বাফুফের টাকা না পরিশোধের ‘বদভ্যাস’

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
Thumbnail image

কোচদের হাসিমুখে এনে ‘অর্ধচন্দ্র’ দিয়ে বিদায় করা আর পারিশ্রমিক নিয়ে ‘মহানাটকের’ সর্বশেষ উদাহরণ ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে কোচিং করানো জেমি ডে দায়িত্ব ছাড়ার পর ন্যূনতম সম্মান পেয়েছেন কি না, সে প্রশ্ন তোলাই যায়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের সাফকে ঘিরে যখন ব্যস্ত জেমি, বাফুফের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো ‘ওএসডি’ করা হয়েছে তাঁকে। চার মাস পর হন আনুষ্ঠানিকভাবে ছাঁটাইও।

২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত চুক্তি থাকায় ৭ মাসের পারিশ্রমিক ৮৬ হাজার ডলার আইনগতভাবেই পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। বাফুফে সেই পারিশ্রমিক শোধও করেনি, পাত্তা দেয়নি জেমির ক্রীড়া আদালতে যাওয়ার হুমকিও। মামলায় শেষ পর্যন্ত জিতেছেন জেমি। ফিফা বাফুফেকে নির্দেশ দিয়েছিল সুদসমেত সেই বকেয়া পরিশোধের। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সময়সীমা শেষ হয়ে এক মাসের বেশি পার হয়েছে। পাওনা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে হয়েছে জেমিকে।

জেমির সর্বশেষ বিবৃতির পরই নড়চড়ে বসেছে বাফুফে। পাল্টা বিবৃতিতে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জেমির পাওনা পরিশোধের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে জেমির অর্থ পরিশোধ করা হবে। প্রশ্ন থেকে যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ছাঁটাই করার পরও এত দিন কেন সাবেক কোচের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি বাফুফে? কোচ ছাঁটাইয়ের পর যেখানে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া আইন, ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কেন সেই আইনকে গুরুত্ব দেননি?

বাফুফে এমন একটা সময়ই নড়েচড়ে বসেছে, যখন কি না দেশে তীব্র ডলার সংকট। সেই ডলার পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হচ্ছে বাফুফেকে। নিতে হচ্ছে ঋণ। সুদসহ জেমির পারিশ্রমিক এখন লাখ ডলারের কাছাকাছি। অথচ ডলারের বিপরীতে টাকার মান যখন ছিল ১০০ টাকার নিচে, তখন বিষয়টি পাত্তা দেয়নি ফেডারেশন। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে যেখানে ১০০ কোটি টাকা খরচে বাংলাদেশে খেলানোর উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন বাফুফের, সেখানে জেমির ১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে কেন ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে বাফুফেকে? এ প্রশ্নে আপাতত বাফুফের কর্মকর্তাদের মুখে তালা।

ক্রীড়া আদালতে জরিমানা গোনার ইতিহাস এটাই নতুন নয় বাফুফের। এর আগেও ডাচ সহকারী কোচ রেনে কোস্টারের জন্য ৮০ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল বাফুফেকে। পরে ৪১ হাজার ইউরোতে মিটেছে তা। ফেডারেশনের এই ‘বদভ্যাস’ সংক্রমিত হয়েছে ক্লাবগুলোতেও। কোচ-খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক না দিয়ে ক্লাবকে জরিমানা গোনার খবর শোনা যায় কিছুদিন পরপরই।

২০১৫ সালে কোচ এমেকা ইজিউগোকে বেতন পরিশোধ না করায় ২০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয় মোহামেডানকে। ২০১৭ সালে সার্বিয়ান মিরোস্লাভ সাবানাভিচের বেতন পরিশোধ না করায় ৩ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানার পাশাপাশি কেটে নেওয়া হয় শেখ রাসেলের ৩ পয়েন্ট। ২০২০ সালে পূর্ব তিমুরের ফুটবলার পেড্রো হেনরিক ওলিভেরাকে দুই মাসের পারিশ্রমিক না দেওয়ায় ৯৬ হাজার ডলার জরিমানা করা হয় একই ক্লাবকে। ২০১৯ সালে এএফসি সলিডারিটি কাপে অংশগ্রহণ না করায় শাস্তি হিসেবে ২০ হাজার ডলার গুনতে হয়েছে বাফুফেকে।

ভবিষ্যতেও হয়তো বিদেশি কোচ আনা হবে। কিন্তু কোচদের এভাবে হয়রানির যে ‘সংস্কৃতি’ তৈরি হচ্ছে দেশের ফুটবলে, সামনের দিনগুলোয় ভালো মানের কোচ বাংলাদেশে আনা মোটেও সহজ হবে না বাফুফের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত