‘ঠাকুমার চিঠি’

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৫২

বেতার থেকে লীলা মজুমদারকে অনুরোধ করা হলো, ধারাবাহিকভাবে সপ্তাহে একটি করে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান করতে হবে। ধারাবাহিকের স্থায়িত্ব হবে ৯ মিনিট। প্রচারিত হবে দুপুরে নারী মহলে। অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু হলো, মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘরের ১১-১২ বছর বয়সী একটি মেয়ের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়, তা। দুপুরে শ্রোতাদের সামনে ৯ মিনিট বক্তৃতা করার প্রস্তাব পেয়ে খুশিই হলেন লীলা মজুমদার।

কয়েকটি পর্ব প্রচারিত হওয়ার পরই বোঝা গেল, অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা আছে। তখন কয়েকজন প্রকাশক তা ছাপার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু বেতারের চুক্তিপত্রে লেখা ছিল, বেতারের অনুমতি ছাড়া এটি ছাপা যাবে না। বেতারের সহানুভূতিশীল কর্মীরা বললেন, ‘এটা একটা ফর্মালিটি। এসব দিয়ে বেতার কী করবে?’ কলকাতার স্টেশন ডিরেক্টরের প্রযত্নে ছাপার অনুমতির জন্য চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হলো দিল্লির হেড অফিসে। সেই চিঠির আর উত্তর আসে না। প্রকাশক তাগাদা দেন, কিন্তু দিল্লি থেকে কিছু না জানালে তো বই বের করা হবে বেআইনি!

দিল্লিতে স্বয়ং ডিরেক্টর জেনারেলের চায়ের আসরে লীলা মজুমদার পেলেন বেতারে প্রযোজক হিসেবে চাকরির প্রস্তাব। কিন্তু বইয়ের কী হবে? খুঁজতে গিয়ে দেখেন যাঁর দায়িত্ব ছিল ফাইলটি দেখার, তিনি সযত্নে চিঠিটি ফাইলে রেখে বিদেশে চলে গেছেন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে জানা গেল, পাণ্ডুলিপিটি যেহেতু গল্প বা উপন্যাস নয়, সেহেতু এর মালিক আকাশবাণী, লেখক নন। তাই পাণ্ডুলিপি নিলামে উঠবে এবং যে প্রকাশক সবচেয়ে বেশি হারে রয়্যালটি দেবে, তাকেই ছাপতে দিতে হবে। তাজ্জব ব্যাপার!

এবার লীলা মজুমদার শরণাপন্ন হলেন বিমল চক্রবর্তীর। তিনি খুবই বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘কলম আছে? যেভাবে বলছি, সেভাবে লিখুন।’ এরপর লেখা হলো দরখাস্ত: পাঁচ বছর আগে পাণ্ডুলিপির জন্য দরখাস্ত করার পর আমার মত বদলেছে। আমি ওই পাণ্ডুলিপি ছাপতে আর আগ্রহী নই।’

তারপর বিমল চক্রবর্তী বললেন, ‘এবার কষ্ট করে টেক্সট একটু বদলে, নাম পরিবর্তন করে ছেপে ফেলুন।’

সূত্র: লীলা মজুমদার, পাকদণ্ডী, পৃষ্ঠা ৩৫৫-৩৫৭ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত