অর্ণব সান্যাল
বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?
সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাংলায় প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রবাদটি নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছে এখন। শিরোনাম দেখেই এটি হওয়ার কথা। আর এ দেশে তো আরও বেশি। কারণ, এখানে নন্দ ঘোষের সংখ্যা অনেক, কোটি কোটি। আর দোষ যাঁরা চাপান নন্দ ঘোষদের ঘাড়ে, তাঁরা ভারহীন থাকেন সর্বদাই। কে না জানে, নিজে কিছু না করে কাজ বা দায়িত্ব বা দায়—এসব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরামের কাজ দুনিয়ায় আর নেই!
বাংলাদেশে এই অন্যেরা হচ্ছেন ‘সাধারণ জনগণ’। তাঁরাই এ যুগের নন্দ ঘোষ। নির্বাচনী সহিংসতা থেকে শুরু করে আলু-পটোলের দাম—সবকিছুতেই এই নন্দ ঘোষদের ঘাড়কেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার চালানোর কাজে নিয়োজিত দায়িত্বরতরা। তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে দেন, নন্দ ঘোষদের কারণেই যত বিপত্তি! অথচ এ দেশটা চলে নন্দদের ধাক্কাতেই। কিন্তু দিন শেষে নিরানন্দে থাকাটাই যেন নন্দদের একমাত্র ভবিতব্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে ঘাড় পেতে নিতে হয় দোষের দায়।
এই যেমন চালের বাজার। দেশের পুরো বাজারই যদিও অস্থির, তবে চালের বাজারের চঞ্চলতা মানুষের পেটে আঘাত করছে সরাসরি। আজকের পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, বোরো ধানের ভরা মৌসুম এখন। কোনো কোনো জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে চাল আসছে কম। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতির পরিণামে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালভেদে এক লাফে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কিছুদিনে; বিশেষ করে চাল উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।
সুতরাং, চালের দামের ইদানীংকালের চঞ্চলতা প্রমাণিত। আর ঠিক সেই সময়েই আমরা শুনতে পেলাম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মন্ত্রীরা বলছেন, চালের আকাল নেই। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি সম্প্রতি এ-ও বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ।’ আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা কেজি চাল শুধু প্যাকেট করে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘...একই চাল খোলাবাজারে ক্রেতা কম দামে কিনতে পারেন। নিশ্চয়ই তাঁরা কাস্টমার পাচ্ছেন বলেই বিক্রি করতে পারছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁরা আজকে প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। না হলে একই চাল বাজারে কম দামেও পাওয়া যাচ্ছে।’
কথাগুলোয় একটু কী অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? মনে কি হচ্ছে না যে, চিকন চাল খাওয়াটাই কাল! চালের স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নানা কথা শুনতে পাই। জানুয়ারি মাসে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে সরু চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রিকশাচালকেরাও সরু চাল খেতে চায়। অনেক করপোরেট কোম্পানি বাজার থেকে সরু চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’ অর্থাৎ, চাল কেটে বিক্রি করে মুনাফা করার যে বাণিজ্যনীতি (সু অথবা কু), তার বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল অবহিত। তার প্রতিকারে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মানুষ—সে ধনী হোক বা গরিব, তার সরু চাল খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু বাজারে সেটির ন্যায্য বিনিময়মূল্য বজায় রাখা সরকারের কাজ। এখন সরকারি কার্যালয়গুলো সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে না পেরে বাজার অস্থির হলেই যদি কর্তৃপক্ষীয় সুরে বলতে থাকে, ‘কেন খাও সরু চাল?’—তবে দোষ প্রকারান্তরে ভুক্তভোগীদের ওপরই চাপানো হচ্ছে নাকি?
সরু চাল খাওয়ার দোষের মতো কিছুদিন আগে সয়াবিন তেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোও আমরা মন্ত্রী মহোদয়দের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। তেল বাজার থেকে ন্যাপথলিনের মতো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তার দাম প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই ‘জিম্মি’-প্রক্রিয়া আটকাতে না পেরে এক অর্থে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ে এ দেশে। আর তারপরই বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে নজর দিতে বলেছেন রাইস ব্র্যান ও সরষের দিকে। তিনি বলেছেন, ‘সয়াবিনের চেয়ে রাইস ব্র্যান ভালো। শরীরের জন্যও উপকারী। সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সয়াবিন তেল না খাওয়ার পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। তা এই ‘অপকারী’ বস্তুটি বাজার থেকে একেবারে তুলে দেওয়া কি যায় না? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়! নাকি দাম সাধারণের পকেটের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই এমন ‘নসিহত’ পাওয়া যাচ্ছে? আগে সয়াবিনের এত ‘ক্ষতি’ সম্পর্কে উচ্চমহল থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলেই আসলে প্রশ্নগুলো উঠেছে।
এতেই শেষ নয়। এ তো গেল খাওয়া-দাওয়ার কথা। এর আগে নাগরিকদের ‘প্রাণ’ যাওয়া নিয়েও ঊর্ধ্বতনদের হাত ধুয়ে ফেলার মতো বক্তব্য আমরা পেয়েছিলাম। তাতেও শেষ পর্যন্ত দায় চলে গিয়েছিল সাধারণদের ঘাড়েই। খুব বেশি দিনের আগের ঘটনা সেটি নয়। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মরে যাওয়ার খবর দিয়েছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আহত হয়েছিলেন শত শত। প্রাণহানির পাশাপাশি কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, এসব ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং ‘ভোট খুব ভালো হয়েছে’। আর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পাওয়া যায় প্রাণহানির ঘটনায়। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষে প্রাণহানির ঘটনার দায় বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রার্থী ও সমর্থকেরা দায় নেবেন। তাঁরা কেন এটি করেছেন? প্রার্থী ও সমর্থকদের অতি আবেগী হওয়া উচিত না।’
অর্থাৎ, যাঁরা নির্বাচন আয়োজন করছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই। ইসি সচিবের কথায় সব দোষ নন্দ ঘোষদের। তাঁদের অতি আবেগ বা কম আবেগও এখন কাঠগড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচন সুষ্ঠু বা অহিংস হওয়ার বিষয়টি শুধু আয়োজকদের ওপর নির্ভর করে না। সব পক্ষেরই সমান চেষ্টা এখানে প্রয়োজন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সর্বতোভাবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা বা ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা আয়োজকদের অন্যতম কাজ। সেই কাজের বিচার না করে যদি শুধু তোতা পাখির মতো ‘ভোট খুব ভালো’ হওয়ার একই ক্যাসেট বারবার বাজানো হয়, তবে ফিতায় প্যাঁচ তো লাগবেই। যদিও সময়টা এমন যে নিজের কলসি নিজে বাজানো বা নিজের পিঠ নিজের হাতে চাপড়ে দেওয়াই এখন স্বাভাবিক প্রবণতা।
নির্বাচন অনেক বড় বিষয়। এসবে যেমন ঘাড় পেতে দোষ নিতে হয় নন্দদের, তেমনি দুপুর-রাতে খেতে বসলেও নিরানন্দ হতে হয়। একদিন চালের দাম বাড়ে, তো আরেকদিন মহাকাশে ওঠে তেলের দাম। আলু-পটোলও চোখ রাঙাতে ছাড়ে না। আর সেসব কিনতে গিয়ে জেরবার জনগণ একসময় শোনেন, মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়াকে তেজি রাখার দোষও নাকি তাঁদেরই! শুনতে হয় খোঁটাও।
এহেন পরিস্থিতিতে সত্যি বলতে কি, ভয় ঢুকে গেছে মনে। সেই ভয় থেকেই হয়তো আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে দোষের দায় নেওয়ার। সবকিছুতেই শেষে অনর্থের দোষ যখন ঘাড়ে আসেই, তখন পূর্বপ্রস্তুতি রাখাই ভালো। মনোযাতনার বিষয় হলো, পূর্বপ্রস্তুতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বাশা থাকে। তবে যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াই একমাত্র ভাগ্য, সেখানে নন্দ ঘোষদের মুখ গুঁজে দোষের ভার নেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে