মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ০১ মে ২০২২, ১৫: ১২

রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। তবে শুরুতেই দেখা দিয়েছে শ্রমিক-সংকট। অতিরিক্ত ধান দিয়েও কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়নি। তাই শ্রমিকেরা কাজ শুরু করেননি। ধান পুরোপুরি কাটা শুরু হলে শ্রমিক-সংকট থাকবে না।

রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিছু জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগেই। তবে ফলন কেমন হচ্ছে তা এখনো নিশ্চিত নয় কৃষি বিভাগ। তবে কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, এবার ফলন কম। আর সে কারণেই শ্রমিক-সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিকেরা ধান কাটা বাদ দিয়ে রাজশাহী শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাংলাকান্দর রাস্তার ধারে শুক্রবার বিকেলে কাটা ধান একাই আঁটি বাঁধছিলেন হৃদয় আলী (৩০)। হৃদয় বলেন, তিনি মূলত নলকূপের মিস্ত্রি। এবার নিজের এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নলকূপের কাজ বাদ দিয়ে এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে নিজেরাই ধান কেটেছেন। হৃদয় আরও বলেন, এবার ধানের ফলন কম। সে জন্য শ্রমিকেরা ধান কাটতে চাচ্ছেন না। আগে ছয়-সাতজন শ্রমিক এক বিঘা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে দিলে প্রায় আড়াই মণ ধান দিতে হতো। এবার শ্রমিকেরা সাড়ে চার মণ চাচ্ছেন। তা-ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধানের বদলে টাকা দিলে একজন শ্রমিককে এখন একবেলার জন্যই দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। গত বছর শ্রমিকের এই পারিশ্রমিক কম ছিল।

শ্রমিক না পেয়ে একই এলাকায় নিজের জমিতে একাই ধান কাটছিলেন কৃষক মো. টুকু। তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ের বেশির ভাগ শ্রমিকই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। কয়েক বছর ধরে তাঁরা রাজশাহী শহরে গিয়ে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ফলে গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক-সংকট দেখা দিচ্ছে। কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা দলে দলে এসে রাজশাহীর মাঠে ধান কাটেন। এবার এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা আসেননি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট বাজারে এসে থামল একটি ভটভটি টেম্পো। সেটি থেকে একে একে নামলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১০-১৫ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক। তাঁরা সবাই শহরে গিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করতে। কথা হলো ভটভটি টেম্পোর চালক কাঁকনহাট সেরাপাড়া এলাকার জুয়েল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিয়ে তিনি শহরে যান। কাজ শেষে আবার নিয়ে আসেন। মাঝেমধ্যে তিনিও শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। শ্রমিকদের প্রায় সবার কিস্তি আছে। শহরে কাজে গেলে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়। এতে কিস্তি দেওয়া সহজ হয়। তাই ধান না কেটে তাঁরা শহরে যাচ্ছেন।

বিশরাপাড়া গ্রামের মিকাইল হাঁসদা ও তাঁর স্ত্রী পুলসুরি মুর্মুও জুয়েলের টেম্পো থেকে নামেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের কিস্তি আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শহরে গিয়ে ৩৫০ টাকা করে ৭০০ টাকা পান। এর মধ্যে দুজনের যাওয়া-আসার টেম্পো ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। বাকি ৬০০ টাকা থাকে। এ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিয়েও সংসার ভালোই চলে। তাই তাঁরা ধান কাটেন না। পুলসুরি মুর্মু বলেন, ‘ধান কাটার চেয়ে শহরের কাজের টাকায় পরে ধান কিনে নেব। এতেই বেশি লাভ হবে।’

ধান কাটা বাদ দিয়ে শহরে কাজে যাওয়াতে শ্রমিক-সংকট ইতিমধ্যে টের পাচ্ছেন ধান চাষ করা কৃষকেরা। ‘রাজশাহী ইজ দ্য বেস্ট সিটি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে রাঙ্গা নামের এক ব্যক্তি দুদিন আগে জমির পাকা ধানের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখন ধান কাটার মৌসুম। ধান কাটার জন্য লেবার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আগামী ১ থেকে ২০ মে পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের সব কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এমন শ্রমিক-সংকট নিয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখনই শ্রমিক-সংকট বলা যাবে না। কারণ রাজশাহীর ধান কাটেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা। তাঁরা এখনো আসেননি। এক বিঘা ধান কেটে তো তাঁরা বসে থাকবেন না। সব জমির ধান পাকলে ওই শ্রমিকেরা আসবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত