আলী যাকের

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৭: ২৭

সত্তরের দশকে মঞ্চকাঁপানো ‘নূরলদীন’ কিংবা নব্বইয়ের দশকে টিভি নাটকের ‘বড় চাচা’ সব রূপেই দর্শকের মন জয় করেছেন আলী যাকের।

মন জিতে নেওয়া এই লোকটি জন্মেছিলেন ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর, চট্টগ্রামের সদর স্ট্রিটের এক বাড়িতে। পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে হলেও বাবার বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন শহরে বাস করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে আইএ পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। এ সময়ই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান।

১৯৬৭ সালে করাচি গিয়ে ডন ক্রফোর্ডস নামে এক ব্রিটিশ এজেন্সিতে ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ফেরেন। দেশে ফিরে এশিয়াটিকে চাকরি শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এ সময় চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কবিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর কথামতো কলকাতায় স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা চালান।

১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরণ্যকের মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। এরপর সে বছরেই আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। বাংলাদেশে নাটক মঞ্চস্থ এবং টিকিট কেটে নাটক দেখার প্রচলন তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল।

নূরলদীনের সারা জীবন, বাকি ইতিহাস, কোপেনিকের ক্যাপ্টেনসহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তুখোড় নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি। মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। একই সঙ্গে নদীর নাম মধুমতি, লালসালুসহ চারটি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ছিলেন। ছিলেন শৌখিন ফটোগ্রাফার। ফটোগ্রাফিতে দক্ষতার কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফি সোসাইটির স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করেছিলেন।

এই গুণী মানুষটি ক্যানসার ও করোনার সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যান ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত