সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ঢাকার দৃক চিত্রশালা অনেক ভালো কাজ করে থাকে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিবছর বিষয়ভিত্তিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা। তাদের এ বছরের ক্যালেন্ডারের বিষয়বস্তু, ‘সত্যের সন্ধানী যোদ্ধাদের সম্মান জানানো’। নানা ধরনের বিধিনিষেধ বিপদ-আপদ উপেক্ষা যে চিত্র সাংবাদিকেরা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বাস্তবতার ছবি তুলে আনেন, তাঁদের কয়েকজনকে তারা সম্মান জানিয়েছে তাঁদের তোলা ছবি ক্যালেন্ডারে ছাপিয়ে। ধরা যাক মে মাসের জন্য মুদ্রিত ছবিটির কথা। এটি একটি কিশোরের, যার একটি হাত নেই; অন্য হাতে সে বহন করছে কাপড়ের একটি থলে। কিশোরের গায়ের ওপরের অংশে কোনো আবরণ নেই। প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে, তারই মধ্যে একাকী হেঁটে চলেছে সে তার গন্তব্যের দিকে। ছবিটি ঢাকা শহরের একটি রাস্তার। কে জানে তার গন্তব্য কী; গন্তব্য হয়তো একটি ঝুপড়ি। কোনো পথের ধারে। তার সংগ্রাম কোনোমতে টিকে থাকার। তবু সে আছে, সংগ্রামেই আছে এবং থাকবে, যেমন থাকবে তারই মতো দেশের আরও ছয় লাখ কিশোর, যাদের আশ্রয় বলতে কোনো কিছু নেই।
আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে অর্ধনগ্ন একটি শিশুকে, যে ঢাকা শহরেরই একটি বস্তিতে বেলুন নিয়ে একাকী আপন মনে খেলছে। অপর একটি ছবিতে তিনটি কিশোরকে দেখা যাচ্ছে, তারা কামরাঙ্গীরচরে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত। মাঠ বলতে তাদের জন্য কিছু নেই, চারদিকে আবর্জনার স্তূপ, তারই মধ্যে অল্প একটু জায়গা বের করে নিয়ে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেছে।
তিনটি ছবিতেই সংগ্রাম আছে, আর আছে প্রতিবাদ; প্রতিবাদ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেটি এই শিশু-কিশোরদের জীবন থেকে খেলাধুলা, আনন্দ-আশ্রয় একে একে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তাদের সংগ্রাম ও প্রতিবাদই হচ্ছে সেই অবলম্বন, যেটি চলে গেলে হাতছানি আসে আত্মহত্যার। বাস্তব সত্যের সেটিও একটি অংশ বৈকি। সুন্দরবনের ভেতরকার একটি ছবি আছে ক্যালেন্ডারে। বনের ভেতর মরে পড়ে রয়েছে একাকী একটি হরিণ। একদা সে অত্যন্ত জীবন্ত ছিল, সংগ্রামে ছিল। সেসব এখন কিছুই নেই, এখন সে অনড়, মৃত। মারা গেছে খাদ্য ও পানির অভাবে। তার মৃত্যুও একটি প্রতিবাদ বটে, প্রতিবাদ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেটি তার এবং তার মতো আরও বহু প্রাণীর বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
দৃকের ক্যালেন্ডারে প্রতিবাদের ছবি আরও আছে। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে পিকেটিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা মিছিল করে শিক্ষা ভবনে যাওয়ার মুখে ব্যারিকেডের বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করছে, এই ঘটনার ছবিটা অত্যন্ত জীবন্ত।
টেলিভিশন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি আততায়ীদের হাতে নিজেদের আবাসগৃহে নিহত হন ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১০ বছর পার হয়ে গেছে মামলার তদন্তকারীরা আসামিদের শনাক্ত করে আদালতে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করতে সক্ষম হননি। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে তদন্ত ও বিচারের। প্রতিবাদ করা হয়েছে তদন্তে নিশ্চুপতার বিরুদ্ধে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিচারের দাবিতে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকেরা আবারও এক সমাবেশ করেছিলেন ঢাকায়, রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। সমাবেশে যোগ দিয়েছিল সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ। ছেলেটির ছবিটি ক্যালেন্ডারের একটি পাতাজুড়ে স্থান পেয়েছে। করোনার কারণে ছেলেটির নাক-মুখ ঢাকা, মাস্কের রং কালো, কিন্তু তার চোখ দুটি খুবই জীবন্ত, সেই চোখে বিষণ্নতা যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি নীরবে ফুটে উঠেছে মুখর একটি প্রতিবাদে। প্রতিবাদের আরেকটি ছবিতে অপর একটি ঘটনায় পুলিশের নিষ্ঠুরতার যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেটি মর্মান্তিক। করোনা ব্যবস্থাপনায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন লেখক মুশতাক আহমদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ‘অপরাধে’ পুলিশ তাঁকে বন্দী করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে, ২০২০ সালের মে মাসে। কারাগারে বন্দী অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে তিনি প্রাণ হারান। তাঁর ওই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ হয়েছিল। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ভেঙে দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। প্রহারের মুখেও একজন নারী কীভাবে আর্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করছেন, ছবিটি সেই দৃশ্যের।
ক্যালেন্ডারের এই ছবিগুলো দুটি বাস্তবতাকেই তুলে এনেছে—একটি বাস্তবতা যন্ত্রণার, অপরটি দুঃখ ও বিপদের মধ্যেও সংগ্রাম ও প্রতিবাদের। ওই দ্বিতীয়টি আছে বলেই জীবন চলছে, মানুষ বেঁচে আছে। তবে বাঁচাটা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়ছে। সংগ্রামে কুলায় না, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়তে গেলে নতুন নতুন বিপদ এসে হাজির হয়। লেখক মুশতাক আহমদরা বাঁচতে পারেন না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরারকে প্রাণ দিতে হয়। আবরার আত্মহত্যা করবে—এমন কোনো শঙ্কা ছিল না, তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাঁরই সহপাঠী ছাত্রলীগের স্মার্ট নেতারা। আবরারের মৃতদেহটি তাঁরা রাস্তায় নিয়ে ফেলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন, সফল হলে গল্প দাঁড় করানো যেত যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে আবরার। আত্মহত্যা করেছে—এমনটা প্রমাণ করাও অসম্ভব হতো না।
দৃকের ক্যালেন্ডারটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন প্রথিতযশা ফটোগ্রাফার, লেখক ও সংগ্রাহক শহিদুল আলম। তাঁর ক্যামেরাও দুঃখ ও সংগ্রাম উভয় বাস্তবতাকে ধারণ করে দেশে ও বিদেশে বিস্তর সুনাম-প্রশংসা অর্জন করেছে এবং প্রতিবাদী হওয়ার দরুন তাঁকেও কিন্তু বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে—একবার নয়, একাধিকবার। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল মধ্যরাতে তাঁকে তাঁর আবাস থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং বিনা বিচারে একটানা ১০৭ দিন কারাবন্দী করে রাখে। দেশে-বিদেশে প্রবল প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বটে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এখনো চালু রয়েছে। শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সড়কে মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান মিছিল থামানোর জন্য যে ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবতাকে তুলে ধরে একটি বিদেশি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার। ভয়াবহ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্ম, সন্দেহ কী!
‘শিশুকে বাঁচাও’ এই আওয়াজটা পুরোনো, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া চাই অনুচ্চারিত নতুন এক আওয়াজ, ‘কিশোরকে বাঁচাও’। কিশোরেরা যে ভবিষ্যৎ গড়বে, এ বিষয়ে তো কোনো সন্দেহই নেই এবং কিশোরদের ভেতরে ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষমতাও বিস্তর পরিমাণে রয়েছে। আমাদের ইতিহাসেও তার প্রমাণ অনেক। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত গণ-আন্দোলন হয়েছে, প্রতিটিতে তরুণেরা ছিল অগ্রবর্তী ভূমিকায়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদের পতনের আন্দোলন—সবখানেই দেখব কিশোরেরা আছে। অথচ এখন তারা নেই। কোনো আন্দোলনে নেই। উবে গেছে। প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ চায় না তারা আন্দোলনে থাকুক; উল্টো তারা চায় কিশোরেরা বিপথগামী হোক, যাতে শাসকদের শাসন বিঘ্নিত না হয়। অতীত যেন ফেরত না আসে। রাষ্ট্র জ্ঞান বৃদ্ধিতে মোটেই কিশোর নয়; কিশোরদের তুলনায় রাষ্ট্র অনেক বেশি স্মার্ট বটে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকার দৃক চিত্রশালা অনেক ভালো কাজ করে থাকে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিবছর বিষয়ভিত্তিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা। তাদের এ বছরের ক্যালেন্ডারের বিষয়বস্তু, ‘সত্যের সন্ধানী যোদ্ধাদের সম্মান জানানো’। নানা ধরনের বিধিনিষেধ বিপদ-আপদ উপেক্ষা যে চিত্র সাংবাদিকেরা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বাস্তবতার ছবি তুলে আনেন, তাঁদের কয়েকজনকে তারা সম্মান জানিয়েছে তাঁদের তোলা ছবি ক্যালেন্ডারে ছাপিয়ে। ধরা যাক মে মাসের জন্য মুদ্রিত ছবিটির কথা। এটি একটি কিশোরের, যার একটি হাত নেই; অন্য হাতে সে বহন করছে কাপড়ের একটি থলে। কিশোরের গায়ের ওপরের অংশে কোনো আবরণ নেই। প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে, তারই মধ্যে একাকী হেঁটে চলেছে সে তার গন্তব্যের দিকে। ছবিটি ঢাকা শহরের একটি রাস্তার। কে জানে তার গন্তব্য কী; গন্তব্য হয়তো একটি ঝুপড়ি। কোনো পথের ধারে। তার সংগ্রাম কোনোমতে টিকে থাকার। তবু সে আছে, সংগ্রামেই আছে এবং থাকবে, যেমন থাকবে তারই মতো দেশের আরও ছয় লাখ কিশোর, যাদের আশ্রয় বলতে কোনো কিছু নেই।
আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে অর্ধনগ্ন একটি শিশুকে, যে ঢাকা শহরেরই একটি বস্তিতে বেলুন নিয়ে একাকী আপন মনে খেলছে। অপর একটি ছবিতে তিনটি কিশোরকে দেখা যাচ্ছে, তারা কামরাঙ্গীরচরে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত। মাঠ বলতে তাদের জন্য কিছু নেই, চারদিকে আবর্জনার স্তূপ, তারই মধ্যে অল্প একটু জায়গা বের করে নিয়ে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেছে।
তিনটি ছবিতেই সংগ্রাম আছে, আর আছে প্রতিবাদ; প্রতিবাদ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেটি এই শিশু-কিশোরদের জীবন থেকে খেলাধুলা, আনন্দ-আশ্রয় একে একে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তাদের সংগ্রাম ও প্রতিবাদই হচ্ছে সেই অবলম্বন, যেটি চলে গেলে হাতছানি আসে আত্মহত্যার। বাস্তব সত্যের সেটিও একটি অংশ বৈকি। সুন্দরবনের ভেতরকার একটি ছবি আছে ক্যালেন্ডারে। বনের ভেতর মরে পড়ে রয়েছে একাকী একটি হরিণ। একদা সে অত্যন্ত জীবন্ত ছিল, সংগ্রামে ছিল। সেসব এখন কিছুই নেই, এখন সে অনড়, মৃত। মারা গেছে খাদ্য ও পানির অভাবে। তার মৃত্যুও একটি প্রতিবাদ বটে, প্রতিবাদ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেটি তার এবং তার মতো আরও বহু প্রাণীর বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
দৃকের ক্যালেন্ডারে প্রতিবাদের ছবি আরও আছে। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে পিকেটিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা মিছিল করে শিক্ষা ভবনে যাওয়ার মুখে ব্যারিকেডের বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করছে, এই ঘটনার ছবিটা অত্যন্ত জীবন্ত।
টেলিভিশন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি আততায়ীদের হাতে নিজেদের আবাসগৃহে নিহত হন ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১০ বছর পার হয়ে গেছে মামলার তদন্তকারীরা আসামিদের শনাক্ত করে আদালতে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করতে সক্ষম হননি। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে তদন্ত ও বিচারের। প্রতিবাদ করা হয়েছে তদন্তে নিশ্চুপতার বিরুদ্ধে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিচারের দাবিতে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকেরা আবারও এক সমাবেশ করেছিলেন ঢাকায়, রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। সমাবেশে যোগ দিয়েছিল সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ। ছেলেটির ছবিটি ক্যালেন্ডারের একটি পাতাজুড়ে স্থান পেয়েছে। করোনার কারণে ছেলেটির নাক-মুখ ঢাকা, মাস্কের রং কালো, কিন্তু তার চোখ দুটি খুবই জীবন্ত, সেই চোখে বিষণ্নতা যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি নীরবে ফুটে উঠেছে মুখর একটি প্রতিবাদে। প্রতিবাদের আরেকটি ছবিতে অপর একটি ঘটনায় পুলিশের নিষ্ঠুরতার যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেটি মর্মান্তিক। করোনা ব্যবস্থাপনায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন লেখক মুশতাক আহমদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ‘অপরাধে’ পুলিশ তাঁকে বন্দী করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে, ২০২০ সালের মে মাসে। কারাগারে বন্দী অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে তিনি প্রাণ হারান। তাঁর ওই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ হয়েছিল। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ভেঙে দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। প্রহারের মুখেও একজন নারী কীভাবে আর্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করছেন, ছবিটি সেই দৃশ্যের।
ক্যালেন্ডারের এই ছবিগুলো দুটি বাস্তবতাকেই তুলে এনেছে—একটি বাস্তবতা যন্ত্রণার, অপরটি দুঃখ ও বিপদের মধ্যেও সংগ্রাম ও প্রতিবাদের। ওই দ্বিতীয়টি আছে বলেই জীবন চলছে, মানুষ বেঁচে আছে। তবে বাঁচাটা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়ছে। সংগ্রামে কুলায় না, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়তে গেলে নতুন নতুন বিপদ এসে হাজির হয়। লেখক মুশতাক আহমদরা বাঁচতে পারেন না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরারকে প্রাণ দিতে হয়। আবরার আত্মহত্যা করবে—এমন কোনো শঙ্কা ছিল না, তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাঁরই সহপাঠী ছাত্রলীগের স্মার্ট নেতারা। আবরারের মৃতদেহটি তাঁরা রাস্তায় নিয়ে ফেলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন, সফল হলে গল্প দাঁড় করানো যেত যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে আবরার। আত্মহত্যা করেছে—এমনটা প্রমাণ করাও অসম্ভব হতো না।
দৃকের ক্যালেন্ডারটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন প্রথিতযশা ফটোগ্রাফার, লেখক ও সংগ্রাহক শহিদুল আলম। তাঁর ক্যামেরাও দুঃখ ও সংগ্রাম উভয় বাস্তবতাকে ধারণ করে দেশে ও বিদেশে বিস্তর সুনাম-প্রশংসা অর্জন করেছে এবং প্রতিবাদী হওয়ার দরুন তাঁকেও কিন্তু বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে—একবার নয়, একাধিকবার। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল মধ্যরাতে তাঁকে তাঁর আবাস থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং বিনা বিচারে একটানা ১০৭ দিন কারাবন্দী করে রাখে। দেশে-বিদেশে প্রবল প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বটে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এখনো চালু রয়েছে। শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সড়কে মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান মিছিল থামানোর জন্য যে ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবতাকে তুলে ধরে একটি বিদেশি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার। ভয়াবহ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্ম, সন্দেহ কী!
‘শিশুকে বাঁচাও’ এই আওয়াজটা পুরোনো, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া চাই অনুচ্চারিত নতুন এক আওয়াজ, ‘কিশোরকে বাঁচাও’। কিশোরেরা যে ভবিষ্যৎ গড়বে, এ বিষয়ে তো কোনো সন্দেহই নেই এবং কিশোরদের ভেতরে ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষমতাও বিস্তর পরিমাণে রয়েছে। আমাদের ইতিহাসেও তার প্রমাণ অনেক। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত গণ-আন্দোলন হয়েছে, প্রতিটিতে তরুণেরা ছিল অগ্রবর্তী ভূমিকায়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদের পতনের আন্দোলন—সবখানেই দেখব কিশোরেরা আছে। অথচ এখন তারা নেই। কোনো আন্দোলনে নেই। উবে গেছে। প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ চায় না তারা আন্দোলনে থাকুক; উল্টো তারা চায় কিশোরেরা বিপথগামী হোক, যাতে শাসকদের শাসন বিঘ্নিত না হয়। অতীত যেন ফেরত না আসে। রাষ্ট্র জ্ঞান বৃদ্ধিতে মোটেই কিশোর নয়; কিশোরদের তুলনায় রাষ্ট্র অনেক বেশি স্মার্ট বটে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে