মহিউদ্দিন খান মোহন
বিশ্ব বিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। আলেকজান্ডার তাঁর শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম ইনডেটেড টু মাই ফাদার ফর লিভিং, বাট টু মাই টিচার ফর লিভিং ওয়েল।’ অর্থাৎ তিনি পিতার কাছে তাঁর জীবনের জন্য ঋণী, কিন্তু ভালোভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষার জন্য অ্যারিস্টটলের কাছে ঋণী।
আলেকজান্ডারের মন্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। বাস্তবিক একজন মানুষের কাছে মা-বাবার পরই তাঁর শিক্ষকের অবস্থান। মা-বাবা সন্তানকে জন্ম দেন, কিন্তু তাঁকে শিক্ষা দিয়ে আক্ষরিক অর্থে মানুষ করে তোলেন একজন শিক্ষক। তাই সমাজে একজন শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ। আমার যাঁরা শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। তিনজন এখনো আছেন। পরিমল চন্দ্র দাস, আবদুল লতিফ মিয়া এবং প্রহ্লাদ চন্দ্র বণিক।
তাঁরাসহ অন্য শিক্ষকেরা অত্যন্ত যত্নসহকারে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা যে যেটুকু ওপরে উঠতে পেরেছি, তার পেছনে রয়েছে সেই সব শিক্ষকের আন্তরিক শিক্ষাদান। আর এর জন্য আমরা চিরঋণী তাঁদের কাছে। এখনো দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে কদমবুচি করে দোয়া চাই। শিক্ষকদের প্রতি এই আমাদের শ্রদ্ধাবোধ কিন্তু এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। আচরণ এবং চারিত্রিক বলিষ্ঠতা দ্বারা এটা তাঁরা অর্জন করেছেন।
আগেই বলেছি, শিক্ষকেরা সমাজে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনের অধিকারী। কিন্তু আজ সে আসন অনেকটাই টালমাটাল হয়ে উঠেছে কতিপয় শিক্ষক নামধারী দুর্বৃত্ত ও লম্পটের কারণে। অতিসম্প্রতি দেশের অন্যতম উৎকৃষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন সে রয়েছে পুলিশ হেফাজতে। আদালত তাকে পাঠিয়েছেন দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মুরাদ প্রাইভেট কোচিংয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করত। তার বিরুদ্ধে তিনজন ছাত্রীর অভিযোগের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অভিযোগ এক বছর আগের। মুরাদ হোসেন হজ করে আসার পর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বিধায় তাকে বরখাস্ত না করে শেষবারের মতো সতর্ক করে অন্য শাখায় বদলি করা যেতে পারে।’ অপরদিকে অভিযোগকারীরা বলছেন, হজ থেকে এসেও মুরাদ একই অপকর্ম করেছে। তাঁরা উচ্চতর তদন্তে যাতে পক্ষপাত না থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষের তদন্তে তাকে রক্ষার প্রয়াস লক্ষণীয়।
‘মুরাদ হজ করে আসার পর আর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি’—এ কথায় এটাই স্পষ্ট যে হজ করার আগে সে এ ধরনের অপরাধ করেছে এবং তা স্কুল কর্তৃপক্ষের গোচরে রয়েছে। এখানে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়, একজন শিক্ষকের লাম্পট্যের কথা জানা সত্ত্বেও কেন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আগেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি? ছাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির বিষয়টিও যে এর সঙ্গে জড়িত তা কি তারা বিস্মৃত হয়েছিল? একজন দুর্বৃত্ত কী করে দেশের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের পদে থাকতে পারে, এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, তারা তাদের শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ যেন মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা। প্রাইভেট কোচিং বন্ধ হলেই কি শিক্ষক নামের কতিপয় চরিত্রহীন-লম্পটের অপকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে?
এদিকে ২৯ ফেব্রুয়ারির একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রিমান্ডে মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের কিছু প্রমাণ পেয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ১২ বছর আগে ২০১১ সালে এই ভিকারুননিসা স্কুলেরই আরেক শিক্ষক পরিমল জয়ধর প্রাইভেট কোচিংয়ে ধর্ষণ করেছিল এক ছাত্রীকে। সে মামলায় ২০১৫ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। লম্পট মুরাদের শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি হয়েছে। সেও তার অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তি পাবে বলে দেশবাসী আশা করে।
এটা ঠিক, পরিমল জয়ধর কিংবা মুরাদ হোসেনদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে ‘এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনা’ যেমন পুরো দুধকে পানের অযোগ্য করে দেয়, তেমনি এক বা দুজন পরিমল-মুরাদ গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমর্যাদার ওপর কালিমা লেপে দিচ্ছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির মামলায় স্থানীয় খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া আবার এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তাই নিজেদের ‘নেতাকে’ ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
অবশ্য ওই ঘটনায় কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন মূল অভিযুক্ত নন। তাঁকে মামলার আসামি করা হয়েছে, মূল অভিযুক্ত বখাটে যুবক হৃদয়কে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগে। হৃদয় নামের ওই বখাটে যুবক স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন সে ওই ছাত্রীর হাত ও ওড়না ধরে টানাটানি করে ঘটনাস্থলে আটকে রাখে।
খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা ঘটনাস্থলে গেলে বখাটেদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। সে সময় সেখানে অবস্থানরত রাশেদ উদ্দিন বখাটের পক্ষ নিয়ে ছাত্রীর বাবাকে মারধরের হুমকি দেন। এ জন্য মামলায় তাঁকেও আসামি করা হয়েছে। কলেজশিক্ষক রাশেদ উদ্দিন বখাটের পক্ষ নেওয়ায় তাঁর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, একজন সচেতন নাগরিক তার ওপর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কী করে একজন মেয়েকে উত্ত্যক্তকারীর পক্ষ নিতে পারেন?
আসলে আমাদের সমাজে নৈতিকতায় প্রবল ধস নেমেছে। সৃষ্টি হয়েছে অবক্ষয়ের ধারা। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাঙ্গনও রেহাই পাচ্ছে না সেই মহামারি থেকে। স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়ন-নির্যাতনের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
নোট দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে কিংবা টিউটোরিয়ালে বেশি নম্বর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপকর্মের অভিযোগও পাওয়া গেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই সব ঘটনায় কেউ কেউ সাজা পেলেও বেশির ভাগ নানা কৌশলে পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। আর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দিন দিন এই অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলেছে।
পৃথিবীতে যত অপরাধ রয়েছে, খুন ও ধর্ষণ এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও ঘৃণ্য। ধর্ষকদের আমার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঔরসজাত না হলেও একধরনের সন্তান বলেই মনে হয়। ১৯৭১ সালে ওরা আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুটেছিল হিংস্র পাশবিকতায়। আর আজ এ দেশেরই কতিপয় চরিত্রহীন লম্পট নানা অছিলায় একই অপরাধ করে চলেছে।
এদের কালো হাত ভেঙে না দিলে এই সমাজে নারীদের নিরাপত্তার আর অবশিষ্ট থাকবে না। প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। রাষ্ট্রের যাঁরা নিয়ন্ত্রক রয়েছেন, তাঁরা রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল করা এবং নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টির স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে পুনর্বার ভাববেন, এটাই দেশবাসী আশা করে।
একজন বাবা কিংবা মা শিক্ষকদের ওপর পরম নির্ভরতায় তাঁর মেয়েটিকে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠান। সেখানে মেয়েটির শিক্ষাগ্রহণ, চরিত্র গঠন, নিরাপত্তা সবকিছুর দায়দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত। এটা আইনি কোনো ব্যাপার নয়, নৈতিকতার বিষয়। শিক্ষকেরা একজন শিক্ষার্থীর পিতার সমতুল্য। পিতৃ সমতুল্য সেই শিক্ষক যখন নিপীড়ক বা ধর্ষক হিসিবে আবির্ভূত হয়, তখন তা রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করে। আর সেটা হয়ে ওঠে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
বিশ্ব বিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। আলেকজান্ডার তাঁর শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম ইনডেটেড টু মাই ফাদার ফর লিভিং, বাট টু মাই টিচার ফর লিভিং ওয়েল।’ অর্থাৎ তিনি পিতার কাছে তাঁর জীবনের জন্য ঋণী, কিন্তু ভালোভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষার জন্য অ্যারিস্টটলের কাছে ঋণী।
আলেকজান্ডারের মন্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। বাস্তবিক একজন মানুষের কাছে মা-বাবার পরই তাঁর শিক্ষকের অবস্থান। মা-বাবা সন্তানকে জন্ম দেন, কিন্তু তাঁকে শিক্ষা দিয়ে আক্ষরিক অর্থে মানুষ করে তোলেন একজন শিক্ষক। তাই সমাজে একজন শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ। আমার যাঁরা শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। তিনজন এখনো আছেন। পরিমল চন্দ্র দাস, আবদুল লতিফ মিয়া এবং প্রহ্লাদ চন্দ্র বণিক।
তাঁরাসহ অন্য শিক্ষকেরা অত্যন্ত যত্নসহকারে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা যে যেটুকু ওপরে উঠতে পেরেছি, তার পেছনে রয়েছে সেই সব শিক্ষকের আন্তরিক শিক্ষাদান। আর এর জন্য আমরা চিরঋণী তাঁদের কাছে। এখনো দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে কদমবুচি করে দোয়া চাই। শিক্ষকদের প্রতি এই আমাদের শ্রদ্ধাবোধ কিন্তু এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। আচরণ এবং চারিত্রিক বলিষ্ঠতা দ্বারা এটা তাঁরা অর্জন করেছেন।
আগেই বলেছি, শিক্ষকেরা সমাজে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনের অধিকারী। কিন্তু আজ সে আসন অনেকটাই টালমাটাল হয়ে উঠেছে কতিপয় শিক্ষক নামধারী দুর্বৃত্ত ও লম্পটের কারণে। অতিসম্প্রতি দেশের অন্যতম উৎকৃষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন সে রয়েছে পুলিশ হেফাজতে। আদালত তাকে পাঠিয়েছেন দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মুরাদ প্রাইভেট কোচিংয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করত। তার বিরুদ্ধে তিনজন ছাত্রীর অভিযোগের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অভিযোগ এক বছর আগের। মুরাদ হোসেন হজ করে আসার পর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বিধায় তাকে বরখাস্ত না করে শেষবারের মতো সতর্ক করে অন্য শাখায় বদলি করা যেতে পারে।’ অপরদিকে অভিযোগকারীরা বলছেন, হজ থেকে এসেও মুরাদ একই অপকর্ম করেছে। তাঁরা উচ্চতর তদন্তে যাতে পক্ষপাত না থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষের তদন্তে তাকে রক্ষার প্রয়াস লক্ষণীয়।
‘মুরাদ হজ করে আসার পর আর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি’—এ কথায় এটাই স্পষ্ট যে হজ করার আগে সে এ ধরনের অপরাধ করেছে এবং তা স্কুল কর্তৃপক্ষের গোচরে রয়েছে। এখানে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়, একজন শিক্ষকের লাম্পট্যের কথা জানা সত্ত্বেও কেন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আগেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি? ছাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির বিষয়টিও যে এর সঙ্গে জড়িত তা কি তারা বিস্মৃত হয়েছিল? একজন দুর্বৃত্ত কী করে দেশের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের পদে থাকতে পারে, এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, তারা তাদের শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ যেন মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা। প্রাইভেট কোচিং বন্ধ হলেই কি শিক্ষক নামের কতিপয় চরিত্রহীন-লম্পটের অপকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে?
এদিকে ২৯ ফেব্রুয়ারির একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রিমান্ডে মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের কিছু প্রমাণ পেয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ১২ বছর আগে ২০১১ সালে এই ভিকারুননিসা স্কুলেরই আরেক শিক্ষক পরিমল জয়ধর প্রাইভেট কোচিংয়ে ধর্ষণ করেছিল এক ছাত্রীকে। সে মামলায় ২০১৫ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। লম্পট মুরাদের শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি হয়েছে। সেও তার অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তি পাবে বলে দেশবাসী আশা করে।
এটা ঠিক, পরিমল জয়ধর কিংবা মুরাদ হোসেনদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে ‘এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনা’ যেমন পুরো দুধকে পানের অযোগ্য করে দেয়, তেমনি এক বা দুজন পরিমল-মুরাদ গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমর্যাদার ওপর কালিমা লেপে দিচ্ছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির মামলায় স্থানীয় খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া আবার এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তাই নিজেদের ‘নেতাকে’ ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
অবশ্য ওই ঘটনায় কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন মূল অভিযুক্ত নন। তাঁকে মামলার আসামি করা হয়েছে, মূল অভিযুক্ত বখাটে যুবক হৃদয়কে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগে। হৃদয় নামের ওই বখাটে যুবক স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন সে ওই ছাত্রীর হাত ও ওড়না ধরে টানাটানি করে ঘটনাস্থলে আটকে রাখে।
খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা ঘটনাস্থলে গেলে বখাটেদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। সে সময় সেখানে অবস্থানরত রাশেদ উদ্দিন বখাটের পক্ষ নিয়ে ছাত্রীর বাবাকে মারধরের হুমকি দেন। এ জন্য মামলায় তাঁকেও আসামি করা হয়েছে। কলেজশিক্ষক রাশেদ উদ্দিন বখাটের পক্ষ নেওয়ায় তাঁর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, একজন সচেতন নাগরিক তার ওপর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কী করে একজন মেয়েকে উত্ত্যক্তকারীর পক্ষ নিতে পারেন?
আসলে আমাদের সমাজে নৈতিকতায় প্রবল ধস নেমেছে। সৃষ্টি হয়েছে অবক্ষয়ের ধারা। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাঙ্গনও রেহাই পাচ্ছে না সেই মহামারি থেকে। স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়ন-নির্যাতনের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
নোট দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে কিংবা টিউটোরিয়ালে বেশি নম্বর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপকর্মের অভিযোগও পাওয়া গেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই সব ঘটনায় কেউ কেউ সাজা পেলেও বেশির ভাগ নানা কৌশলে পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। আর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দিন দিন এই অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলেছে।
পৃথিবীতে যত অপরাধ রয়েছে, খুন ও ধর্ষণ এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও ঘৃণ্য। ধর্ষকদের আমার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঔরসজাত না হলেও একধরনের সন্তান বলেই মনে হয়। ১৯৭১ সালে ওরা আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুটেছিল হিংস্র পাশবিকতায়। আর আজ এ দেশেরই কতিপয় চরিত্রহীন লম্পট নানা অছিলায় একই অপরাধ করে চলেছে।
এদের কালো হাত ভেঙে না দিলে এই সমাজে নারীদের নিরাপত্তার আর অবশিষ্ট থাকবে না। প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। রাষ্ট্রের যাঁরা নিয়ন্ত্রক রয়েছেন, তাঁরা রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল করা এবং নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টির স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে পুনর্বার ভাববেন, এটাই দেশবাসী আশা করে।
একজন বাবা কিংবা মা শিক্ষকদের ওপর পরম নির্ভরতায় তাঁর মেয়েটিকে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠান। সেখানে মেয়েটির শিক্ষাগ্রহণ, চরিত্র গঠন, নিরাপত্তা সবকিছুর দায়দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত। এটা আইনি কোনো ব্যাপার নয়, নৈতিকতার বিষয়। শিক্ষকেরা একজন শিক্ষার্থীর পিতার সমতুল্য। পিতৃ সমতুল্য সেই শিক্ষক যখন নিপীড়ক বা ধর্ষক হিসিবে আবির্ভূত হয়, তখন তা রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করে। আর সেটা হয়ে ওঠে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে