অরুণ কর্মকার
পৃথিবীর কক্ষপথ যেমন বৃত্তবন্দী, মানুষের জীবন চলার পথও বোধ হয় তেমনি। ঘুরেফিরে একই বৃত্তে চলাচল। বারবার একই বিন্দুতে গিয়ে মেশা। বৃত্তের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণের তো একেবারেই না।
তবে সরকার যে জনসাধারণ নয়, সে তো সবার জানা কথা। সম্পর্ক যা আছে এই দুইয়ের মধ্যে তা হলো, শাসক ও শাসিতের। যদিও শাসকের হাতে শাসনের রাজদণ্ড তুলে দেয় জনসাধারণই। তার কাজ ওইটুকুই। তারপর সেই দণ্ডের আঘাত যখন-তখন তার ঘাড়ে-পিঠে পড়তেও কোনো বাধা নেই।
এই দুস্তর ব্যবধান রচিত হওয়ার পরও, কখনো কখনো সরকার ও জনসাধারণের ভাগ্য, দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য, অথবা বলা যেতে পারে ওই দুইয়ের অবস্থা কিংবা অবস্থান বোধ হয় একই বিন্দুতে মিলিত হতে পারে। নিশ্চয়ই পারে। না হলে আজকের অবস্থা দেখছি কী করে! অবস্থাটা হলো দায়ভারের।
ইংরেজিতে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ বলে একটা কথা আছে। এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুখ্যাতি এবং সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’র মতো। অবস্থা ও অবস্থানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার খাতিরে আমরা একে বলতে পারি সাফল্যের দায়ভার। কিংবা বলা যেতে পারে, উন্নয়নের দায়ভারও। ১২-১৪ বছরে দেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নয়ছয় ছাড়া অন্য প্রায় সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি যে হয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই উন্নয়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃত। আর এখন সেই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই আমাদের উন্নয়নকে এক ভারী বোঝা করে তুলেছে। এই বোঝা বহন করতে জনসাধারণের কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারেরও উপায় নেই এই বোঝা জনসাধারণের ঘাড়ে না চাপিয়ে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করার। এই সেই বিন্দু, যেখানে শাসক ও শাসিত, সরকার ও জনসাধারণ আজ একাকার হয়ে গেছে।
তবে প্রশ্ন হলো, এ জন্য কি শুধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই দায়ী? সরকারের নীতি, অদক্ষতা এসবের কি কোনো দায় নেই? কেউ বলতে পারেন, নেই। কেউ বলতে পারেন, নিশ্চয়ই আছে। এ প্রসঙ্গে আমরা দু-একটি বিষয় আলোচনা করে দেখতে পারি।
প্রথমেই আলোচনায় আসবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কারণ, এই খাতই হলো অর্থনীতি তথা উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তি। তা ছাড়া, ১৪ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের সাফল্য প্রশ্নাতীত। একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য জ্বালানি সংস্থানে সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
এক যুগে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ যেমন বাড়েনি, তেমনি চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও তৈরি করা যায়নি। যেটুকু হয়েছে তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ সরকার জ্বালানি আমদানির ওপরই ভরসা করেছে বেশি।
এখন অবস্থা হয়েছে এমন যে দেশের সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে দুই-এক বছরের মধ্যে ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে অর্থের অভাবে এবং দাম কমলে অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলাফল হলো, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকবে। কত দিন, কত বছর—কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।
এর মধ্যে শীতকাল এলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদা কমবে। তাই বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করলেও লোডশেডিং না করলেও চলতে পারে। কিন্তু গ্যাসের ঘাটতি চলবে। জ্বালানি ঘাটতির চক্র থেকে বের হতে সময় লাগবে।
গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি (বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবির বিক্রি) দাম বেড়েছে ১১ বার। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার। এই দাম আরও অনেক বাড়বে। কারণ, পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রায় ১১ টাকা। তারা পাইকারি বিক্রি করে গড়ে ৬.৭০ টাকা। প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৪.৩০ টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার আর ভর্তুকি না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে আইএমএফের কাছে। পর্যায়ক্রমে এই ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে; অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে দামও সমন্বয় করা হবে, যার অধিকাংশই হবে দাম বাড়ানো।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি পোষাতে দাম বাড়ানো (সমন্বয়) ছাড়া উপায় নেই। এখানে আরেকটি প্রশ্নের উদ্ভব হয়, উৎপাদন খরচ এত বেশি কি শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য? নাকি বিদ্যুতের উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ, নেগোসিয়েশন এবং চুক্তি স্বাক্ষরে অদক্ষতাও কারণ?
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মুখ থেকে আমরা একসময় শুনেছি, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সমস্যা হয়েছে। তারপর শুনেছি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নেগোসিয়েশনের বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই ভারতের আদানি গ্রুপ পিডিবিকে মুরগি বানিয়েছে। সর্বশেষ খবর বেরিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়ন চুক্তিতে ‘কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার ফি)’ নামক এক অযৌক্তিক জরিমানা আরোপের। এই যে সব চুক্তি আর কেনাকাটা, তাতে সব সমস্যাই যে হয়েছে সরকারি সংশ্লিষ্টদের অনিচ্ছাকৃত এবং অনভিজ্ঞতার কারণে, এ কথা জনসাধারণ চোখ বুজে বিশ্বাস করবে কেন? এসব চুক্তি এবং কেনাকাটায় সরকারের কিংবা সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোনো লাভ হয়েছে কি না, তা-ও তো ভেবে দেখার বিষয় হতে পারে।
জ্বালানি প্রসঙ্গে আরও বলা যায়, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না। এখনো নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।
উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও আমাদের কারও অজানা ছিল না। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমাদের জানা। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপও আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। সরকার কিংবা জনসাধারণ কাউকেই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হতে হতো না।
এবার আসি অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গে। অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার মৌলিক নীতি কী? আমরা কি তা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করি? অবকাঠামোগত যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে ওই প্রকল্পের আর্থসামাজিক প্রভাব নিরূপণ ও মূল্যায়ন করা হয়। তাতে প্রকল্পটি কত ব্যয়ে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হবে, তা-ও নিরূপণ করা হয়। তাই যেকোনো দৃশ্যমান অবকাঠামোই যেমন উন্নয়ন প্রকল্প নয়, তেমনি কোনো অবকাঠামো যৌক্তিক ব্যয় ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত না হলে তা থেকে পরিকল্পিত আর্থিক ও সামাজিক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এ ধরনের প্রকল্প উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করে।
আমাদের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই কি নির্ধারিত ব্যয়ে এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়? আমাদের জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা কি আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তার ফল নিয়ে বিশেষভাবে ভেবে দেখার অবকাশ থাকে বৈকি। কেননা, এ ধরনের প্রকল্প দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি এবং অস্থিরতার কারণ হয়ে ওঠে।
অরুণ কর্মকার,জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
পৃথিবীর কক্ষপথ যেমন বৃত্তবন্দী, মানুষের জীবন চলার পথও বোধ হয় তেমনি। ঘুরেফিরে একই বৃত্তে চলাচল। বারবার একই বিন্দুতে গিয়ে মেশা। বৃত্তের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণের তো একেবারেই না।
তবে সরকার যে জনসাধারণ নয়, সে তো সবার জানা কথা। সম্পর্ক যা আছে এই দুইয়ের মধ্যে তা হলো, শাসক ও শাসিতের। যদিও শাসকের হাতে শাসনের রাজদণ্ড তুলে দেয় জনসাধারণই। তার কাজ ওইটুকুই। তারপর সেই দণ্ডের আঘাত যখন-তখন তার ঘাড়ে-পিঠে পড়তেও কোনো বাধা নেই।
এই দুস্তর ব্যবধান রচিত হওয়ার পরও, কখনো কখনো সরকার ও জনসাধারণের ভাগ্য, দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য, অথবা বলা যেতে পারে ওই দুইয়ের অবস্থা কিংবা অবস্থান বোধ হয় একই বিন্দুতে মিলিত হতে পারে। নিশ্চয়ই পারে। না হলে আজকের অবস্থা দেখছি কী করে! অবস্থাটা হলো দায়ভারের।
ইংরেজিতে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ বলে একটা কথা আছে। এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুখ্যাতি এবং সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’র মতো। অবস্থা ও অবস্থানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার খাতিরে আমরা একে বলতে পারি সাফল্যের দায়ভার। কিংবা বলা যেতে পারে, উন্নয়নের দায়ভারও। ১২-১৪ বছরে দেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নয়ছয় ছাড়া অন্য প্রায় সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি যে হয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই উন্নয়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃত। আর এখন সেই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই আমাদের উন্নয়নকে এক ভারী বোঝা করে তুলেছে। এই বোঝা বহন করতে জনসাধারণের কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারেরও উপায় নেই এই বোঝা জনসাধারণের ঘাড়ে না চাপিয়ে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করার। এই সেই বিন্দু, যেখানে শাসক ও শাসিত, সরকার ও জনসাধারণ আজ একাকার হয়ে গেছে।
তবে প্রশ্ন হলো, এ জন্য কি শুধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই দায়ী? সরকারের নীতি, অদক্ষতা এসবের কি কোনো দায় নেই? কেউ বলতে পারেন, নেই। কেউ বলতে পারেন, নিশ্চয়ই আছে। এ প্রসঙ্গে আমরা দু-একটি বিষয় আলোচনা করে দেখতে পারি।
প্রথমেই আলোচনায় আসবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কারণ, এই খাতই হলো অর্থনীতি তথা উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তি। তা ছাড়া, ১৪ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের সাফল্য প্রশ্নাতীত। একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য জ্বালানি সংস্থানে সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
এক যুগে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ যেমন বাড়েনি, তেমনি চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও তৈরি করা যায়নি। যেটুকু হয়েছে তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ সরকার জ্বালানি আমদানির ওপরই ভরসা করেছে বেশি।
এখন অবস্থা হয়েছে এমন যে দেশের সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে দুই-এক বছরের মধ্যে ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে অর্থের অভাবে এবং দাম কমলে অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলাফল হলো, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকবে। কত দিন, কত বছর—কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।
এর মধ্যে শীতকাল এলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদা কমবে। তাই বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করলেও লোডশেডিং না করলেও চলতে পারে। কিন্তু গ্যাসের ঘাটতি চলবে। জ্বালানি ঘাটতির চক্র থেকে বের হতে সময় লাগবে।
গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি (বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবির বিক্রি) দাম বেড়েছে ১১ বার। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার। এই দাম আরও অনেক বাড়বে। কারণ, পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রায় ১১ টাকা। তারা পাইকারি বিক্রি করে গড়ে ৬.৭০ টাকা। প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৪.৩০ টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার আর ভর্তুকি না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে আইএমএফের কাছে। পর্যায়ক্রমে এই ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে; অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে দামও সমন্বয় করা হবে, যার অধিকাংশই হবে দাম বাড়ানো।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি পোষাতে দাম বাড়ানো (সমন্বয়) ছাড়া উপায় নেই। এখানে আরেকটি প্রশ্নের উদ্ভব হয়, উৎপাদন খরচ এত বেশি কি শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য? নাকি বিদ্যুতের উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ, নেগোসিয়েশন এবং চুক্তি স্বাক্ষরে অদক্ষতাও কারণ?
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মুখ থেকে আমরা একসময় শুনেছি, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সমস্যা হয়েছে। তারপর শুনেছি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নেগোসিয়েশনের বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই ভারতের আদানি গ্রুপ পিডিবিকে মুরগি বানিয়েছে। সর্বশেষ খবর বেরিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়ন চুক্তিতে ‘কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার ফি)’ নামক এক অযৌক্তিক জরিমানা আরোপের। এই যে সব চুক্তি আর কেনাকাটা, তাতে সব সমস্যাই যে হয়েছে সরকারি সংশ্লিষ্টদের অনিচ্ছাকৃত এবং অনভিজ্ঞতার কারণে, এ কথা জনসাধারণ চোখ বুজে বিশ্বাস করবে কেন? এসব চুক্তি এবং কেনাকাটায় সরকারের কিংবা সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোনো লাভ হয়েছে কি না, তা-ও তো ভেবে দেখার বিষয় হতে পারে।
জ্বালানি প্রসঙ্গে আরও বলা যায়, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না। এখনো নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।
উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও আমাদের কারও অজানা ছিল না। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমাদের জানা। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপও আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। সরকার কিংবা জনসাধারণ কাউকেই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হতে হতো না।
এবার আসি অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গে। অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার মৌলিক নীতি কী? আমরা কি তা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করি? অবকাঠামোগত যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে ওই প্রকল্পের আর্থসামাজিক প্রভাব নিরূপণ ও মূল্যায়ন করা হয়। তাতে প্রকল্পটি কত ব্যয়ে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হবে, তা-ও নিরূপণ করা হয়। তাই যেকোনো দৃশ্যমান অবকাঠামোই যেমন উন্নয়ন প্রকল্প নয়, তেমনি কোনো অবকাঠামো যৌক্তিক ব্যয় ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত না হলে তা থেকে পরিকল্পিত আর্থিক ও সামাজিক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এ ধরনের প্রকল্প উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করে।
আমাদের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই কি নির্ধারিত ব্যয়ে এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়? আমাদের জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা কি আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তার ফল নিয়ে বিশেষভাবে ভেবে দেখার অবকাশ থাকে বৈকি। কেননা, এ ধরনের প্রকল্প দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি এবং অস্থিরতার কারণ হয়ে ওঠে।
অরুণ কর্মকার,জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে