আব্দুর রাজ্জাক
দুর্নীতি মহামারিতে পরিণত হয়েছে, একেবারে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে সব জায়গায়, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির ছোঁয়া পড়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা তেমন একটা এখনো দেখা যাচ্ছে না। যে দু-চারটা ঘটনা সমসাময়িক সময়ে লোকসমক্ষে এসেছে, আসল ঘটনার তুলনায় এটা বিন্দুমাত্র।
আমাদের প্রথমেই স্বীকার করে নিতে হবে, যেসব মানুষের হাতে ক্ষমতা আছে, অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশন, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্তৃপক্ষ চলে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষমতাবান ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, কিছু লোক দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারে। একইভাবে রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, সমাজের উঁচুপর্যায়ের লোকজন, যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ লোক দুর্নীতিপরায়ণ; অল্পসংখ্যক দুর্নীতিবহির্ভূত।
এককথায় বলতে হবে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত আর অল্পসংখ্যক লোক দুর্নীতিমুক্ত। আমরা সচরাচর বলি, সমাজের কিছু লোক দুর্নীতিপরায়ণ, অন্য সবাই ভালো। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় এ কথা সত্যি, কিন্তু ক্ষমতাবানদের মধ্যে তুলনা করলে এ কথা সত্যি নয়। এটা স্বীকার করে নিয়েই সামনে আগাতে হবে, কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে, তাহলেই দুর্নীতি বন্ধ হবে।
একটা জিনিস আপনারা লক্ষ করছেন, বর্তমানে বাজারে নতুন টাকা, আধা নতুন টাকা নেই বললেই চলে। কালো, ময়লা, পচা টাকার নোটে বাজার সয়লাব। এর অর্থ দাঁড়ায়, নতুন টাকা, নতুনের কাছাকাছি টাকা দুর্নীতিবাজেরা ঘরের সিন্দুকে রেখে দিয়েছে। বাজারে টাকার এই চেহারা দেখে বোঝা যায়, দুর্নীতি কত গভীরে। এ রকম ছেঁড়া, পচা, ময়লা টাকা দেখে দুর্নীতির আধিক্য বোঝা যায়।
ব্যাংকে তারল্যসংকট। এখানে সব গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেলিফোন পাবেন—তাঁদের ব্যাংকের মুনাফার হারসহ তাঁদের সেবাগুলোর বর্ণনা ও তাঁদের ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য অনুরোধ। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, দুর্নীতিবাজদের হাতে টাকা চলে গেছে। এই টাকা তারা ব্যাংকে রাখতে সাহস পায় না, তাই ব্যাংকে তারল্যসংকট বেড়ে গেছে।
রিজার্ভের ঘাটতির কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজেরা তাদের কালোটাকা দিয়ে, কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করে। আমাদের বিদেশে কর্মরত যেসব মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, তাঁদের কাছ থেকেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বিদেশে পাচার করে অথবা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের কাজে ব্যবহৃত করে বলে ব্যাংকের রিজার্ভে সংকট দেখা দেয়। এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণই দুর্নীতির মধ্যে পড়ে।
এ রকম দুর্নীতির কারণে দেশের টাকা পাচার হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এই প্রক্রিয়া এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তিন-চার বছরে এ রকম টাকা পাচার হওয়ার কারণে রিজার্ভ-সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্নীতি বন্ধ না করা গেলে গভীর সংকটে পড়বে দেশ, আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে, উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে।
ট্যাক্স আহরণের অনুপাত হওয়া উচিত জিডিপির ১৫ শতাংশ। বর্তমানে আহরণ হয় ৭ শতাংশের কিছু বেশি। বাকি অর্থের কিছুটা যায় ট্যাক্স আহরণকারী কর্তৃপক্ষ, রেভিনিউ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে, কিছুটা যায় দালালদের পকেটে, কিছুটা যায় যারা ফাঁকি দেয়, তাদের পকেটে। ট্যাক্স আহরণকারী কর্মকর্তা ও দালালেরা এই ঘুষের টাকা, দুর্নীতির টাকা ব্যয় করে স্থাবর সম্পত্তিতে।
এরা রিসোর্ট করে, বাংলো করে, বাগানবাড়ি করে, বিদেশে ভ্রমণে যায়, বিদেশে চিকিৎসা করায়, এরা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে, তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ায়, সেখানে সম্পদ গড়ে। ব্যবসায়ীরা যে কর ফাঁকি দেয় তা দিয়ে সম্পদ গড়ে দেশে ও বিদেশে। বেশি দামে জমি কিনে গরিবের জমি তারা সব দুর্নীতির টাকায় কিনে সম্পদে পুঞ্জীভূত করে ফেলছে। সাধারণ মেহনতি মানুষের কাছে জমিজমাসহ তেমন আর সম্পদ থাকছে না, সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে কয়েক লাখ রেন্ট সিকারের হাতে।
আমাদের সমাজে নতুন করে জমিদারি প্রথা ফিরে এসেছে। বড় বড় শহরের আশপাশে শহরতলিতে হাজার হাজার রিসোর্ট তৈরি হয়েছে।হাজার হাজার বিঘা জমি দুর্নীতির টাকায় কিনে বিলাসবহুল রিসোর্ট বানিয়েছে। যে অঙ্কের টাকায় জমি কেনে, রেজিস্ট্রি খরচ দেখায় তার চার ভাগের এক ভাগ। বিশাল বিশাল ইমারত—বৈদেশিক আসবাবে তৈরি হয় এই সব রিসোর্ট এবং ইমারত। এখানে চলে অবৈধ ব্যবসা।
যেসব জমিতে ২৫ বছর আগেও কৃষিপণ্য উৎপাদিত হতো, সেখানে এখন রিসোর্ট। বাজারে কৃষিপণ্যের সংকট। এ রকম চলতে থাকলে কৃষিপ্রধান দেশ রিসোর্টপ্রধান দেশে পরিণত হবে।
গ্রামাঞ্চলে গেলে দেখতে পাবেন, সব গ্রাম-ইউনিয়ন-থানার কিছু কিছু এলাকায় প্রচুর বাগানবাড়ি। আসলে জমি নষ্ট করে বাগানবাড়ি তৈরি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের এই সব বাগানবাড়ি। ব্যাংকের টাকা লুট করে গাড়ি, ট্যাক্স ফাঁকির টাকায় গড়ে উঠছে এ রকম বাগানবাড়ি। একেবারেই ফসলের জমি নষ্ট করে প্রতিটি অঞ্চলেই এ রকম কালচার তৈরি হয়েছে। দেখার কেউ নেই।
জমি দখল করে, সম্পত্তি দখল করে, অর্থাৎ দুর্নীতির টাকায় যেভাবে নব্য জমিদারিব্যবস্থা চালু হচ্ছে, এ রকম চলতে থাকলে আমরা এক অভিনব জমিদারি প্রথার মধ্যে পড়ে যাব। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের জমি এই দুর্নীতিবাজদের কালোটাকার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে, ভূমিহীন হচ্ছে মানুষ। চাষাবাদের জমি চলে যাচ্ছে নব্য জমিদারদের আওতায়। সাধারণ মানুষ শুধু বসবাসের সামান্য জমি, অর্থাৎ বসতবাড়ি রেখে বাকি জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও কালোটাকার কাছে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সচেতন জনগণের এখনই একযোগে সোচ্চার হতে হবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের চোখের সামনে যখন দুর্নীতি করতে দেখি, দুর্নীতির স্বরূপ উদ্ঘাটন করার জন্য নিজে সচেষ্ট হব। রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করব লিখিতভাবে—এই সব ক্ষেত্রে, এই সব মন্ত্রণালয়ে, এই সব অধিদপ্তর-পরিদপ্তরে, এই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আমাদের সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। আশা করি রাষ্ট্র ও সরকার দুর্নীতির মূল উৎপাটনে সচেষ্ট হবে।
সমসাময়িক সময়ে সুকুমার বৃত্তিচর্চা হয় না। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বিসিএস গাইড পড়া হয়। সবার লক্ষ্য থাকে কোনোরকম বৈতরণি পার হয়ে দুর্নীতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে শামিল করা। যারা রাজনীতি করে, তারাও প্রতিযোগিতা করে—কে কার চেয়ে বেশি সম্পদ তৈরি করবে। সমাজ গঠন, সমাজের উন্নয়ন—এই সব দিকে বর্তমান সময়ে পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, আমলা, সরকারি কর্মচারী সবারই নজর কমে গেছে। এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। একযোগে সবার বলতে হবে—নিজে দুর্নীতি করব না, অপরকে করতে দেব না, দুর্নীতি সহ্য করব না।
একটা কথা বলে শেষ করব। আমাদের সমাজের সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মুখে মুখে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, কিন্তু মনের মধ্যে পোষণ করে রাখি—সবাই দুর্নীতি বন্ধ করুক, শুধু আমি নিজে একটু দুর্নীতি করব, কেউ এটা দেখতে পাবে না! এটাই আমাদের মানসিকতা, এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
লেখক: প্রকৌশলী
দুর্নীতি মহামারিতে পরিণত হয়েছে, একেবারে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে সব জায়গায়, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির ছোঁয়া পড়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা তেমন একটা এখনো দেখা যাচ্ছে না। যে দু-চারটা ঘটনা সমসাময়িক সময়ে লোকসমক্ষে এসেছে, আসল ঘটনার তুলনায় এটা বিন্দুমাত্র।
আমাদের প্রথমেই স্বীকার করে নিতে হবে, যেসব মানুষের হাতে ক্ষমতা আছে, অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশন, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্তৃপক্ষ চলে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষমতাবান ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, কিছু লোক দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারে। একইভাবে রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, সমাজের উঁচুপর্যায়ের লোকজন, যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ লোক দুর্নীতিপরায়ণ; অল্পসংখ্যক দুর্নীতিবহির্ভূত।
এককথায় বলতে হবে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত আর অল্পসংখ্যক লোক দুর্নীতিমুক্ত। আমরা সচরাচর বলি, সমাজের কিছু লোক দুর্নীতিপরায়ণ, অন্য সবাই ভালো। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় এ কথা সত্যি, কিন্তু ক্ষমতাবানদের মধ্যে তুলনা করলে এ কথা সত্যি নয়। এটা স্বীকার করে নিয়েই সামনে আগাতে হবে, কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে, তাহলেই দুর্নীতি বন্ধ হবে।
একটা জিনিস আপনারা লক্ষ করছেন, বর্তমানে বাজারে নতুন টাকা, আধা নতুন টাকা নেই বললেই চলে। কালো, ময়লা, পচা টাকার নোটে বাজার সয়লাব। এর অর্থ দাঁড়ায়, নতুন টাকা, নতুনের কাছাকাছি টাকা দুর্নীতিবাজেরা ঘরের সিন্দুকে রেখে দিয়েছে। বাজারে টাকার এই চেহারা দেখে বোঝা যায়, দুর্নীতি কত গভীরে। এ রকম ছেঁড়া, পচা, ময়লা টাকা দেখে দুর্নীতির আধিক্য বোঝা যায়।
ব্যাংকে তারল্যসংকট। এখানে সব গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেলিফোন পাবেন—তাঁদের ব্যাংকের মুনাফার হারসহ তাঁদের সেবাগুলোর বর্ণনা ও তাঁদের ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য অনুরোধ। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, দুর্নীতিবাজদের হাতে টাকা চলে গেছে। এই টাকা তারা ব্যাংকে রাখতে সাহস পায় না, তাই ব্যাংকে তারল্যসংকট বেড়ে গেছে।
রিজার্ভের ঘাটতির কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজেরা তাদের কালোটাকা দিয়ে, কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করে। আমাদের বিদেশে কর্মরত যেসব মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, তাঁদের কাছ থেকেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বিদেশে পাচার করে অথবা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের কাজে ব্যবহৃত করে বলে ব্যাংকের রিজার্ভে সংকট দেখা দেয়। এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণই দুর্নীতির মধ্যে পড়ে।
এ রকম দুর্নীতির কারণে দেশের টাকা পাচার হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এই প্রক্রিয়া এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তিন-চার বছরে এ রকম টাকা পাচার হওয়ার কারণে রিজার্ভ-সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্নীতি বন্ধ না করা গেলে গভীর সংকটে পড়বে দেশ, আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে, উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে।
ট্যাক্স আহরণের অনুপাত হওয়া উচিত জিডিপির ১৫ শতাংশ। বর্তমানে আহরণ হয় ৭ শতাংশের কিছু বেশি। বাকি অর্থের কিছুটা যায় ট্যাক্স আহরণকারী কর্তৃপক্ষ, রেভিনিউ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে, কিছুটা যায় দালালদের পকেটে, কিছুটা যায় যারা ফাঁকি দেয়, তাদের পকেটে। ট্যাক্স আহরণকারী কর্মকর্তা ও দালালেরা এই ঘুষের টাকা, দুর্নীতির টাকা ব্যয় করে স্থাবর সম্পত্তিতে।
এরা রিসোর্ট করে, বাংলো করে, বাগানবাড়ি করে, বিদেশে ভ্রমণে যায়, বিদেশে চিকিৎসা করায়, এরা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে, তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ায়, সেখানে সম্পদ গড়ে। ব্যবসায়ীরা যে কর ফাঁকি দেয় তা দিয়ে সম্পদ গড়ে দেশে ও বিদেশে। বেশি দামে জমি কিনে গরিবের জমি তারা সব দুর্নীতির টাকায় কিনে সম্পদে পুঞ্জীভূত করে ফেলছে। সাধারণ মেহনতি মানুষের কাছে জমিজমাসহ তেমন আর সম্পদ থাকছে না, সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে কয়েক লাখ রেন্ট সিকারের হাতে।
আমাদের সমাজে নতুন করে জমিদারি প্রথা ফিরে এসেছে। বড় বড় শহরের আশপাশে শহরতলিতে হাজার হাজার রিসোর্ট তৈরি হয়েছে।হাজার হাজার বিঘা জমি দুর্নীতির টাকায় কিনে বিলাসবহুল রিসোর্ট বানিয়েছে। যে অঙ্কের টাকায় জমি কেনে, রেজিস্ট্রি খরচ দেখায় তার চার ভাগের এক ভাগ। বিশাল বিশাল ইমারত—বৈদেশিক আসবাবে তৈরি হয় এই সব রিসোর্ট এবং ইমারত। এখানে চলে অবৈধ ব্যবসা।
যেসব জমিতে ২৫ বছর আগেও কৃষিপণ্য উৎপাদিত হতো, সেখানে এখন রিসোর্ট। বাজারে কৃষিপণ্যের সংকট। এ রকম চলতে থাকলে কৃষিপ্রধান দেশ রিসোর্টপ্রধান দেশে পরিণত হবে।
গ্রামাঞ্চলে গেলে দেখতে পাবেন, সব গ্রাম-ইউনিয়ন-থানার কিছু কিছু এলাকায় প্রচুর বাগানবাড়ি। আসলে জমি নষ্ট করে বাগানবাড়ি তৈরি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের এই সব বাগানবাড়ি। ব্যাংকের টাকা লুট করে গাড়ি, ট্যাক্স ফাঁকির টাকায় গড়ে উঠছে এ রকম বাগানবাড়ি। একেবারেই ফসলের জমি নষ্ট করে প্রতিটি অঞ্চলেই এ রকম কালচার তৈরি হয়েছে। দেখার কেউ নেই।
জমি দখল করে, সম্পত্তি দখল করে, অর্থাৎ দুর্নীতির টাকায় যেভাবে নব্য জমিদারিব্যবস্থা চালু হচ্ছে, এ রকম চলতে থাকলে আমরা এক অভিনব জমিদারি প্রথার মধ্যে পড়ে যাব। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের জমি এই দুর্নীতিবাজদের কালোটাকার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে, ভূমিহীন হচ্ছে মানুষ। চাষাবাদের জমি চলে যাচ্ছে নব্য জমিদারদের আওতায়। সাধারণ মানুষ শুধু বসবাসের সামান্য জমি, অর্থাৎ বসতবাড়ি রেখে বাকি জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও কালোটাকার কাছে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সচেতন জনগণের এখনই একযোগে সোচ্চার হতে হবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের চোখের সামনে যখন দুর্নীতি করতে দেখি, দুর্নীতির স্বরূপ উদ্ঘাটন করার জন্য নিজে সচেষ্ট হব। রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করব লিখিতভাবে—এই সব ক্ষেত্রে, এই সব মন্ত্রণালয়ে, এই সব অধিদপ্তর-পরিদপ্তরে, এই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আমাদের সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। আশা করি রাষ্ট্র ও সরকার দুর্নীতির মূল উৎপাটনে সচেষ্ট হবে।
সমসাময়িক সময়ে সুকুমার বৃত্তিচর্চা হয় না। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বিসিএস গাইড পড়া হয়। সবার লক্ষ্য থাকে কোনোরকম বৈতরণি পার হয়ে দুর্নীতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে শামিল করা। যারা রাজনীতি করে, তারাও প্রতিযোগিতা করে—কে কার চেয়ে বেশি সম্পদ তৈরি করবে। সমাজ গঠন, সমাজের উন্নয়ন—এই সব দিকে বর্তমান সময়ে পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, আমলা, সরকারি কর্মচারী সবারই নজর কমে গেছে। এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। একযোগে সবার বলতে হবে—নিজে দুর্নীতি করব না, অপরকে করতে দেব না, দুর্নীতি সহ্য করব না।
একটা কথা বলে শেষ করব। আমাদের সমাজের সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মুখে মুখে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, কিন্তু মনের মধ্যে পোষণ করে রাখি—সবাই দুর্নীতি বন্ধ করুক, শুধু আমি নিজে একটু দুর্নীতি করব, কেউ এটা দেখতে পাবে না! এটাই আমাদের মানসিকতা, এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
লেখক: প্রকৌশলী
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে