মযহারুল ইসলাম বাবলা
বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) একটি উক্তি বেশ আলোচিত হয়েছিল। ‘কুকুরে লেজ নাড়ায়, না লেজ কুকুরকে নাড়ায়’। স্বীয় দলের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে উক্তিটি করেছিলেন সাকা চৌধুরী।
দেশের মানুষের প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ দলটি ধর্মনিরপেক্ষ না হলেও অসাম্প্রদায়িক। সেটা অসংগতও নয়। কেননা, এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই তিন নীতির ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের মূলনীতি নির্ধারিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বাহাত্তরে সংবিধান প্রণয়নের সময় জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত করে শাসনতন্ত্রের চার প্রধান নীতি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে। ২৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই তিন নীতির ওপর ভিত্তি করেই দেশকে গড়ে তোলা হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এই মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন আইনের শাসন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি শোষণ ও বৈষম্য চিরতরে অবসানের জন্য এবং একমাত্র সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ দেশের সকল মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করা সম্ভব।’ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে দিল্লির সংবর্ধনা সভায় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে দেওয়া ভাষণে অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনিও সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সরকারপ্রধানরূপে তিনি আগের অবস্থানে অবিচল থাকতে পারেননি। সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রথম আঘাতটি আসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে। ওআইসি একটি ধর্মভিত্তিক জোট। যার সব সদস্য মুসলিম রাষ্ট্র। যারা ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে না। ওআইসিভুক্ত অধিকাংশ রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। বিপরীতে চরম বিরোধিতা করেছিল। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ওই সম্মেলনে হাজির করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার অন্তর্গত ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রথম আঘাতটি এসেছিল। পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিদায় করে এবং নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি উন্মুক্ত করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। অপর সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ আরও এক কদম এগিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তন করেন। বর্তমান সরকার এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে রাষ্ট্রের ওপর বিশেষ ধর্মের স্থায়ী মোড়ক এঁটে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে দিয়েছে।
আমাদের স্মরণে নিশ্চয় আছে, ২০০৬ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ছয় দফা আপস চুক্তি করেছিল, উদ্দেশ্য অভিন্ন; অর্থাৎ তাদের সমর্থন লাভে ক্ষমতায় যাওয়া। এ নিয়ে প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির প্রমুখ ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে জোর প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে সমর্থন আদায়ে ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের কাছে দোয়া চাইতে যেতে হয়েছিল। তারপরও বদরুল হায়দার চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
দেশবরেণ্য বিদগ্ধ চার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর ব্যাপারে সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওবায়দুল কাদের সরকারপ্রধানের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছেন, ‘সরকার হেফাজতে ইসলাম বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো আপস করেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল অবস্থানে অক্ষুণ্ন আছে। সরকার চালাতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।’ ওই চারজন বিদগ্ধ ব্যক্তির একজন বলেছেন, ‘এই বৈঠকে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের আদর্শিক জায়গায় ভিন্নতা নেই। তবে কৌশলের জায়গায় ভিন্নতা আছে।’ আমাদের প্রশ্ন, আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে কৌশল অবলম্বন করায় আদর্শ আর থাকে কীভাবে? আদর্শ বর্জন করে কৌশল গ্রহণকে পৃথকভাবে বিবেচনা করার সুযোগ কোথায়? তাহলে আদর্শ আর কৌশলকে দুইভাবে উনি দেখেছেন কীভাবে? কৌশলের কাছে যদি আদর্শ বিকিয়ে যায়, তাহলে আদর্শ বলে তো কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে বা ঘটানোর সুযোগ পায়, তার পেছনে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাধরদের ইন্ধন যে নেই, সেটাও নিশ্চয় বলা যাবে না। সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠীকে আশকারা দেওয়ার মাশুল দিয়ে চলছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। সাম্প্রতিক সময়ে নড়াইলের ঘটনাটি তারই জ্বলন্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানি আমলের চেয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণ্য অপকীর্তি স্বাধীন বাংলাদেশে পরিমাণগত যে বেশি হয়েছে, সেটা স্বীকার করতেই হবে। আর এর মূলে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক দাবিদার শাসক দলের ভোটের রাজনীতি। রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম যোগ যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপমহাদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে। স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীকে পর্যন্ত প্রাণ দিতে হয়েছে হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা। দেশে যে অরাজক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উদ্ভব ও বিরাজ করছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। বাংলায় প্রবচন রয়েছে, ‘সর্পের মস্তকে মণি থাকিলেও, সেকি ভয়ংকর নহে’? ভোটের রাজনীতির মণিপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ অচিরেই বুঝবে সাপের লেজে পা দেওয়ার মাশুল কতটা ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হতে পারে।
হেফাজতে ইসলাম তাদের ইচ্ছানুযায়ী কওমি মাদ্রাসা চালাবে। সরকারের হস্তক্ষেপ তারা মানবে না। মাদ্রাসা ছেড়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা মাধ্যমিকে হাত ঢুকিয়েছে। ব্যাপক রদবদলে মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। প্রতিটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক ভাস্কর্য শিল্প ধ্বংসের প্রবণতা নতুন নয়। অতীতে শিশু একাডেমির চত্বরে ‘দুরন্ত’ ভাস্কর্যটি রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টেও ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছিল। সেনাসমর্থিত সরকারের শাসনামলে বিমানবন্দরের সড়কদ্বীপে ‘লালন’ ভাস্কর্য অপসারণেও তাদের মুখ্য ভূমিকা ছিল।
যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে নৈতিকভাবে গ্রহণ ও স্বীকার করতে পারেনি, তাদের কাছে নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার অভিলাষে সরকারের এই আপস-আত্মসমর্পণ দেশ-জাতিকে চরম লজ্জা-অপমানে ফেলেছে। প্রশ্ন আসে, সরকার হেফাজতকে নাড়ছে, না হেফাজত সরকারকে নাড়ছে। এ ক্ষেত্রে হেফাজতের সাফল্যের পাল্লাটাই ভারী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার সরকারের সাফল্য কোথায়?
বর্তমানে দেশজুড়ে যে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার দায় সরকার কী করে এড়াবে? ভোটের রাজনীতি তাদের কাছে ওই সর্পের মণির আশা করার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) একটি উক্তি বেশ আলোচিত হয়েছিল। ‘কুকুরে লেজ নাড়ায়, না লেজ কুকুরকে নাড়ায়’। স্বীয় দলের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে উক্তিটি করেছিলেন সাকা চৌধুরী।
দেশের মানুষের প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ দলটি ধর্মনিরপেক্ষ না হলেও অসাম্প্রদায়িক। সেটা অসংগতও নয়। কেননা, এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই তিন নীতির ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের মূলনীতি নির্ধারিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বাহাত্তরে সংবিধান প্রণয়নের সময় জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত করে শাসনতন্ত্রের চার প্রধান নীতি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে। ২৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই তিন নীতির ওপর ভিত্তি করেই দেশকে গড়ে তোলা হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এই মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন আইনের শাসন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি শোষণ ও বৈষম্য চিরতরে অবসানের জন্য এবং একমাত্র সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ দেশের সকল মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করা সম্ভব।’ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে দিল্লির সংবর্ধনা সভায় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে দেওয়া ভাষণে অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনিও সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সরকারপ্রধানরূপে তিনি আগের অবস্থানে অবিচল থাকতে পারেননি। সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রথম আঘাতটি আসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে। ওআইসি একটি ধর্মভিত্তিক জোট। যার সব সদস্য মুসলিম রাষ্ট্র। যারা ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে না। ওআইসিভুক্ত অধিকাংশ রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। বিপরীতে চরম বিরোধিতা করেছিল। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ওই সম্মেলনে হাজির করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার অন্তর্গত ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রথম আঘাতটি এসেছিল। পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিদায় করে এবং নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি উন্মুক্ত করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। অপর সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ আরও এক কদম এগিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তন করেন। বর্তমান সরকার এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে রাষ্ট্রের ওপর বিশেষ ধর্মের স্থায়ী মোড়ক এঁটে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে দিয়েছে।
আমাদের স্মরণে নিশ্চয় আছে, ২০০৬ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ছয় দফা আপস চুক্তি করেছিল, উদ্দেশ্য অভিন্ন; অর্থাৎ তাদের সমর্থন লাভে ক্ষমতায় যাওয়া। এ নিয়ে প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির প্রমুখ ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে জোর প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে সমর্থন আদায়ে ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের কাছে দোয়া চাইতে যেতে হয়েছিল। তারপরও বদরুল হায়দার চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
দেশবরেণ্য বিদগ্ধ চার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর ব্যাপারে সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওবায়দুল কাদের সরকারপ্রধানের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছেন, ‘সরকার হেফাজতে ইসলাম বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো আপস করেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল অবস্থানে অক্ষুণ্ন আছে। সরকার চালাতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।’ ওই চারজন বিদগ্ধ ব্যক্তির একজন বলেছেন, ‘এই বৈঠকে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের আদর্শিক জায়গায় ভিন্নতা নেই। তবে কৌশলের জায়গায় ভিন্নতা আছে।’ আমাদের প্রশ্ন, আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে কৌশল অবলম্বন করায় আদর্শ আর থাকে কীভাবে? আদর্শ বর্জন করে কৌশল গ্রহণকে পৃথকভাবে বিবেচনা করার সুযোগ কোথায়? তাহলে আদর্শ আর কৌশলকে দুইভাবে উনি দেখেছেন কীভাবে? কৌশলের কাছে যদি আদর্শ বিকিয়ে যায়, তাহলে আদর্শ বলে তো কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে বা ঘটানোর সুযোগ পায়, তার পেছনে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাধরদের ইন্ধন যে নেই, সেটাও নিশ্চয় বলা যাবে না। সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠীকে আশকারা দেওয়ার মাশুল দিয়ে চলছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। সাম্প্রতিক সময়ে নড়াইলের ঘটনাটি তারই জ্বলন্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানি আমলের চেয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণ্য অপকীর্তি স্বাধীন বাংলাদেশে পরিমাণগত যে বেশি হয়েছে, সেটা স্বীকার করতেই হবে। আর এর মূলে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক দাবিদার শাসক দলের ভোটের রাজনীতি। রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম যোগ যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপমহাদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে। স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীকে পর্যন্ত প্রাণ দিতে হয়েছে হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা। দেশে যে অরাজক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উদ্ভব ও বিরাজ করছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। বাংলায় প্রবচন রয়েছে, ‘সর্পের মস্তকে মণি থাকিলেও, সেকি ভয়ংকর নহে’? ভোটের রাজনীতির মণিপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ অচিরেই বুঝবে সাপের লেজে পা দেওয়ার মাশুল কতটা ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হতে পারে।
হেফাজতে ইসলাম তাদের ইচ্ছানুযায়ী কওমি মাদ্রাসা চালাবে। সরকারের হস্তক্ষেপ তারা মানবে না। মাদ্রাসা ছেড়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা মাধ্যমিকে হাত ঢুকিয়েছে। ব্যাপক রদবদলে মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। প্রতিটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক ভাস্কর্য শিল্প ধ্বংসের প্রবণতা নতুন নয়। অতীতে শিশু একাডেমির চত্বরে ‘দুরন্ত’ ভাস্কর্যটি রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টেও ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছিল। সেনাসমর্থিত সরকারের শাসনামলে বিমানবন্দরের সড়কদ্বীপে ‘লালন’ ভাস্কর্য অপসারণেও তাদের মুখ্য ভূমিকা ছিল।
যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে নৈতিকভাবে গ্রহণ ও স্বীকার করতে পারেনি, তাদের কাছে নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার অভিলাষে সরকারের এই আপস-আত্মসমর্পণ দেশ-জাতিকে চরম লজ্জা-অপমানে ফেলেছে। প্রশ্ন আসে, সরকার হেফাজতকে নাড়ছে, না হেফাজত সরকারকে নাড়ছে। এ ক্ষেত্রে হেফাজতের সাফল্যের পাল্লাটাই ভারী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার সরকারের সাফল্য কোথায়?
বর্তমানে দেশজুড়ে যে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার দায় সরকার কী করে এড়াবে? ভোটের রাজনীতি তাদের কাছে ওই সর্পের মণির আশা করার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে