বিভুরঞ্জন সরকার
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনেক চমক উপহার দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদিই হয়তো তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে মোদি-ম্যাজিক বলে যে কথাটি চালু হয়েছিল, সেটা এবার কাজ করেনি। মোদি নিজে জিতেছেন, জিতেছেন তাঁর সব কাজের দোসর হিসেবে পরিচিত অমিত শাহও। কিন্তু চার শ পার বলে যে গালভরা বুলি কপচানো হয়েছিল, তা হয়নি। মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস।
বিজেপি একক দল হিসেবে বেশি আসনে জয় পেলেও সরকার গঠনের জন্য যে ম্যাজিক ফিগার—২৭২ আসন, সেটা পায়নি। মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এবার অন্যের দুয়ারে ধরনা দিতে হবে। বলা হচ্ছে, এবার মোদি হবেন ‘পরনির্ভর’ প্রধানমন্ত্রী। এবারের নির্বাচন মোদির ভাবমূর্তি ম্লান করেছে, আর উজ্জ্বল তারকা হিসেবে সামনে এসেছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। এত দিন মোদি নিজে এবং তাঁর সঙ্গীসাথিরা রাহুলকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করতেন, এবার রাহুলের সামনে বদলা নেওয়ার সুযোগ এসেছে।
ভারতের লোকসভার আসনসংখ্যা ৫৪৩। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন। যেহেতু বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে, সেহেতু এই জোটেরই সরকার গঠনের কথা। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩ আসন। এ ছাড়া অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে পেয়েছেন ১৭টি আসন। তবে দল হিসেবে এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। দলটির দখলে গেছে ২৪২ আসন। এরপর জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে তেলুগু দেশম পার্টি পেয়েছে ১৬ এবং বিহারের নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) পেয়েছে ১২টি আসন।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩৩ আসন। এই ২৩৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। জোট শরিক উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৬, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম পেয়েছে ২২টি আসন। এর বাইরে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন। শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন।
বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক দল আবারও ভারত শাসনের ভার পাক, সেটা ভারতবর্ষের অনেকেই চাননি। এই ‘অনেক’ মানে লাখ, নাকি কোটির ঘরে, তা হিসাব করে কেউ দেখেননি। আবার ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপিই ক্ষমতায় ফিরে আসুক, এটাও অনেকেই চেয়েছেন। এই ‘অনেক’ সংখ্যাটাই যে বেশি, সেটা ভোটের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে। মোদির জনপ্রিয়তা কমেছে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, মিত্রদের সাহায্য ছাড়া গতি নেই—এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের সব গণনা সব সময় নির্ভুল হয় না। মোদির বিজয়রথ থামানোর ক্ষমতা বা তাঁর সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা কারও হয়নি বলে যে প্রচারণা এক দশক ধরে চালানো হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জ করে দাঁড়িয়ে গেছেন রাহুল গান্ধী। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনাই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্ববাদের কথা বলে ভারতের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ঘটানোর পথে হেঁটে ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, ধর্মই বুঝি রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ আসনে বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিং হেরে যাওয়ায় কী মনে হচ্ছে? ওই আসনটিতে জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদ। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ কেন্দ্রের মধ্যেই রামমন্দির অবস্থিত। ২০১৮ সালে ফৈজাবাদ জেলার নতুন নামকরণ করা হয় অযোধ্যা। তবে লোকসভার এই আসনটিকে এখনো ফৈজাবাদ বলা হয়।
লোকসভা নির্বাচনের মাস কয়েক আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ও বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশজুড়ে বড় পর্দায় এই অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছিল। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, রামমন্দির উদ্বোধনের নামে যা হচ্ছে, তা ধর্ম নয়; বরং পুরোটাই রাজনীতি। অবশেষে সেই অযোধ্যাতেই হার স্বীকার করতে হলো বিজেপিকে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপিবিরোধীরা যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্যকে আরও সংহত করতে পারেন, তাহলে এবারই দিল্লির ক্ষমতায় পরিবর্তন না এলেও পরিবর্তন যে অসম্ভব নয়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা বললেই ক্ষমতার রাজনীতি শক্তি ও গতি পাবে বলে যে ধারণা প্রচার করা হচ্ছে, তার সামনে একটি নতুন বার্তা দিচ্ছে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল।
নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের দিকেই যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আলোচনায় এসেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে সরকার গঠনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না।
বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা তথা কিং মেকারের ভূমিকা পালন করবেন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩১ আসন। এই ২৩১ আসনের মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। জোট শরিক উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৬, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম পেয়েছে ২২টি আসন। এর বাইরে শিব সেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন। শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন।
এ অবস্থায়ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পক্ষে জোট সরকার গঠন সম্ভব, যদি বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ও তেলুগু দেশম পার্টিকে জোটটি নিজেদের পক্ষপুটে আনতে পারে। বাস্তবে এই দুটি দলই মূলত ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুটি দলকে ছাড়া বিজেপিও সরকার গঠন করতে পারবে না।
নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপির আসনসংখ্যা ২৮টি। এই দুটি দল বিজেপির এনডিএ জোট থেকে বের হয়ে এলে জোটের আসনসংখ্যা হবে ২৬৭টি, যা সরকার গঠনের চেয়ে মাত্র ৫টি আসন কম। বিপরীতে এই দুটি দল ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলেও তাদের আসন হবে ২৫৯টি। তারপরও আরও ১৩টি আসন বাকি থাকবে সরকার গঠনের জন্য।
এ ক্ষেত্রে বাকি যে দলগুলো বা স্বতন্ত্র (১৭টি) প্রার্থীরা আছেন তাঁরা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলে তাঁদের জন্য সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের আসন হবে ২৭৬টি। তবে এভাবে
জোড়াতালির জোট সরকার গঠনের অতীত অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। নীতীশ কুমার কিংবা চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ জোট ছাড়বেন কিংবা ছাড়বেন না—কোনোটাই জোর দিয়ে বলা যায় না। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠন হলেও এবার তাঁদের শক্ত বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে যদি ধর্মীয় চিন্তা থেকে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিই এবারও নরেন্দ্র মোদির প্রধান কৌশল হয়, তবে তাঁকে পদে পদে হোঁচট খেতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনেক চমক উপহার দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদিই হয়তো তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে মোদি-ম্যাজিক বলে যে কথাটি চালু হয়েছিল, সেটা এবার কাজ করেনি। মোদি নিজে জিতেছেন, জিতেছেন তাঁর সব কাজের দোসর হিসেবে পরিচিত অমিত শাহও। কিন্তু চার শ পার বলে যে গালভরা বুলি কপচানো হয়েছিল, তা হয়নি। মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস।
বিজেপি একক দল হিসেবে বেশি আসনে জয় পেলেও সরকার গঠনের জন্য যে ম্যাজিক ফিগার—২৭২ আসন, সেটা পায়নি। মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এবার অন্যের দুয়ারে ধরনা দিতে হবে। বলা হচ্ছে, এবার মোদি হবেন ‘পরনির্ভর’ প্রধানমন্ত্রী। এবারের নির্বাচন মোদির ভাবমূর্তি ম্লান করেছে, আর উজ্জ্বল তারকা হিসেবে সামনে এসেছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। এত দিন মোদি নিজে এবং তাঁর সঙ্গীসাথিরা রাহুলকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করতেন, এবার রাহুলের সামনে বদলা নেওয়ার সুযোগ এসেছে।
ভারতের লোকসভার আসনসংখ্যা ৫৪৩। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন। যেহেতু বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে, সেহেতু এই জোটেরই সরকার গঠনের কথা। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩ আসন। এ ছাড়া অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে পেয়েছেন ১৭টি আসন। তবে দল হিসেবে এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। দলটির দখলে গেছে ২৪২ আসন। এরপর জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে তেলুগু দেশম পার্টি পেয়েছে ১৬ এবং বিহারের নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) পেয়েছে ১২টি আসন।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩৩ আসন। এই ২৩৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। জোট শরিক উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৬, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম পেয়েছে ২২টি আসন। এর বাইরে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন। শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন।
বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক দল আবারও ভারত শাসনের ভার পাক, সেটা ভারতবর্ষের অনেকেই চাননি। এই ‘অনেক’ মানে লাখ, নাকি কোটির ঘরে, তা হিসাব করে কেউ দেখেননি। আবার ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপিই ক্ষমতায় ফিরে আসুক, এটাও অনেকেই চেয়েছেন। এই ‘অনেক’ সংখ্যাটাই যে বেশি, সেটা ভোটের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে। মোদির জনপ্রিয়তা কমেছে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, মিত্রদের সাহায্য ছাড়া গতি নেই—এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের সব গণনা সব সময় নির্ভুল হয় না। মোদির বিজয়রথ থামানোর ক্ষমতা বা তাঁর সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা কারও হয়নি বলে যে প্রচারণা এক দশক ধরে চালানো হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জ করে দাঁড়িয়ে গেছেন রাহুল গান্ধী। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনাই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্ববাদের কথা বলে ভারতের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ঘটানোর পথে হেঁটে ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, ধর্মই বুঝি রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ আসনে বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিং হেরে যাওয়ায় কী মনে হচ্ছে? ওই আসনটিতে জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদ। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ কেন্দ্রের মধ্যেই রামমন্দির অবস্থিত। ২০১৮ সালে ফৈজাবাদ জেলার নতুন নামকরণ করা হয় অযোধ্যা। তবে লোকসভার এই আসনটিকে এখনো ফৈজাবাদ বলা হয়।
লোকসভা নির্বাচনের মাস কয়েক আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ও বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশজুড়ে বড় পর্দায় এই অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছিল। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, রামমন্দির উদ্বোধনের নামে যা হচ্ছে, তা ধর্ম নয়; বরং পুরোটাই রাজনীতি। অবশেষে সেই অযোধ্যাতেই হার স্বীকার করতে হলো বিজেপিকে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপিবিরোধীরা যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্যকে আরও সংহত করতে পারেন, তাহলে এবারই দিল্লির ক্ষমতায় পরিবর্তন না এলেও পরিবর্তন যে অসম্ভব নয়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা বললেই ক্ষমতার রাজনীতি শক্তি ও গতি পাবে বলে যে ধারণা প্রচার করা হচ্ছে, তার সামনে একটি নতুন বার্তা দিচ্ছে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল।
নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের দিকেই যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আলোচনায় এসেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে সরকার গঠনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না।
বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা তথা কিং মেকারের ভূমিকা পালন করবেন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩১ আসন। এই ২৩১ আসনের মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। জোট শরিক উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৬, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম পেয়েছে ২২টি আসন। এর বাইরে শিব সেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন। শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন।
এ অবস্থায়ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পক্ষে জোট সরকার গঠন সম্ভব, যদি বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ও তেলুগু দেশম পার্টিকে জোটটি নিজেদের পক্ষপুটে আনতে পারে। বাস্তবে এই দুটি দলই মূলত ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুটি দলকে ছাড়া বিজেপিও সরকার গঠন করতে পারবে না।
নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপির আসনসংখ্যা ২৮টি। এই দুটি দল বিজেপির এনডিএ জোট থেকে বের হয়ে এলে জোটের আসনসংখ্যা হবে ২৬৭টি, যা সরকার গঠনের চেয়ে মাত্র ৫টি আসন কম। বিপরীতে এই দুটি দল ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলেও তাদের আসন হবে ২৫৯টি। তারপরও আরও ১৩টি আসন বাকি থাকবে সরকার গঠনের জন্য।
এ ক্ষেত্রে বাকি যে দলগুলো বা স্বতন্ত্র (১৭টি) প্রার্থীরা আছেন তাঁরা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলে তাঁদের জন্য সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের আসন হবে ২৭৬টি। তবে এভাবে
জোড়াতালির জোট সরকার গঠনের অতীত অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। নীতীশ কুমার কিংবা চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ জোট ছাড়বেন কিংবা ছাড়বেন না—কোনোটাই জোর দিয়ে বলা যায় না। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠন হলেও এবার তাঁদের শক্ত বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে যদি ধর্মীয় চিন্তা থেকে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিই এবারও নরেন্দ্র মোদির প্রধান কৌশল হয়, তবে তাঁকে পদে পদে হোঁচট খেতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে