পরান সখা ফয়সুল

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৪৫

নজরুল সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তাঁকে কোনো ধর্মের তকমা দিয়ে আঁটা যাবে না। ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতাটি হিন্দু-মুসলমান মিলনের এক অসাধারণ শৈল্পিক প্রকাশ। হামদ-নাত বা শ্যামাসংগীত দিয়ে নজরুলকে বিচার করা যাবে না। ধর্ম কিংবা সমাজ, যেখানেই অসমতা, সেখানেই নজরুল ছিলেন সোচ্চার।

সে সময় মুসলমানরা যেসব পত্রিকা প্রকাশ করত, তাতে মুসলিম চিন্তা-দর্শনের প্রকাশ ছিল বেশি। নজরুল হাঁটলেন ভিন্ন পথে। যে পত্রিকাটিকে তিনি বেছে নিলেন নিজের রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশের জন্য, সেটির নামও তাই ‘নবযুগ’। পত্রিকাটির মালিক ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই পত্রিকাটি সান্ধ্য দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হতে শুরু করে।

রয়েল সাইজ এক শিট কাগজের দাম করা হয়েছিল এক পয়সা। নবযুগ পত্রিকায় নজরুলের সঙ্গে ছিলেন তখনকার ডাকসাইটে বামপন্থী নেতা কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ। কিন্তু তাঁদের দুজনের কারও নামই পত্রিকায় ছাপা হতো না। প্রধান পরিচালক হিসেবে এ কে ফজলুল হকের নাম ছাপা হতো। 
দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা দুজনের একজনেরও ছিল না। তখন নজরুল বড় বড় সংবাদ পড়ে তার সংক্ষিপ্ত রূপ দিয়ে নবযুগে ছাপা শুরু করলেন এবং তা করলেন নিজের ভাষায়।

সংবাদগুলো খুবই আকর্ষণীয় হতো। ঝানু সাংবাদিকদের চেয়ে নজরুলের এই সাংবাদিকতা পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল বেশি। শুধু সংবাদ লেখা নয়, শিরোনামেও তিনি প্রকাশ করলেন তাঁর কাব্যপ্রতিভা। বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসকে গুলে খেয়েছিলেন নজরুল। তাই শিরোনাম দেওয়ার সময় সেসব কবিতার কোনো পঙ্‌ক্তিকেই করে তুলতেন শিরোনাম। শিরোনামের মজা থেকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও রেহাই পাননি। একবার ইরাকের রাজা ফয়সালকে নিয়ে কোনো একটা সংবাদ এল নজরুলের হাতে। সেটা পড়লেন তিনি, তারপর নিজের মতো করে প্রতিবেদন লিখলেন। আর সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/পরান সখা ফয়সুল হে আমার’। 

সূত্র: ড. আনোয়ারুল করীম, নজরুল: তাঁর সমকালে, পৃষ্ঠা ৭১-৭২

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত