লেখক রোকেয়া রহমান
তালেবান কাবুল দখল নেওয়ার প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে। আমি আরও অনেক আফগানের মতো যাঁরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সংগ্রাম করে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে এ দেশে জ্ঞান তার মূল্য হারাচ্ছে এবং বই আর মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না।
২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানীতে এসে পৌঁছায়, তখন আমার অনেক বন্ধু নিজেদের কোনো ভবিষ্যৎ না দেখে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টায় বিমানবন্দরে ভিড় জমায়। বহু মেধাবী মানুষ তখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, পিএইচডি ডিগ্রিধারী, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, লেখক, কবি, চিত্রকর—অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ চলে গেছেন। আমার একজন সহকর্মী, আলি রেজা আহমাদি, যিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন, তিনিও দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে, তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা ৬০টি বই ৫০ আফগানিতে (এক ডলারেরও কম) বিক্রি করেছেন। তবে দেশের বাইরে তাঁর যাওয়া হয়নি; খোরাসান প্রদেশের বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বোমা হামলায় তিনি নিহত হন।
আমিও আমার সব বই বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, নারীর অধিকার ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর লেখা তিন শ বই পাবলিক লাইব্রেরিতে দিয়ে দিই এই ভেবে যে, তালেবান শাসিত দেশে আমার কাছে এগুলোর কোনো মূল্য থাকবে না।
আমিও দেশ ছাড়ার উপায় খুঁজতে লাগলাম। ইরানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
আশা করেছিলাম যে সেখানে লাখ লাখ আফগানের মতো আমি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাব। কিন্তু আমার দেশবাসী ও নারীদের মতো আমি সেখানে অবজ্ঞা ও বৈরী আচরণের মুখে পড়ি। আমি ইরানে থাকতে পারব—এই আশা হারিয়ে ফেলি। তখন আমি এমন কিছু খুঁজে পাই, যা আমাকে দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করে। আর সেটা হচ্ছে বইয়ের প্রতি আমার পুরোনো ভালোবাসা।
একদিন আমি তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ার ধরে হাঁটছিলাম। সেখানে বইয়ের দোকানগুলোতে না ঢুকে পারলাম না। দোকানগুলোতে মানবাধিকার ও নারীর অধিকার-সম্পর্কিত এমন কিছু বই ছিল, যা আমি আফগানিস্তানে কখনো দেখিনি। আমার কাছে থাকা সামান্য অর্থের বেশির ভাগই ব্যয় করেছি বইগুলো কিনতে। বইগুলো নিয়ে আমি দেশে ফিরে আমার পুরোনো জীবনধারায়—বই দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনায় যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিই।
দেশে ফিরে আসার পর আমি আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা এবং ইসলামে নারীর রাজনৈতিক অধিকার-সম্পর্কিত একটি বইয়ের ওপর কাজ শুরু করি, যা প্রায় এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পেরেছি। আমি পাণ্ডুলিপিটি বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে পাঠাই। কিন্তু তাঁরা বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তাঁরা বিষয়টিকে খুব সংবেদনশীল বলে মনে করেছিলেন। ভেবেছিলেন, এসব প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া অসম্ভব।
অবশেষে মাদার প্রেসের আলি কোহিস্তানি বইটি নিতে রাজি হলেন। তিনি প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করেছিলেন এবং পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশের আনুষ্ঠানিক অনুমতির জন্য তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেন। শিগগিরই বই পর্যালোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি আমাকে প্রশ্ন এবং সমালোচনার একটি দীর্ঘ তালিকা পাঠায়, যা আমাকে সমাধান করতে হয়।
আমি তাদের পাঠানো প্রতিক্রিয়াসহ বইটি সংশোধন করি, কিন্তু অনুমতি পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। পাঁচ মাস হয়ে গেছে যে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি এবং আমার হতাশা দিন দিন বাড়ছে।
কোহিস্তানি পাণ্ডুলিপির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বহুবার মন্ত্রণালয়ে গেছেন, কোনো ফল হয়নি। তিনি আমাকে বলেছেন যে তাঁর আরও পাঁচটি বই রয়েছে, যা তিনি এ বছর প্রকাশ করতে চান। তবে এসবের কোনোটির ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন আসেনি।
অন্য প্রকাশকেরাও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা এবং দীর্ঘ বিলম্বের কারণে ভুগছেন। তাঁরা বলেন, তালেবানরা সেই বইগুলোই কেবল প্রকাশ করতে চায়, যেগুলো তাদের আদর্শের মধ্যে পড়ে।
প্রকাশনার অনুমতি দিতে দেরি করা এবং সেন্সরশিপ আফগানিস্তানের বইশিল্পের একমাত্র সমস্যা নয়। গত দুই বছরে অনেক বইয়ের দোকান ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কাবুলের পুল-ই-সুরখ এলাকার বইয়ের কম্পাউন্ডে বেশির ভাগ বইয়ের দোকান এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে আমি প্রায়ই এসব দোকানে আসতাম।
মেয়েদের হাইস্কুল এবং নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করার তালেবানের সিদ্ধান্তের অর্থ হলো তারা আর বই কিনছে না। কিশোর ও তরুণেরাও স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। কারণ তাদের বোঝানো হচ্ছে যে এসব শিক্ষা তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এতে বই বিক্রেতাদের গ্রাহকসংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে।
তার ওপরে তালেবান সরকার বই বিক্রির ওপর চড়া কর আরোপ করেছে, যা বইয়ের দোকানের মালিক এবং প্রকাশকদের কমতে থাকা আয় আরও কমিয়ে দিয়েছে।
সারা দেশের লাইব্রেরিগুলোও তাদের পাঠক হারিয়েছে, কারণ সেখানে কম লোকই পড়াশোনা করতে বা বই ধার করতে যায়। বিভিন্ন বই ক্লাব, সাহিত্য সমিতি ও পাঠকদের বই পড়ার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আফগান বই প্রকাশনা একটি সম্ভাবনাময় খাত এবং সম্ভবত সবচেয়ে সফল দেশীয় শিল্প থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে রাতারাতি। আমি একজন গর্বিত লেখক এবং বইয়ের মালিক থেকে একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছি, যে কিনা আফগানিস্তানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে জীবন ধারণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
আফগানিস্তানের এই অবস্থা দেখা অত্যন্ত বেদনাদায়ক—যে দেশে কিনা সাহিত্যের একটি দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিল। এই দেশটি বিশ্বকে জালাল আদ-দ্বীন মুহাম্মাদ বলখির (যিনি রুমি নামেও পরিচিত) মতো ও হাকিম সানাই গজনবির (যিনি সানাই নামেও পরিচিত) মতো কবি এবং ইবনে সিনা বলখির মতো চিকিৎসক (যিনি আভিসেনা নামেও পরিচিত) উপহার দিয়েছে। আর সে দেশের এখন এই অবস্থা!
পড়া, লেখা ও জ্ঞান প্রচার আমার দেশে সব সময় অত্যন্ত সম্মানের বিষয় ছিল। বিভিন্ন রাজবংশের আফগান শাসকেরা চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন এবং শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনকে সমর্থন করেছেন। শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও বইয়ের অবমূল্যায়ন কখনোই আফগান ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির অংশ ছিল না।
বিশ্বের ইতিহাসে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারেনি যখন তার শাসকেরা জ্ঞান, শিক্ষা ও মুক্তচিন্তাকে অবদমিত করে রেখেছিলেন। আফগানিস্তান অন্ধকার ও অজ্ঞতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেটা আমাকে ভীত করে তুলছে। বই ও জ্ঞানকে হত্যা—এ দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
তালেবান কাবুল দখল নেওয়ার প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে। আমি আরও অনেক আফগানের মতো যাঁরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সংগ্রাম করে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে এ দেশে জ্ঞান তার মূল্য হারাচ্ছে এবং বই আর মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না।
২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানীতে এসে পৌঁছায়, তখন আমার অনেক বন্ধু নিজেদের কোনো ভবিষ্যৎ না দেখে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টায় বিমানবন্দরে ভিড় জমায়। বহু মেধাবী মানুষ তখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, পিএইচডি ডিগ্রিধারী, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, লেখক, কবি, চিত্রকর—অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ চলে গেছেন। আমার একজন সহকর্মী, আলি রেজা আহমাদি, যিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন, তিনিও দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে, তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা ৬০টি বই ৫০ আফগানিতে (এক ডলারেরও কম) বিক্রি করেছেন। তবে দেশের বাইরে তাঁর যাওয়া হয়নি; খোরাসান প্রদেশের বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বোমা হামলায় তিনি নিহত হন।
আমিও আমার সব বই বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, নারীর অধিকার ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর লেখা তিন শ বই পাবলিক লাইব্রেরিতে দিয়ে দিই এই ভেবে যে, তালেবান শাসিত দেশে আমার কাছে এগুলোর কোনো মূল্য থাকবে না।
আমিও দেশ ছাড়ার উপায় খুঁজতে লাগলাম। ইরানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
আশা করেছিলাম যে সেখানে লাখ লাখ আফগানের মতো আমি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাব। কিন্তু আমার দেশবাসী ও নারীদের মতো আমি সেখানে অবজ্ঞা ও বৈরী আচরণের মুখে পড়ি। আমি ইরানে থাকতে পারব—এই আশা হারিয়ে ফেলি। তখন আমি এমন কিছু খুঁজে পাই, যা আমাকে দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করে। আর সেটা হচ্ছে বইয়ের প্রতি আমার পুরোনো ভালোবাসা।
একদিন আমি তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ার ধরে হাঁটছিলাম। সেখানে বইয়ের দোকানগুলোতে না ঢুকে পারলাম না। দোকানগুলোতে মানবাধিকার ও নারীর অধিকার-সম্পর্কিত এমন কিছু বই ছিল, যা আমি আফগানিস্তানে কখনো দেখিনি। আমার কাছে থাকা সামান্য অর্থের বেশির ভাগই ব্যয় করেছি বইগুলো কিনতে। বইগুলো নিয়ে আমি দেশে ফিরে আমার পুরোনো জীবনধারায়—বই দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনায় যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিই।
দেশে ফিরে আসার পর আমি আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা এবং ইসলামে নারীর রাজনৈতিক অধিকার-সম্পর্কিত একটি বইয়ের ওপর কাজ শুরু করি, যা প্রায় এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পেরেছি। আমি পাণ্ডুলিপিটি বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে পাঠাই। কিন্তু তাঁরা বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তাঁরা বিষয়টিকে খুব সংবেদনশীল বলে মনে করেছিলেন। ভেবেছিলেন, এসব প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া অসম্ভব।
অবশেষে মাদার প্রেসের আলি কোহিস্তানি বইটি নিতে রাজি হলেন। তিনি প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করেছিলেন এবং পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশের আনুষ্ঠানিক অনুমতির জন্য তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেন। শিগগিরই বই পর্যালোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি আমাকে প্রশ্ন এবং সমালোচনার একটি দীর্ঘ তালিকা পাঠায়, যা আমাকে সমাধান করতে হয়।
আমি তাদের পাঠানো প্রতিক্রিয়াসহ বইটি সংশোধন করি, কিন্তু অনুমতি পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। পাঁচ মাস হয়ে গেছে যে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি এবং আমার হতাশা দিন দিন বাড়ছে।
কোহিস্তানি পাণ্ডুলিপির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বহুবার মন্ত্রণালয়ে গেছেন, কোনো ফল হয়নি। তিনি আমাকে বলেছেন যে তাঁর আরও পাঁচটি বই রয়েছে, যা তিনি এ বছর প্রকাশ করতে চান। তবে এসবের কোনোটির ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন আসেনি।
অন্য প্রকাশকেরাও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা এবং দীর্ঘ বিলম্বের কারণে ভুগছেন। তাঁরা বলেন, তালেবানরা সেই বইগুলোই কেবল প্রকাশ করতে চায়, যেগুলো তাদের আদর্শের মধ্যে পড়ে।
প্রকাশনার অনুমতি দিতে দেরি করা এবং সেন্সরশিপ আফগানিস্তানের বইশিল্পের একমাত্র সমস্যা নয়। গত দুই বছরে অনেক বইয়ের দোকান ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কাবুলের পুল-ই-সুরখ এলাকার বইয়ের কম্পাউন্ডে বেশির ভাগ বইয়ের দোকান এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগে আমি প্রায়ই এসব দোকানে আসতাম।
মেয়েদের হাইস্কুল এবং নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করার তালেবানের সিদ্ধান্তের অর্থ হলো তারা আর বই কিনছে না। কিশোর ও তরুণেরাও স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। কারণ তাদের বোঝানো হচ্ছে যে এসব শিক্ষা তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এতে বই বিক্রেতাদের গ্রাহকসংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে।
তার ওপরে তালেবান সরকার বই বিক্রির ওপর চড়া কর আরোপ করেছে, যা বইয়ের দোকানের মালিক এবং প্রকাশকদের কমতে থাকা আয় আরও কমিয়ে দিয়েছে।
সারা দেশের লাইব্রেরিগুলোও তাদের পাঠক হারিয়েছে, কারণ সেখানে কম লোকই পড়াশোনা করতে বা বই ধার করতে যায়। বিভিন্ন বই ক্লাব, সাহিত্য সমিতি ও পাঠকদের বই পড়ার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আফগান বই প্রকাশনা একটি সম্ভাবনাময় খাত এবং সম্ভবত সবচেয়ে সফল দেশীয় শিল্প থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে রাতারাতি। আমি একজন গর্বিত লেখক এবং বইয়ের মালিক থেকে একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছি, যে কিনা আফগানিস্তানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে জীবন ধারণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
আফগানিস্তানের এই অবস্থা দেখা অত্যন্ত বেদনাদায়ক—যে দেশে কিনা সাহিত্যের একটি দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিল। এই দেশটি বিশ্বকে জালাল আদ-দ্বীন মুহাম্মাদ বলখির (যিনি রুমি নামেও পরিচিত) মতো ও হাকিম সানাই গজনবির (যিনি সানাই নামেও পরিচিত) মতো কবি এবং ইবনে সিনা বলখির মতো চিকিৎসক (যিনি আভিসেনা নামেও পরিচিত) উপহার দিয়েছে। আর সে দেশের এখন এই অবস্থা!
পড়া, লেখা ও জ্ঞান প্রচার আমার দেশে সব সময় অত্যন্ত সম্মানের বিষয় ছিল। বিভিন্ন রাজবংশের আফগান শাসকেরা চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করেছেন এবং শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনকে সমর্থন করেছেন। শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও বইয়ের অবমূল্যায়ন কখনোই আফগান ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির অংশ ছিল না।
বিশ্বের ইতিহাসে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারেনি যখন তার শাসকেরা জ্ঞান, শিক্ষা ও মুক্তচিন্তাকে অবদমিত করে রেখেছিলেন। আফগানিস্তান অন্ধকার ও অজ্ঞতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেটা আমাকে ভীত করে তুলছে। বই ও জ্ঞানকে হত্যা—এ দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে