ঘুঘুডাঙায় তালপিঠার উৎসব

সিয়াম সাহারিয়া, নওগাঁ
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ২৬

পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। গাছের নিচেই বসেছে বিভিন্ন পণ্য ও হরেক রকমের তালপিঠার দোকান। তাতে থরে থরে সাজানো বাহারি পিঠা। সড়কের পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় বসেছে সংগীতের আসর। গানের সুরে পিঠার স্বাদ নিতে মেতে উঠেছেন হাজারো মানুষ। তালের পিঠার এই উৎসব শুরু হয়েছে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ঘুঘুডাঙা তালতলি সড়কের পাশে।

গতকাল শনিবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। এই মেলা চলবে ৩ থেকে ৪ দিন, সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজিনগর ইউনিয়নের তালতলি মোড় থেকে ঘুঘুডাঙা মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে রয়েছে সারি সারি তালগাছ। সড়কটি দেখে মনে হবে এ যেন পটে আঁকা ছবি। জানা যায়, হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান থাকার সময় ৩৬ বছর আগে তালের চারা রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেই তালগাছগুলো পরিচর্যা আর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সড়কের দুই ধারে সৌন্দর্যবর্ধন করছে এখন। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সাধন চন্দ্র এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতেন। সে কারণে সড়কটি ছিল তাঁর নজরদারিতে। সড়কটি আজ বরেন্দ্র অঞ্চলের দৃষ্টিকাড়া তাল সড়কে পরিণত হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, ১৫ থেকে ২০টি সংগঠন পিঠা উৎসবে অংশ নিয়েছে। তারা প্রায় ৩০ ধরনের তালের পিঠা এনেছে। পাকান, পুলিসহ সচরাচর যেসব পিঠা দোকানে পাওয়া যায়, সেগুলো ছাড়া রয়েছে হৃদয় হরণ, ঝিনুক পিঠা, তালের কেক, তালের ফুলঝুরি, পাখির বাসা, তালের মাংস শিঙাড়াসহ বিচিত্র সব পিঠা। পিঠার দাম ১০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

‘মিনা পিঠা ঘরে’র মালিক মিনা বেগম জানান, তাল দিয়ে তৈরি এমন ১৫ থেকে ২০ রকমের পিঠা নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন। তবে তাল সড়কের পাশে তালের পিঠা নিয়ে এমন উৎসবে অংশ নেননি আগে।

দর্শনার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ‘সারি সারি তালগাছের সড়কে  এলে এমনিতেই হৃদয়ে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। এর মাঝে তাল সড়কের পাশে একসঙ্গে এত রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে! বিভিন্ন ধরনের পিঠা দেখে এবং তার স্বাদ নিতে পেরে অনেক খুশি।’

উৎসবের আয়োজক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এবারের উৎসবে বিপুলসংখ্যক মানুষের সাড়া পেয়ে আমরা অভিভূত। দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হরেক রকমের পিঠা নিয়ে এখানে স্টল দিয়েছে। ঘুঘুডাঙার তাল সড়কের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে খাসজমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।’ ভবিষ্যতেও এখানে পিঠা উৎসব আয়োজনের ইচ্ছে রয়েছে বলে জানান ফরিদ আহমেদ।

মেলা ঘুরে দেখার পর অনুষ্ঠানের উদ্বোধক খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তালপিঠা। ঘুঘুডাঙার দৃষ্টিনন্দন তালগাছের নিচে তালপিঠা উৎসব আমাদের সেই সংস্কৃতির শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার 
সড়কজুড়ে এই তালগাছগুলো আমি রোপণ করেছিলাম। আজ সেসব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত