আবু তাহের খান
জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে