ছবির নাম ‘মুক্তি’

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫১

গৌরিপুর রাজপরিবারের কুমার প্রমথেশচন্দ্র বড়ুয়া এলেন চলচ্চিত্র তৈরি করতে, চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে। সংগীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিককে একদিন নতুন ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন। এক নিঃসঙ্গ চরিত্রের মানুষ এই ছবির নায়ক। চিত্রকর তিনি, আপন শিল্পকর্মে বিভোর, মেশার মতো মানুষ খুঁজে পান না।

পঙ্কজ মল্লিক স্ক্রিপ্ট শোনেন আর স্ক্রিপ্টের সঙ্গে মিল আছে, এমন গানের কথা গুনগুন করতে থাকেন। প্রমথেশ বড়ুয়া সেদিকে খেয়াল না করেই পড়ে যান। একটা সিচুয়েশনে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এল ‘ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে...’। আরেকটি দৃশ্যে এল, ‘ঘরে যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে, পারে যারা যাবার গেছে পারে...’।

‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ গানের এই লাইন শোনার পর পঙ্কজের দিকে তাকালেন প্রমথেশ। স্ক্রিপ্ট পড়া বন্ধ করে বললেন, ‘চোখের জল ফেলতে হাসি পায়?’ কেন! চোখের জল ফেলতে আবার হাসি পাবে কী করে? এর মানে কি তুমি বোঝো পঙ্কজ? ‘পুরো গানটা একবার শোনাও তো পঙ্কজ।’

পঙ্কজ মল্লিক পুরো গানটি শোনালেন প্রমথেশকে। বিভোর হয়ে শুনলেন তিনি। পরদিন স্টুডিওতে এসে প্রমথেশ বললেন, “‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে...” গানটি আমি আমার ছবিতে দিতে চাই।’

পঙ্কজ খুশি হয়েও বললেন, ‘এটা তো রবিবাবুর গান নয়, তাঁর কবিতা। আমি নিজে সুর করে গেয়ে থাকি। ওঁর অনুমতি চাইতে হবে।’ 
প্রমথেশ অবিচল। ‘যাও না হে। তুমি তো নাম করেছ। কবিগুরুকে একটু মিনতি করো।’

পঙ্কজ রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে শুধু অনুমতিই পেলেন না, সিনেমার নামটিও পেয়ে গেলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘পঙ্কজ, আমি দেখছি তোমাদের ছবির শুরুতেই দ্বার মুক্ত। তোমাদের ছবির নায়ক যেন কী থেকে মুক্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে?’

পঙ্কজ ফিরে এসে প্রমথেশকে সে কথা বলায় তিনি উৎফুল্ল হয়ে বললেন, ‘আরে পঙ্কজ! স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের মুখ থেকেই আমার ছবির নাম বেরিয়েছে ভাই! মুক্তি! ছবির নাম দেব মুক্তি!’ 

সূত্র: পঙ্কজ মল্লিক, আমার যুগ, আমার গান, পৃষ্ঠা ৮৭-৯০

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত