রনিলের হাতে কোনো ম্যাজিক নেই

রাশেদ নিজাম, ক্যান্ডি (শ্রীলঙ্কা) থেকে
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২২, ০৬: ২৫
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১০: ২২

কোনো ইশতেহার, নির্বাচনী ওয়াদা কিংবা জনগণের ভোট ছাড়াই সমস্যা-জর্জরিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ২১ জুলাই শপথ নেন তিনি। পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহ। স্কুল খুলে দেওয়া (সপ্তাহে তিন দিনের জন্য), রাজধানীসহ আশপাশে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাসাবাড়িতে রান্নার গ্যাস সরবরাহ শুরু করা ছাড়া তেমন বলার মতো কিছু হয়নি।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে সরকারবিরোধীদের। কিন্তু কমেনি নিত্যপণ্যের দাম এবং মানুষের হতাশা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতিটি তেলের পাম্পে টুকটুক, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। এ দৃশ্য এখন চোখ সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। যাঁর যাঁর লাইনমতো অকটেন, পেট্রল নিচ্ছেন। শ্রীলঙ্কায় দুটি প্রতিষ্ঠান তেল সরবরাহ করে। জাতীয়টির নাম সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপেটকো) অন্যটি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি)। দেশটির প্রতিটি তেলের পাম্পেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। কোথাও সেনাবাহিনী।

যাঁরাই দিন থেকে রাত পর্যন্ত তেলের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁদের মধ্যে ৯০ ভাগের কাছে ভিলেন রাজনীতিকেরা। সবার একই রকম বক্তব্য। আগের নেতাদের মতো একই দশা হবে রনিলেরও। দেশের উন্নতির জন্য কিছু করবেন না শীর্ষপদের ব্যক্তিরা।

গতকাল দুপুরে শ্রীলঙ্কার ম্যাপের কেন্দ্রে অবস্থিত শহর ক্যান্ডিতে ঘুরে দেখা যায় প্রচুর বেড়েছে হাত পাতা মানুষের সংখ্যা। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান ক্যান্ডি। সমুদ্র ছাড়া আর সব আছে এখানে। রাজধানী কলম্বো থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় ঘুরতে যান সবাই। শহরটির মূল আকর্ষণ ক্যান্ডি লেক। এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে সিটি সেন্টার আর নামকরা কুইন্স হোটেল। সবার আগ্রহের জায়গা বুদ্ধের দাঁতের কিছু অংশ থাকা টুথরেলিক টেম্পলও লেকের পাশে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের কোলাহলে মুখর থাকে ওই এলাকা।

সেখানেই কুইন্স হোটেলের সামনের ফুটপাতে খুনসুটি করতে দেখা গেল দুজনকে। মধ্যবয়স্ক এক নারী ও এক শিশু। ক্যান্ডি লেকে মাছের খাবার বিক্রি করছেন। ছোট প্যাকেটে খই এবং পপকর্ণই তাঁর সম্বল। স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস, কেউ যদি লেকে থাকা মাছদের খাবার দেয় তাহলে মঙ্গল হবে। মজার বিষয় হলো, এই লেকের কোনো মাছ কখনো শিকার করা বা তোলা হয় না। সেখানেই মারা যায় সব মাছ।

সেই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখানে কয়েক মাস ধরে বসছেন তিনি। আজ নাতিকে নিয়ে এসেছেন। তাঁর মেয়ে অন্যত্র বসেছে। কেমন করছেন নতুন প্রেসিডেন্ট—এই প্রশ্নে মানেল (৫৪) বললেন, ‘আমি এক বাসায় কাজ করতাম। ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা আমাকে যেতে না করেছে। তাই এখন ফুটপাতে বসেছি। এই জীবন চাই না। যদি তারা (সরকার) পারে আমাদের জন্য কিছু করুক।’

ওই এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে দেখা গেল ভিক্ষা চাইছেন মানুষজনের কাছে। ফুটপাতে হাঁটা অবস্থায় একজনের কাছে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য চাইলে চলতি পথে উত্তর দিলেন, বছরের শুরুতেও এমন ছিল না।

দোকানগুলোতে পণ্যের সংকট কাটেনি এবং শিগগির কাটবে বলে মনে করছেন না নাগরিকেরা। এক লিটার পানি কিংবা কোকাকোলা মুদি দোকানে আসে নির্দিষ্ট দিন পরপর। অন্য পণ্যের দাম সেই যে ৩-৪ গুণ বেড়েছে এখনো তেমনই আছে। জামাকাপড়ের দোকানে কোনো ক্রেতা নেই। বড় হোটেল-রেস্টুরেন্ট অনেকগুলোই বন্ধ। যেসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট চালু আছে, সেগুলো অনলাইন অর্ডার আর চলতি পথের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে।

ক্যান্ডি সিটি হোটেলে কথা হয় ব্যবসায়ী সুনীলের সঙ্গে। তাঁর মতে, ‘শ্রীলঙ্কাকে বাঁচাতে বিশ্বের কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, সবাই মনে হয় সেই অপেক্ষায় আছে।’

নতুন সরকারের এক সপ্তাহ ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে শ্রীলঙ্কার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মো. রাসুল দ্বীন বলেন, রনিলের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে এটা খুবই কম সময়। যদিও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কম সময়ের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় সমাধান করবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব সমস্যার মধ্যে আছে, তা কিন্তু সংসদ সদস্য কিংবা তাঁদের আশপাশের মানুষদের স্পর্শ করে না। মানুষ বর্তমান মন্ত্রিসভার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। তারা ভাবছে, এটা রাজাপক্ষে পরিবারের একটা আইওয়াশ। তবু তারা কী করে, সেটা দেখার অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত