সুনামগঞ্জে বেড়েছে নদীর পানি, শঙ্কায় বোরোচাষিরা

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২২, ০৭: ০৭
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১৫: ২৭

কয়েক দিনের তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বোরোচাষিদের। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জেলার অভ্যন্তরীণ শাখা নদীগুলোর পানি হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে থেকে বয়ে আসা বৃষ্টির পানিতে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। এ অবস্থায় ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ সপ্তাহের শেষ দিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সিলেটের আবহাওয়াবিদ মো. সাঈদ আহমদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২৮ ও ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলায় রাতে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। এপ্রিল মাসের ১ ও ২ তারিখ থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নদীর পানি বাড়ার বিষয়ে সাঈদ আহমদ বলেন, দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত না থাকলেও মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির পানি সীমান্তবর্তী নদীগুলো দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীর পানি বাড়ছে।

এদিকে হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ১২ উপজেলার মধ্যে এখনো দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, শাল্লা, দিরাই, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। বোরো ধানের মুকুল বের হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকেরা।

জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের কৃষক মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালের অকালবন্যায় হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিবছর আমরা আতঙ্কে থাকি। গত চার বছর ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলেও এই বছর খুব আশঙ্কায় দিন যাচ্ছে।’

কৃষক আশিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এক দিনে ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি আমাদের জন্য অশনিসংকেত।’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বৃষ্টি তো দরকার আছিল ধানের ফলন ভালো হওয়ার জন্য। তবে এখন প্রতি রাতেই বৃষ্টি হইতাছে। ভালোর চাইতে দেখি খারাপই হওয়ার শঙ্কাই বেশি।’

চলতি বছর সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল রক্ষায় ৭২৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধের কাজ চলছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের সমস্যা হবে না বলে জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে কারণে নদীর পানি বাড়ছে বলে জানান সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীর পানি বাড়লেও বাঁধের ক্ষতি হবে না। তবে কিছু কিছু বাঁধ চুইয়ে চুইয়ে পানি যায়, এটা বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে নদীর পানি যেহেতু বাড়ছে, আমরা সার্বক্ষণিক তদারকিতে রেখেছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। কয়েক দিনের খরায় ধানের মুকুল সাদা আকৃতি ধারণ করেছিল। বৃষ্টি হওয়ায় এখন ধানের মুকুল বের হতে শুরু করেছে।

বৃষ্টিপাতে তেমন সমস্যা হবে না বলে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, খরার কারণে কিছু জায়গায় ধানের মুকুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন বৃষ্টি হয়েছে, আর সমস্যা হবে না। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান তিনি।

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা, বৌলাই ও পাঠলাই নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে নদীর পানি বাড়ায় উপজেলার বৃহৎ শনি, মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওরসহ ছোট-বড় ২৪টি হাওর পাড়ের কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। হাওর পাড়ের কৃষকেরা জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে হাওরের ধান ঘরে তোলা অসম্ভব হবে।

উপজেলার শনি হাওর পাড়ের কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে নদীর পানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে আমরা হাওরের ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’

মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক বড়দল গ্রামের কৃষক সাঞ্জব উস্তার জানান, নদীর পানি বাড়ায় মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছে, কৃষকের সোনালি ধান আগামী সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকের ঘরে তোলা শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাওর রক্ষা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. রায়হান কবির বলেন, সব কটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকেরা নিশ্চিন্তেই ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত