হাসান মামুন
এই নিবন্ধ লেখার সময় চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। তাতে যথারীতি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না ঘোষণা দিয়েই আর সেটি হলো, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার-পাঁচ মাস বাকি। এ অবস্থায় এমন উপনির্বাচনের আয়োজন বাধ্যতামূলক হলেও দুর্ভাগ্যজনক বলা যায়।
যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি হবেন মাত্র কয়েক মাসের এমপি। এতে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিলে অবশ্য সরকারের জনপ্রিয়তার একটা পরীক্ষা হয়ে যেত জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে। সেটা যখন হচ্ছে না, তখন দুশ্চিন্তা ভোট পড়ার হার নিয়ে।
কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি আসনেও উপনির্বাচন হলো। একজন আলোচিত প্রার্থীর কারণে সেটা অবশ্য কিছুটা আলোচনায় ছিল শুরু থেকে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেও মনে হয়েছিল। তারপরও সেখানে ১২ শতাংশ ভোট পড়েনি। অনেকে বলছেন, সেখানে কিছু জাল ভোটও পড়েছে। ভোটের প্রকৃত হার নাকি আরও কম। চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়বে, তা জানা যাবে এ লেখা প্রকাশের আগেই। যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন সেখানে হচ্ছে না, তাই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জয়ের ব্যাপারে একরকম নিশ্চিত।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটাই তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কেন্দ্র থেকেও স্থানীয় নেতাদের কাছে ভোটের হার বাড়ানোর তাগিদ থাকতে পারে। তবে সে লক্ষ্য অর্জনে অনিয়ম করাটা আবার বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উপনির্বাচন, এমনকি স্থানীয় নির্বাচনের ওপরও নানা দিক থেকে মনিটরিং চলছে। কারচুপি না হয়ে ভোট কম পড়া বরং ভালো। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন তো বাতিল হচ্ছে না। এ দেশে ন্যূনতম ভোটের বিধান এখনো হয়নি। এর আগে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম-৮ আসনেও উপনির্বাচন হয়। তাতে অবশ্য ভোট পড়ে ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের চেয়ে কিছু বেশি, প্রায় ১৫ শতাংশ। এতে হতাশ হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী সবাই; তবে নির্বাচনটি অবৈধ হয়নি।
গণতন্ত্রে বৈধতার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন আছে বলেই এত কথা বলা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে অর্থবহও হয় না। আর শুধু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র সফলতা অর্জন করে না। তাকে আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সর্বোপরি গণতন্ত্রচর্চাটা চালিয়ে যেতে হয় সব ক্ষেত্রে। তাহলেই গভীরতা লাভ করে এটা হয়ে উঠতে পারে একটি জীবনধারা। দুর্ভাগ্যবশত আমরা অবস্থান করছি সেখান থেকে অনেক দূরে।
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যা ও ভোটারের দিক থেকে এক বিশাল দেশ। দেশের কথা ভুলে চট্টগ্রাম-১০ আসনের কথাই যদি ধরি, তাহলে দেখব ওখানে ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার। এদিকে আসছে সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপে হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে ভোট দেবেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ভোটার। মালদ্বীপের চেয়েও ২ লাখ ভোটার বেশি আমাদের একটি সংসদীয় আসনে! সব আসনে ভোটার অবশ্য এত বেশি নয়। কিন্তু সারা দেশে কত ভোটার আমাদের! বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখের বেশি। দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি; ভোটার তার প্রায় ৭০ শতাংশ।
এ দেশে ভোটার বেশি শুধু তা-ই নয়; ভোটের হারও সাধারণভাবে বেশি। প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলে, বেছে নেওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থী থাকলে, পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলে, এখানে মানুষ উৎসব করে ভোট দিতে যান। সে ক্ষেত্রে নারী ভোটারের অংশগ্রহণও বাড়ে। বাড়ে প্রবীণদের ভোটাধিকার প্রয়োগ।
দেশে নারী ভোটার তো পুরুষের প্রায় সমান। নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে হবে না, নির্বাচনের পরিবেশ ভোটের দিন পর্যন্ত রাখতে হবে শান্তিপূর্ণ। ভোটের পরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখাটা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কর্তব্য।
আমরা দেখেছি, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরও সহিংসতা হয়েছে দেশে। নতুন করে ক্ষমতায় এসে যাওয়ারা প্রতিশোধ নিতে শুরু করে বিজয়ের মুহূর্ত থেকেই। কখনো কখনো সহিংসতা চালানো হয় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর। সেটা আমাদের কলঙ্ক বৈকি।
যা-ই হোক, নির্বাচন ঠিকমতো হলে এ দেশে ভোটের হার ৯০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যেতেও দেখা যায়। সেটা ঘটেছিল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ। এটাই দেশে ভোটের সর্বোচ্চ হার। লক্ষ করব, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনে ভোটের হার ক্রমে বেড়েছে। এ ধারার প্রথম নির্বাচনে ভোটের হার যদিও ছিল ৫৫ শতাংশ; তবে সেটা বাড়তে বাড়তে হয়ে ওঠে ৮৭ শতাংশ।
সেনাশাসক এরশাদের পতনের পর আন্দোলনকারী দলগুলোর ঐতিহাসিক সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কেন অপেক্ষাকৃত কম পড়েছিল, তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে কি না, জানি না। তবে মানতে হবে, সেই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আমরা অন্তত একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রে প্রবেশ করেছিলাম। এ আশায়ও বুক বেঁধেছিলাম যে ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন বা পরিবর্তনের সুযোগ আর হাতছাড়া হবে না। সেটা ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলনেও শামিল হতে হবে না। এ অবস্থায় আমরা হয়তো সংগ্রামে অবতীর্ণ হব নতুন কিছু অধিকার আদায়ে।
কিন্তু হায়! সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নতুন করে সামনে এসেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের চরম বিতর্কিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর। খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন প্রথম শাসনামলের পর অনুষ্ঠিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেমন গর্ব করেন না; তেমনি ওই দুটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আওয়ামী লীগের লোকজন এখন আর তর্ক করার উৎসাহ পান না। তাঁরা বরং বলছেন, এবারের নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তো সেটা অংশগ্রহণমূলকও হওয়ার কথা।
আর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে তখনই, যখন দেশের প্রধান দলগুলো এতে অবাধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। সব রাজনৈতিক দল সরকার গঠনের জন্য অবশ্য নির্বাচনে আসে না। অল্প কিছু আসনে জিতে সংসদে বসে ভূমিকা রাখার জন্যও কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। যে বামপন্থীরা পুঁজিবাদী দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনামুখর, তারাও এতে অংশ নেয় এমনকি নিজেদের জনসমর্থন যাচাইয়ের জন্য। তবে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল এতে অংশ নেয় সরকার গঠনের জন্যই।
ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না জেনেও এসব দল নির্বাচনে আসে অন্তত প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান ধরে রাখতে। এমন দুটি দলের একটি যদি নির্বাচনের বাইরে থাকে, তখনই আমরা বলি—এটি অংশগ্রহণমূলক হলো না। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ওপর যখন দেশ-বিদেশ থেকে জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন বলা যেতে পারে এটাই হলো এর ভালো সংজ্ঞা।
আসলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই নির্বাচন। সরকার গঠন ও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম দুটি দলের একটিকেও নির্বাচনের বাইরে রেখে এটা অনুষ্ঠানের সত্যি কোনো মানে হয় না। তাতে জনগণের করের অর্থের অপচয়ই হয় আসলে।
কেননা এতে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠন সম্ভব হয় না; সরকারে জনগণের ইচ্ছার প্রকাশও ঘটে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা হওয়াটা গণতন্ত্রচর্চার জন্য অশুভ বৈকি। এটা রাজনীতি ও দেশকে গভীর সংকটেই নিক্ষেপ করে, যেখান থেকে উঠে আসতে লেগে যেতে পারে দীর্ঘ সময়। দেশে এমন একটা পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হয়েছে—ইত্যবসরে বড় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হলেও।
গণতন্ত্রচর্চায় যেখানে আমাদের আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে বরং পিছিয়ে চলে গিয়েছি ১৯৯০ সালের দিকে।পরিস্থিতিটা তখনকার চেয়েও জটিল এ জন্য যে প্রধান যে দুই পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ তৈরি হয়েছিল, তার একটি পক্ষ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের গ্রহণযোগ্য উপায় নিয়ে তারা অবস্থান করছে পরস্পরের বিপরীতে।
এ অবস্থায় কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে? তবে অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কিছুটা অদ্ভুত ব্যবস্থা হলেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই এ দেশে কমবেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাতে ভোটের হারও বাড়তে বাড়তে করেছে রেকর্ড। কম্বোডিয়ার মতো দেশেও ভোটের হার অবশ্য বেশি। কিন্তু সেখানে কীভাবে কী হয়, সেটা তো সবারই জানা।
আমরা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি, যার জন্ম হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে এবং এর ন্যূনতম অঙ্গীকার ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আর গ্রহণযোগ্য ভোট ছাড়া নিশ্চয়ই গণতন্ত্রচর্চার পথ উন্মুক্ত করা যাবে না। তেমন ভোট নিশ্চিত করার পরও আরও অনেক কিছুর চাহিদা আমাদের থাকবে। তবে ভোটাধিকার সুরক্ষার ইস্যুটি থাকবে সেই তালিকার শীর্ষে। তারপর যেতে হবে দীর্ঘ সংস্কার ও পুনর্গঠনের ভেতর দিয়ে।
এই নিবন্ধ লেখার সময় চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। তাতে যথারীতি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না ঘোষণা দিয়েই আর সেটি হলো, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার-পাঁচ মাস বাকি। এ অবস্থায় এমন উপনির্বাচনের আয়োজন বাধ্যতামূলক হলেও দুর্ভাগ্যজনক বলা যায়।
যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি হবেন মাত্র কয়েক মাসের এমপি। এতে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিলে অবশ্য সরকারের জনপ্রিয়তার একটা পরীক্ষা হয়ে যেত জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে। সেটা যখন হচ্ছে না, তখন দুশ্চিন্তা ভোট পড়ার হার নিয়ে।
কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি আসনেও উপনির্বাচন হলো। একজন আলোচিত প্রার্থীর কারণে সেটা অবশ্য কিছুটা আলোচনায় ছিল শুরু থেকে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেও মনে হয়েছিল। তারপরও সেখানে ১২ শতাংশ ভোট পড়েনি। অনেকে বলছেন, সেখানে কিছু জাল ভোটও পড়েছে। ভোটের প্রকৃত হার নাকি আরও কম। চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়বে, তা জানা যাবে এ লেখা প্রকাশের আগেই। যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন সেখানে হচ্ছে না, তাই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জয়ের ব্যাপারে একরকম নিশ্চিত।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটাই তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কেন্দ্র থেকেও স্থানীয় নেতাদের কাছে ভোটের হার বাড়ানোর তাগিদ থাকতে পারে। তবে সে লক্ষ্য অর্জনে অনিয়ম করাটা আবার বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উপনির্বাচন, এমনকি স্থানীয় নির্বাচনের ওপরও নানা দিক থেকে মনিটরিং চলছে। কারচুপি না হয়ে ভোট কম পড়া বরং ভালো। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন তো বাতিল হচ্ছে না। এ দেশে ন্যূনতম ভোটের বিধান এখনো হয়নি। এর আগে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম-৮ আসনেও উপনির্বাচন হয়। তাতে অবশ্য ভোট পড়ে ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের চেয়ে কিছু বেশি, প্রায় ১৫ শতাংশ। এতে হতাশ হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী সবাই; তবে নির্বাচনটি অবৈধ হয়নি।
গণতন্ত্রে বৈধতার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন আছে বলেই এত কথা বলা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে অর্থবহও হয় না। আর শুধু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র সফলতা অর্জন করে না। তাকে আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সর্বোপরি গণতন্ত্রচর্চাটা চালিয়ে যেতে হয় সব ক্ষেত্রে। তাহলেই গভীরতা লাভ করে এটা হয়ে উঠতে পারে একটি জীবনধারা। দুর্ভাগ্যবশত আমরা অবস্থান করছি সেখান থেকে অনেক দূরে।
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যা ও ভোটারের দিক থেকে এক বিশাল দেশ। দেশের কথা ভুলে চট্টগ্রাম-১০ আসনের কথাই যদি ধরি, তাহলে দেখব ওখানে ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার। এদিকে আসছে সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপে হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে ভোট দেবেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ভোটার। মালদ্বীপের চেয়েও ২ লাখ ভোটার বেশি আমাদের একটি সংসদীয় আসনে! সব আসনে ভোটার অবশ্য এত বেশি নয়। কিন্তু সারা দেশে কত ভোটার আমাদের! বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখের বেশি। দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি; ভোটার তার প্রায় ৭০ শতাংশ।
এ দেশে ভোটার বেশি শুধু তা-ই নয়; ভোটের হারও সাধারণভাবে বেশি। প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলে, বেছে নেওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থী থাকলে, পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলে, এখানে মানুষ উৎসব করে ভোট দিতে যান। সে ক্ষেত্রে নারী ভোটারের অংশগ্রহণও বাড়ে। বাড়ে প্রবীণদের ভোটাধিকার প্রয়োগ।
দেশে নারী ভোটার তো পুরুষের প্রায় সমান। নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে হবে না, নির্বাচনের পরিবেশ ভোটের দিন পর্যন্ত রাখতে হবে শান্তিপূর্ণ। ভোটের পরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখাটা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কর্তব্য।
আমরা দেখেছি, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরও সহিংসতা হয়েছে দেশে। নতুন করে ক্ষমতায় এসে যাওয়ারা প্রতিশোধ নিতে শুরু করে বিজয়ের মুহূর্ত থেকেই। কখনো কখনো সহিংসতা চালানো হয় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর। সেটা আমাদের কলঙ্ক বৈকি।
যা-ই হোক, নির্বাচন ঠিকমতো হলে এ দেশে ভোটের হার ৯০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যেতেও দেখা যায়। সেটা ঘটেছিল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ। এটাই দেশে ভোটের সর্বোচ্চ হার। লক্ষ করব, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনে ভোটের হার ক্রমে বেড়েছে। এ ধারার প্রথম নির্বাচনে ভোটের হার যদিও ছিল ৫৫ শতাংশ; তবে সেটা বাড়তে বাড়তে হয়ে ওঠে ৮৭ শতাংশ।
সেনাশাসক এরশাদের পতনের পর আন্দোলনকারী দলগুলোর ঐতিহাসিক সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কেন অপেক্ষাকৃত কম পড়েছিল, তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে কি না, জানি না। তবে মানতে হবে, সেই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আমরা অন্তত একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রে প্রবেশ করেছিলাম। এ আশায়ও বুক বেঁধেছিলাম যে ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন বা পরিবর্তনের সুযোগ আর হাতছাড়া হবে না। সেটা ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলনেও শামিল হতে হবে না। এ অবস্থায় আমরা হয়তো সংগ্রামে অবতীর্ণ হব নতুন কিছু অধিকার আদায়ে।
কিন্তু হায়! সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নতুন করে সামনে এসেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের চরম বিতর্কিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর। খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন প্রথম শাসনামলের পর অনুষ্ঠিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেমন গর্ব করেন না; তেমনি ওই দুটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আওয়ামী লীগের লোকজন এখন আর তর্ক করার উৎসাহ পান না। তাঁরা বরং বলছেন, এবারের নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তো সেটা অংশগ্রহণমূলকও হওয়ার কথা।
আর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে তখনই, যখন দেশের প্রধান দলগুলো এতে অবাধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। সব রাজনৈতিক দল সরকার গঠনের জন্য অবশ্য নির্বাচনে আসে না। অল্প কিছু আসনে জিতে সংসদে বসে ভূমিকা রাখার জন্যও কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। যে বামপন্থীরা পুঁজিবাদী দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনামুখর, তারাও এতে অংশ নেয় এমনকি নিজেদের জনসমর্থন যাচাইয়ের জন্য। তবে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল এতে অংশ নেয় সরকার গঠনের জন্যই।
ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না জেনেও এসব দল নির্বাচনে আসে অন্তত প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান ধরে রাখতে। এমন দুটি দলের একটি যদি নির্বাচনের বাইরে থাকে, তখনই আমরা বলি—এটি অংশগ্রহণমূলক হলো না। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ওপর যখন দেশ-বিদেশ থেকে জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন বলা যেতে পারে এটাই হলো এর ভালো সংজ্ঞা।
আসলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই নির্বাচন। সরকার গঠন ও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম দুটি দলের একটিকেও নির্বাচনের বাইরে রেখে এটা অনুষ্ঠানের সত্যি কোনো মানে হয় না। তাতে জনগণের করের অর্থের অপচয়ই হয় আসলে।
কেননা এতে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠন সম্ভব হয় না; সরকারে জনগণের ইচ্ছার প্রকাশও ঘটে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা হওয়াটা গণতন্ত্রচর্চার জন্য অশুভ বৈকি। এটা রাজনীতি ও দেশকে গভীর সংকটেই নিক্ষেপ করে, যেখান থেকে উঠে আসতে লেগে যেতে পারে দীর্ঘ সময়। দেশে এমন একটা পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হয়েছে—ইত্যবসরে বড় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হলেও।
গণতন্ত্রচর্চায় যেখানে আমাদের আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে বরং পিছিয়ে চলে গিয়েছি ১৯৯০ সালের দিকে।পরিস্থিতিটা তখনকার চেয়েও জটিল এ জন্য যে প্রধান যে দুই পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ তৈরি হয়েছিল, তার একটি পক্ষ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের গ্রহণযোগ্য উপায় নিয়ে তারা অবস্থান করছে পরস্পরের বিপরীতে।
এ অবস্থায় কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে? তবে অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কিছুটা অদ্ভুত ব্যবস্থা হলেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই এ দেশে কমবেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাতে ভোটের হারও বাড়তে বাড়তে করেছে রেকর্ড। কম্বোডিয়ার মতো দেশেও ভোটের হার অবশ্য বেশি। কিন্তু সেখানে কীভাবে কী হয়, সেটা তো সবারই জানা।
আমরা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি, যার জন্ম হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে এবং এর ন্যূনতম অঙ্গীকার ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আর গ্রহণযোগ্য ভোট ছাড়া নিশ্চয়ই গণতন্ত্রচর্চার পথ উন্মুক্ত করা যাবে না। তেমন ভোট নিশ্চিত করার পরও আরও অনেক কিছুর চাহিদা আমাদের থাকবে। তবে ভোটাধিকার সুরক্ষার ইস্যুটি থাকবে সেই তালিকার শীর্ষে। তারপর যেতে হবে দীর্ঘ সংস্কার ও পুনর্গঠনের ভেতর দিয়ে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে