রুনার ‘পঙ্খিরাজ’ শত তরুণীর অনুপ্রেরণা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১৩: ১৫
Thumbnail image

২০১৫ সালের ডিসেম্বর। মাত্র পাঁচ মাস আগেই মা হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত খতিজা বেগম রুনা। অফিস শেষে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা আর যানজট ঠেলে বাড়িতে মায়ের নিকট রেখে আসা ছেলের কাছে ফিরতে বড্ড দেরি হচ্ছিল এই তরুণীর। এতে শিশুটিও কষ্ট পাচ্ছিল। দুধের শিশুর কাছে দ্রুত ফিরতেই বাবার আগ্রহে তখন থেকেই রুনা চালানো শুরু করেন স্কুটি।

সাত বছর আগে নিজের প্রয়োজনে স্কুটি চালানো শুরু করা সেই রুনাই এখন অন্য নারীদের অনুপ্রেরণা। চট্টগ্রাম শহরের অন্তত ৪০০ জন নারী স্কুটি চালানো শিখেছেন তাঁর কাছ থেকে। তাঁদের বেশির ভাগই এখন নিয়মিত অফিসে যাওয়া-আসা করে স্কুটিতে। কেউ কেউ রাইড শেয়ারিং ও খাবার সরবরাহের কাজ করে আয়ও করছেন। আবার কেউবা শেখাচ্ছেন অন্য নারীদের।

যেভাবে শুরু
শাঁ শাঁ করে স্কুটি চালিয়ে রুনাকে অফিসে আসা-যাওয়া করতে দেখে অনেক নারীই উৎসাহিত হন। কেউ কেউ রুনাকে রাস্তায় থামিয়ে বাহবা দিতেন। আবার অনেকেই বলতেন তাঁদের শেখাতে। তবে কর্মব্যস্ততার কারণে শেখানোর কাজটা শুরু করা হয়ে ওঠেনি রুনার। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শুরুতে রুনা নামেরই আরেক তরুণী বেশ আগ্রহ দেখালে আর ‘না’ বলতে পারেননি। ওই তরুণীকে ছুটির দিন শুক্রবার সিআরবির শিরীষতলায় স্কুটি চালানো শেখানো শুরু করেন রুনা। সেটি দেখে আশপাশের অনেক নারী আগ্রহের কথা জানান। এরপর রুনার নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

নারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকায় ২০১৯ সালে রুনা ‘পঙ্খিরাজ’ নামের একটি পেজ খোলেন ফেসবুকে। এখন এই পেজেই জানিয়ে দেওয়া হয় সবকিছু। যেহেতু চাকরি করেন, সে জন্য রুনা ছুটির দুই দিন, শুক্র-শনিবার বেছে নেন নারীদের স্কুটি চালানো শেখাতে। এখন ওই দুই দিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা এবং ৯টা থেকে ১১টা দুই ব্যাচে নারীদের শেখাচ্ছেন স্কুটি। তাঁর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত স্কুটি চালানো শিখেছেন প্রায় ৪০০ নারী। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন এখন নিজেরাই স্কুটি কিনে চালাচ্ছেন।

রুনার ক্লাসে একদিন
এক শুক্রবার সিআরবির শিরীষতলায় গিয়ে দেখা গেছে, নারীদের নিজের স্কুটিতে বসিয়ে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন রুনা। তাঁর ক্লাসে ছিলেন ২৮ নারী। সেই নারীদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক থেকে আইনজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে গৃহিণী।

যাত্রীবাহী গাড়িতে নানা হয়রানি ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে স্কুটি চালানো শিখেছেন অঞ্জনা চৌধুরী নামের এক তরুণী। রাঙ্গুনিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত এই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়তে হতো। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রুনার কাছে স্কুটি চালানো শিখেছি।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রুনার কাছে স্কুটি চালানো শিখে জান্নাতুল ফেরদৌস পুষ্পা নামের এক গৃহিণী নেমে পড়েছেন রাইড শেয়ারিং ও খাবার সরবরাহের কাজে।

অন্য নারীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে তৃপ্তির হাসি খতিজা বেগম রুনার মুখে। তিনি বলেন, ‘একদিন নিজের প্রয়োজনেই স্কুটি নিয়ে সড়কে নেমেছিলাম। এখন আমার কাছ থেকে শিখে শতাধিক নারী স্কুটি চালাচ্ছেন। তাঁদের দীর্ঘক্ষণ গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। হয়রানির মুখে পড়তে হয় না। এখানেই তো আমার সার্থকতা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত