নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কিছুদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির জন্য সাধারণ ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকা। অথচ দুই মাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যেত ১২০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিদ্যুৎ, পোলট্রি ফিড (মুরগির খাবার) ও ওষুধের দামকে। তবে এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে এসেছে দেশের পোলট্রিশিল্পে বড় কোম্পানি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মহাজনি কারবারের চিত্র।
ওই প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ উৎপাদন করে। এসব কোম্পানি খামারিদের কাছে মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে এই শর্তে যে শুধু তাদের কাছ থেকেই খাবার ও ওষুধ কিনতে হবে। খামারিরা শর্তে রাজি না হলে মুরগির বাচ্চা দেওয়া হয় না। ফলে কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দামেই নিতে হচ্ছে বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ।
পোলট্রিশিল্পে নতুন এই ব্যবস্থা খামারি ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘চুক্তি’ হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তি-পদ্ধতিতে মুরগি বড় হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছেই বিক্রি করতে হয় তাদেরই বেঁধে দেওয়া দামে। এতে লাভের গুড় খায় কোম্পানি। খামারি পায় বাচ্চা লালন-পালনের মজুরি মাত্র। তবে বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে হয় খামারিদেরই। নিরাপত্তার স্বার্থে কোম্পানিগুলো খামারিদের সই করা চেকসহ খামারের কাগজপত্র আগেই নিয়ে রাখে। পোলট্রি খামারসমৃদ্ধ ২৪টি জেলার অন্তত ১০০ খামারির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন আমাদের সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা।
সব ঠিক করে দেয় কোম্পানি
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খামারি মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন নামমাত্র খামারি। খামারের শুধু শেড তৈরি, বেড ও বিদ্যুৎ খরচ আমাদের। সাথে পরিচর্যার শ্রম। বাচ্চাসহ অন্য সকল খরচ কোম্পানির। মুরগি কত দামে, কোন পাইকারের কাছে বিক্রি হবে, সব কোম্পানি নির্ধারণ করে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে খামারিদের কোনো হাত নেই।’ একটি নামকরা পোলট্রি কোম্পানির এক মাঠকর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতি এলাকায় কোম্পানিগুলোর পাইকার নির্ধারণ করা আছে। তাঁদের নির্দিষ্ট কোডও আছে।প্রতিটি লটে মুরগির বাজারদর কী হবে, তা পাইকারদের সঙ্গে বিট করে ঠিক করা হয়। সেই দামেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মুরগি বিক্রি হয়। এর হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই।’ পোলট্রি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বারবার নাম আসছে কাজী ফার্মস, সিপিসহ বড় কয়েকটি কোম্পানির।
কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিন হাসান এবং বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু কাওসার মো. সালেহকে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। সিপির একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। তবে কাজী জাহিন হাসান গত রোববার এক মতবিনিময় সভায় বলেন, গত বছরের ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। ফলে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে।
শর্তের ফাঁদে নিঃস্ব অসংখ্য খামারি
জানা যায়, কোম্পানিগুলো প্রতি কেজি মুরগি উৎপাদনের একটি স্ট্যান্ডার্ড খরচ ধরে। কোনো খামারি উৎপাদন খরচ এর নিচে আনতে পারলে তার লভ্যাংশ বেড়ে যায়। আবার খরচ বেড়ে গেলে সেই টাকা কোম্পানি পুষিয়ে নেয় খামারিদের লাভের অংশ থেকে কেটে। কোম্পানির এমন মহাজনি শর্তের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার খামারি। অনেক খামারি দেনা মাথায় ফেরার। রাজশাহীর পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, উপজেলার দুটি ইউনিয়নে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির ৫০৫টি খামার ছিল। গত এক বছরে বন্ধ হয়েছে ৪১০টি। খড়খড়ি বাজারে মুরগির দোকানদার মো. রাসেল বলেন, ‘আগে এসব এলাকায় খামারে হাজার হাজার মুরগি ছিল। এখন গোটা এলাকা ঘুরেও কোনো খামারে একটা ব্রয়লার মুরগিও পাবেন না। অনেক খামারি এলাকায়ই নাই। ডিলারের দেনায় পড়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’ ফিড ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এক খামারির কাছে মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম হিসেবে ১৫ লাখ টাকা পাব। চার মাস আগে সে পালিয়েছে। বাকি নেওয়ার সময় তার স্বাক্ষরিত চেক ও স্ট্যাম্প নিয়েছিলাম। এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, দেশে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক খামার আছে পাঁচ হাজারের মতো। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু ধুঁকে ধুঁকে চলছে আর সব বন্ধ। সুমন হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে প্রান্তিক খামারিদের কোনো মুরগি নাই; যা আছে সব করপোরেট কোম্পানিগুলোর। তাই তাঁরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে মুরগি পেতে চাইলে প্রান্তিক খামারিদের প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁদের উৎপাদনে ফেরাতে হবে।’
চট্টগ্রামে ছয় মাসে ৩০ হাজার খামার বন্ধ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে মোট পোলট্রি খামার ১ লাখ ৯৫ হাজার। এর মধ্যে ৮৬ হাজার ৯২৭টি নিবন্ধিত। চট্টগ্রামেই আছে ৫০ হাজারের বেশি খামার। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, বড় খামারিদের দাপটে গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ হাজার খামার বন্ধ হয়েছে। একই চিত্র কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মাদারীপুর, কুমিল্লা, রংপুর, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ফেনী, শ্রীপুর, দিনাজপুর, ভোলা, নাটোর, মাগুরা, যশোর, নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। খামারিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে চুক্তিভিত্তিক খামারি মাত্র শতকরা ২০-২২ ভাগ। তারা লালন-পালনের জন্য খরচ পায়। খাবার বা ওষুধ নিয়ে তাদের আলাদা কোনো কথা থাকার নয়। আর স্বতন্ত্র খামারিরা তো ন্যায্যমূল্যেই মুরগি বিক্রি করতে পারছে। বেঁধে দেওয়া যে দাম আছে, সেটায় তাঁরা কেজিপ্রতি ২২০ টাকা পায়। এতে সমস্যাটা কী বুঝলাম না।’
চুক্তিতে না গেলে দাম বেশি রাখা হয়
স্বতন্ত্র খামারিদের অভিযোগ, চুক্তিতে না গেলে তাঁদের কাছে খাবার, বাচ্চা বা ওষুধ বিক্রি করা হয় না। বিক্রি করলেও দাম রাখা হয় বেশি। এ বিষয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বতন্ত্র খামারিরা বেশি দামে সব কিনছে; কারণ ফিড, ওষুধ বা বাচ্চার দাম দেশি।’
কয়েকজন খামারি জানান, গত শুক্রবার পর্যন্ত তাঁরা প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন ২০০-২১০ টাকায়। এই দামে কিনে এনে ঢাকার কয়েকটি আড়তে খুচরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ২৩৫-২৪০ টাকায়। এরপর সাধারণ ক্রেতারা কিনছেন ২৬০-২৭০ টাকায়। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০-৩০০ টাকা দরে।
অনিয়মের চিত্র সরকারি প্রতিবেদনেই
ব্রয়লার মাংস বিক্রিতে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরল জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সই করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আটটি সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যতালিকা টানানো বাধ্যতামূলক থাকলেও তা করা হচ্ছে না; পাইকারি পর্যায়ে পাকা রসিদ বা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করা হয় না; ক্রেতাকে পাকা রসিদ দেওয়া হয় না; দোকানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ; ওজনে কম দেওয়া হয় এবং পাইকারি ও খুচরা দামে বিস্তর ব্যবধান।
গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ
অধিদপ্তরের সুপারিশে বলা হয়েছে, ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কোনো অনিয়ম কিংবা মনোপলি (একচেটিয়া) হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ করা যেতে পারে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী যেন অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। যেসব বাজারে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করা হবে না, সেসব বাজার কমিটি বিলুপ্ত করারও সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর।
কিছুদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির জন্য সাধারণ ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকা। অথচ দুই মাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যেত ১২০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিদ্যুৎ, পোলট্রি ফিড (মুরগির খাবার) ও ওষুধের দামকে। তবে এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে এসেছে দেশের পোলট্রিশিল্পে বড় কোম্পানি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মহাজনি কারবারের চিত্র।
ওই প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ উৎপাদন করে। এসব কোম্পানি খামারিদের কাছে মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে এই শর্তে যে শুধু তাদের কাছ থেকেই খাবার ও ওষুধ কিনতে হবে। খামারিরা শর্তে রাজি না হলে মুরগির বাচ্চা দেওয়া হয় না। ফলে কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দামেই নিতে হচ্ছে বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ।
পোলট্রিশিল্পে নতুন এই ব্যবস্থা খামারি ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘চুক্তি’ হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তি-পদ্ধতিতে মুরগি বড় হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছেই বিক্রি করতে হয় তাদেরই বেঁধে দেওয়া দামে। এতে লাভের গুড় খায় কোম্পানি। খামারি পায় বাচ্চা লালন-পালনের মজুরি মাত্র। তবে বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে হয় খামারিদেরই। নিরাপত্তার স্বার্থে কোম্পানিগুলো খামারিদের সই করা চেকসহ খামারের কাগজপত্র আগেই নিয়ে রাখে। পোলট্রি খামারসমৃদ্ধ ২৪টি জেলার অন্তত ১০০ খামারির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন আমাদের সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা।
সব ঠিক করে দেয় কোম্পানি
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খামারি মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন নামমাত্র খামারি। খামারের শুধু শেড তৈরি, বেড ও বিদ্যুৎ খরচ আমাদের। সাথে পরিচর্যার শ্রম। বাচ্চাসহ অন্য সকল খরচ কোম্পানির। মুরগি কত দামে, কোন পাইকারের কাছে বিক্রি হবে, সব কোম্পানি নির্ধারণ করে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে খামারিদের কোনো হাত নেই।’ একটি নামকরা পোলট্রি কোম্পানির এক মাঠকর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতি এলাকায় কোম্পানিগুলোর পাইকার নির্ধারণ করা আছে। তাঁদের নির্দিষ্ট কোডও আছে।প্রতিটি লটে মুরগির বাজারদর কী হবে, তা পাইকারদের সঙ্গে বিট করে ঠিক করা হয়। সেই দামেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মুরগি বিক্রি হয়। এর হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই।’ পোলট্রি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বারবার নাম আসছে কাজী ফার্মস, সিপিসহ বড় কয়েকটি কোম্পানির।
কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিন হাসান এবং বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু কাওসার মো. সালেহকে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। সিপির একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। তবে কাজী জাহিন হাসান গত রোববার এক মতবিনিময় সভায় বলেন, গত বছরের ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। ফলে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে।
শর্তের ফাঁদে নিঃস্ব অসংখ্য খামারি
জানা যায়, কোম্পানিগুলো প্রতি কেজি মুরগি উৎপাদনের একটি স্ট্যান্ডার্ড খরচ ধরে। কোনো খামারি উৎপাদন খরচ এর নিচে আনতে পারলে তার লভ্যাংশ বেড়ে যায়। আবার খরচ বেড়ে গেলে সেই টাকা কোম্পানি পুষিয়ে নেয় খামারিদের লাভের অংশ থেকে কেটে। কোম্পানির এমন মহাজনি শর্তের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার খামারি। অনেক খামারি দেনা মাথায় ফেরার। রাজশাহীর পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, উপজেলার দুটি ইউনিয়নে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির ৫০৫টি খামার ছিল। গত এক বছরে বন্ধ হয়েছে ৪১০টি। খড়খড়ি বাজারে মুরগির দোকানদার মো. রাসেল বলেন, ‘আগে এসব এলাকায় খামারে হাজার হাজার মুরগি ছিল। এখন গোটা এলাকা ঘুরেও কোনো খামারে একটা ব্রয়লার মুরগিও পাবেন না। অনেক খামারি এলাকায়ই নাই। ডিলারের দেনায় পড়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’ ফিড ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এক খামারির কাছে মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম হিসেবে ১৫ লাখ টাকা পাব। চার মাস আগে সে পালিয়েছে। বাকি নেওয়ার সময় তার স্বাক্ষরিত চেক ও স্ট্যাম্প নিয়েছিলাম। এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, দেশে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক খামার আছে পাঁচ হাজারের মতো। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু ধুঁকে ধুঁকে চলছে আর সব বন্ধ। সুমন হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে প্রান্তিক খামারিদের কোনো মুরগি নাই; যা আছে সব করপোরেট কোম্পানিগুলোর। তাই তাঁরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে মুরগি পেতে চাইলে প্রান্তিক খামারিদের প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁদের উৎপাদনে ফেরাতে হবে।’
চট্টগ্রামে ছয় মাসে ৩০ হাজার খামার বন্ধ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে মোট পোলট্রি খামার ১ লাখ ৯৫ হাজার। এর মধ্যে ৮৬ হাজার ৯২৭টি নিবন্ধিত। চট্টগ্রামেই আছে ৫০ হাজারের বেশি খামার। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, বড় খামারিদের দাপটে গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে অন্তত ৩০ হাজার খামার বন্ধ হয়েছে। একই চিত্র কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মাদারীপুর, কুমিল্লা, রংপুর, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ফেনী, শ্রীপুর, দিনাজপুর, ভোলা, নাটোর, মাগুরা, যশোর, নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। খামারিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে চুক্তিভিত্তিক খামারি মাত্র শতকরা ২০-২২ ভাগ। তারা লালন-পালনের জন্য খরচ পায়। খাবার বা ওষুধ নিয়ে তাদের আলাদা কোনো কথা থাকার নয়। আর স্বতন্ত্র খামারিরা তো ন্যায্যমূল্যেই মুরগি বিক্রি করতে পারছে। বেঁধে দেওয়া যে দাম আছে, সেটায় তাঁরা কেজিপ্রতি ২২০ টাকা পায়। এতে সমস্যাটা কী বুঝলাম না।’
চুক্তিতে না গেলে দাম বেশি রাখা হয়
স্বতন্ত্র খামারিদের অভিযোগ, চুক্তিতে না গেলে তাঁদের কাছে খাবার, বাচ্চা বা ওষুধ বিক্রি করা হয় না। বিক্রি করলেও দাম রাখা হয় বেশি। এ বিষয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বতন্ত্র খামারিরা বেশি দামে সব কিনছে; কারণ ফিড, ওষুধ বা বাচ্চার দাম দেশি।’
কয়েকজন খামারি জানান, গত শুক্রবার পর্যন্ত তাঁরা প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন ২০০-২১০ টাকায়। এই দামে কিনে এনে ঢাকার কয়েকটি আড়তে খুচরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ২৩৫-২৪০ টাকায়। এরপর সাধারণ ক্রেতারা কিনছেন ২৬০-২৭০ টাকায়। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০-৩০০ টাকা দরে।
অনিয়মের চিত্র সরকারি প্রতিবেদনেই
ব্রয়লার মাংস বিক্রিতে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরল জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সই করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আটটি সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যতালিকা টানানো বাধ্যতামূলক থাকলেও তা করা হচ্ছে না; পাইকারি পর্যায়ে পাকা রসিদ বা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করা হয় না; ক্রেতাকে পাকা রসিদ দেওয়া হয় না; দোকানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ; ওজনে কম দেওয়া হয় এবং পাইকারি ও খুচরা দামে বিস্তর ব্যবধান।
গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ
অধিদপ্তরের সুপারিশে বলা হয়েছে, ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কোনো অনিয়ম কিংবা মনোপলি (একচেটিয়া) হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ করা যেতে পারে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী যেন অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। যেসব বাজারে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করা হবে না, সেসব বাজার কমিটি বিলুপ্ত করারও সুপারিশ করেছে অধিদপ্তর।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে