শ্রমিকসংকট, মেঘ দেখলেই ভয়

সিয়াম সাহারিয়া, নওগাঁ
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২২, ০৬: ২৫
আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ১১: ১১

নওগাঁয় অতিরিক্ত মজুরি এবং শ্রমিকসংকটের কারণে বোরো ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা। বৈরী আবহাওয়ায় নুইয়ে পড়েছে অধিকাংশ খেতের ধান। অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলেই  তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এই সংকটের মধ্যে দফায় দফায় বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, মান্দার ঠাকুরমান্দা, আন্দাসুরা, সদরের বিল মনসুর, হাঁসাইগাড়ী, সরইল, দিঘলীর বিলসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে যেসব কৃষক ধান আবাদ করেছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ সামান্য বৃষ্টিতেই বিলের ধান ডুবে যায়। ঈদের দিন থেকে প্রায় প্রতি দিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অনেক জমিতে পানি জমি গেছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি, মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম, চান্দাশ, নিয়ামতপুরের চন্দননগর, মান্দার ভালাইনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানো হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন।

পত্নীতলার কৃষক মাজেদ হোসেন বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ঈদের আগে থেকে ধান কাটতে চাচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। পাকা ধান ঝরে পড়ছে।’

নিয়ামতপুরের ছাতড়া গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো এবার বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসেনি। এদিকে খেতের ধান ডুবে যেতে বসেছে। ধান নিয়ে এবার মহাবিপাকে পড়েছি।’

এদিকে মজুরি হিসেবে অন্যান্য বছর শ্রমিকদের মোট ধানের ৫ থেকে ৬ শতাংশ দিলেই হতো। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা বাবদ খরচ পড়ত আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু এবার ধানগাছ নুইয়ে পড়ায় বেশি শ্রম লাগায় শ্রমিকেরা মোট ধানের ৮ থেকে ১০ শতাংশ দাবি করছেন। কৃষকেরা তাঁদের দাবি অনুযায়ী ধান কাটতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। এতে এ বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

সদর উপজেলার কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, সেচ, সার ও পরিচর্চা বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। নুইয়ে পড়ায় খেতের ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। এখন শ্রমিক খরচ পড়ছে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫ হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার কৃষকের অনেকের ক্ষতি হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে যে সমস্যাই হোক না কেন কৃষকেরা তো আর মাঠে ধান ফেলে রাখবেন না। যেভাবেই হোক ধান কাটা ও মাড়াই হবে। ইতিমধ্যে অনেকেই কাটা ও মাড়াই শেষ করেছেন।’

জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হোসেন জানান, শ্রমিক সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যতে হারভেস্টর মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত