ফলি মাছের কোপ্তা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯: ০৬

বিপদে পড়লেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জেলে তাঁদের জন্য যে বাবুর্চি রান্না করতেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে রান্না করবে কে? বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রান্নাবান্নার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না, তবু বাবুর্চির কাছাকাছি থেকে একটা পাকপ্রণালি আবিষ্কার করেছিলেন। এক মেট একটা মুরগি নিয়ে এসেছিল, সেটা ডিম দেওয়া শুরু করেছে। তাতে খুব খুশি হলেন বঙ্গবন্ধু। বললেন, ‘খুব ভালো, রেখে দাও। মুরগিকে বাচ্চা দেওয়াব।’

এর একটা কারণ আছে। বঙ্গবন্ধুর জন্য যে ডিম 
বরাদ্দ ছিল, তা বেশির ভাগ সময় পচা হতো। কীভাবে 
যেন সরবরাহকারীরা জেল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে 
ফেলত। ঘুষের কারবার যে এখানেও চলে, তার প্রমাণ তো এই ঘটনাই।

২৬ নম্বর সেলে থাকতেন নিরাপত্তাবন্দীরা। সেই যে ১৯৫৮ সাল থেকে নিরাপত্তা রক্ষার নামে যাঁদের বন্দী করা হয়েছে, ১৯৬৬ সালের সেই সময় পর্যন্ত তাঁরা জেলখানায় ছিলেন। তাঁরা যে বাগান করেছেন, সেই বাগানে কুমড়ার ডগা, কাঁকরোল, ঝিঙে হয়েছে। সেগুলোই তাঁরা পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। তাঁরা যে শেখ মুজিবের কথা মনে রেখেছেন, সে কথা ভেবেই কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল বঙ্গবন্ধুর মন।

এ সময় একদিন ফলি মাছ রান্না করতে হবে। ফলি মাছের কোপ্তা হয় ভালো। বাবুর্চিও জানে না কী করে ফলি মাছের কোপ্তা তৈরি করতে হয়। বাবুর্চির সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেদের মতো করেই ফলি মাছের কোপ্তা তৈরি করলেন তাঁরা। কিন্তু খেতে গিয়ে বুঝতে পারলেন, এটা আর যা-ই হোক, কোপ্তা হয়নি। কী আর করা! চুপ করে খেয়ে নিতে হলো। আর অন্যদের বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাবারা, বাড়িতে যে রকম খাই, তার ধারেকাছে দিয়েও যায় নাই। যা হোক, খেয়ে ফেলো, ফলি মাছ তো!’

নিজে বাবুর্চি হয়ে যা বানালেন, ভাগ্যিস, বাইরের লোকে তা খায়নি, খেলে সেই কোপ্তা তারা বঙ্গবন্ধুর মাথাতেই ঢালত! এই কথা ভেবে হাসলেন তিনি। 

সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১৩১-১৩২  

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত