিনি ভেবেছেন যে, একদিন হয়তো তারা বুঝবে। আর একদল মানুষ সংখ্যায় তারা কম হলেও যদি বোঝাবার প্রক্রিয়াটা বন্ধ করে দেয়, তাহলে অসত্যেরই জয় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আমরা অনেক মেধাবী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষকদের পেয়েছি, যাঁরা কেউ উচ্চকিত কণ্ঠে অথবা একেবারেই নেপথ্যে বড় বড় কাজ করে গেছেন। কিন্তু এ রকম মানুষ খুব বিরল, যিনি সারা জীবন একইভাবে একই নিষ্ঠা নিয়ে মানুষের সমস্যা, রাষ্ট্রের সমস্যা এবং ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে লিখে যাচ্ছেন, বলে যাচ্ছেন। ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে পাশ্চাত্যের আধুনিক জ্ঞান তিনি অর্জন করেছিলেন। তাঁর মধ্যে একটা জনবিচ্ছিন্নতা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু একেবারেই বাংলা ভাষায় সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে তিনি কঠিন কঠিন বিষয়কেও ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি এ বিষয়ে ক্ষমতাবান। রাষ্ট্রীয় দুঃশাসন বা কোনো অপরাজনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে যখন রুখে দাঁড়াবার প্রয়োজন হয়েছে, তখন মুষ্টিমেয় কিছু লোককেই খুঁজে পাওয়া যেত। স্যার তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
বর্তমানে সাহসী বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের বড়ই অভাব। অনবরত সামনের সারিতে আসার আকাঙ্ক্ষার বুদ্ধিজীবীদের অভাব নেই। উপাচার্যের মতো একটি সম্মানজনক পদের জন্য শিক্ষকদের মধ্যে কী লজ্জাজনক প্রতিযোগিতা! জ্ঞানের চর্চায় বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কাজে শিক্ষকেরা আজকাল বড়ই সক্রিয়। সেই জায়গায় আমাদের প্রিয় শিক্ষক SIC স্যার, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর কলমকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। আমরা সব সময়ই অনুভব করি আমাদের একজন অভিভাবক আছেন, যিনি দেখে যাচ্ছেন কোথাও কোনো গোলমাল হচ্ছে কি না। আমাদের ন্যায়-অন্যায়কেও তিনি দেখে যাচ্ছেন। তাঁর জন্মদিনে আমরা যাঁরা টিনের তলোয়ার নিয়ে লড়াই করি, তাঁদের পক্ষ থেকে স্যারকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে